News update
  • Go live together Friday, we stand united: Prof Yunus urges media      |     
  • Bodies of three Bangladeshis killed in India's Tripura handed over     |     
  • Khaleda, Tarique invited to July Charter signing ceremony     |     
  • Climate adaptation could unlock millions of jobs, growth in BD     |     
  • UN Rights Chief Welcomes Bangladesh's Abuse Prosecutions     |     

সোশ্যাল মিডিয়া: ‘কাকা উঠুন, আপনি ভাইরাল’

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক অপরাধ 2024-07-09, 7:33am

oieuewrw9-cea4073713e2c2ffa11084cb99706a151720488820.jpg




সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছেন বিপিএসসির পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় জড়িত সংস্থাটির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী। তার বেশ কয়েকটি ছবি ও তাকে নিয়ে বানানো ভিডিও রিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

এসব ছবির মধ্যে একটি ছবিতে দেখা গেছে, মাথায় লম্বা টুপি ও মুখভর্তি সাদা-কালো দাড়ি। প্রাইভেটকারের স্টিয়ারিংয়ের ওপর মাথা ঝুঁকিয়ে আছেন আবেদ আলী। তার এই ছবি নিয়ে নেকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে পোস্টও দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে একজন মোহাম্মদ আলম। তিনি লিখেছেন, ‘কাকা উঠুন, আপনি ভাইরাল হয়ে গেছেন।’

আবেদ আলীর আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার গল্প যেন সিনেমাকেও হার মানাবে। তিনি ৮ বছর বয়সে জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমান ঢাকায়। শুরু করেন কুলির কাজ। একসময় ফুটপাতে ঘুমিয়েছেন। কষ্টের পর কষ্ট করেছেন তিনি। এরপর গাড়ি চালানো শিখে চাকরি নেন পিএসসিতে। তারপর জড়িয়ে পড়েন পিএসসির প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে। আর ফিরে তাকাতে হয়নি। অর্জন করেন বিপুল সম্পদ, সঙ্গে ক্ষমতাও। চেয়েছিলেন ডাসার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে। দীর্ঘদিন থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনের জন্য প্রচার-প্রচারণাও চালিয়েছেন তিনি।’

এলাকায় শিল্পপতি হিসেবে পরিচয় দিতেন সৈয়দ আবেদ আলী। স্থানীয়রা জানান, সৈয়দ আবেদ আলী মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান মীরের ছেলে। আব্দুর রহমান মীরের তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে আবেদ আলী মেজ। রহমান মীরের বড় ছেলে জবেদ আলী কৃষিকাজ করেন। ছোট ছেলে সাবেদ আলী এখনও এলাকায় অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের ভাই আবেদ আলী জীবন। এলাকার মানুষের কাছে তিনি পরিচয় দিতেন শিল্পপতি হিসেবে। আবেদ আলীর ছেলে সোহানুর রহমান সিয়ামও ব্যবহার করতেন দামি গাড়ি। আবেদ আলী নিজেও দামি গাড়িতে চড়তেন। অথচ এলাকার কেউ জানতেনই না তিনি গাড়িচালক। তিনি ঢাকায় রিয়েল স্টেটের ব্যবসা করতেন বলে এলাকায় প্রচার ছিল। কয়েক বছর ধরে এলাকায় ব্যাপক দান-খয়রাতও করেন প্রশ্নফাঁস চক্রের এই হোতা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিত্ত-বৈভব ফুলেফেঁপে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আবেদ আলী মীর পদবি পাল্টে নামের আগে সৈয়দ পদবি ব্যবহার শুরু করেন। বাবার উত্থান নিয়ে ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামও সম্প্রতি একটি সমাবেশে বক্তব্য দেন।

বাবার উত্থানের গল্প বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার বাবা একদম ছোট থেকে বড় হয়েছেন। আমার বাবার বয়স যখন ৮ বছর, তখন পেটের দায়ে তিনি ঢাকায় চলে গেছেন। ঢাকায় গিয়ে কুলিগিরি করে ৫০ টাকা রুজি দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। তিনি এখন একটি লিমিটেড কোম্পানির মালিক। তিনি কষ্ট করে বড় হয়েছেন।

সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে উঠে আসে আবেদ আলীর ভয়ঙ্কর তথ্য। প্রায় একযুগ আগে থেকে পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসের চক্রের সঙ্গে জড়িত এই আবেদ আলী। এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

আবেদ আলীর গ্রামের বাড়ি এসে নেমে পড়েন উপজেলা নির্বাচনের প্রচারণায়। রাজনীতির মাঠে-ময়দানে কোটি টাকার গাড়িতে চড়ে গণসংযোগ করেন আবেদ আলী ও তার ছেলে ছাত্রলীগ নেতা সোহানুর রহমান সিয়াম। এলাকায় বাবা ছেলে দু-হাত ভরে দান-খয়রাত করতেন।নিজ গ্রামে কোটি টাকা খরচ করে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বাড়ির পাশে করেছেন মসজিদ। এ ছাড়াও সরকারি জায়গা দখল করে তার গরুর খামার ও মার্কেট নির্মাণাধীন। উপজেলার পান্তাপাড়া ও পূর্ব বোতলা গ্রামে কিনেছেন বিপুল সম্পদ।

স্থানীয়রা জানান, ঢাকায়ও তার একাধিক বাড়ি রয়েছে। পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় রয়েছে তার থ্রি-স্টার মানের হোটেল। সামান্য একজন ড্রাইভার থেকে হঠাৎ করে এমন বিত্ত-বৈভবের মালিক হওয়ায় তার সম্পর্কে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে।

পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলী। কিন্তু এলাকার মানুষ এসব কিছুই জানতেন না। গত কোরবানির ঈদে দামি গাড়িতে চড়ে ১০০ জনের মধ্যে এক কেজি করে মাংস বণ্টন করেন। সেই ভিডিও শেয়ার করেন নিজের ফেসবুকে। আবেদ আলীর ছেলে সিয়াম শুধু একটি গাড়ি নয়, একাধিক দামি গাড়ি ব্যবহার করেন। সবই দামি, ঝকঝকে। পড়েছেন ভারতের শিলংয়ে। দেশের একটি ব্যয়বহুল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি পড়ালেখা করেন। তিনি ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। প্রভাব জাহির করার জন্য বড় বড় নেতা ও আমলাদের সঙ্গে ছবি তুলে বাবা-ছেলে ফেসবুকে বুস্ট করে ব্যাপকভাবে প্রচার করেন। আবেদ আলী নিজেই তার ফেসবুক পেজে একটি হোটেল নির্মাণের তথ্য তুলে ধরেছেন।

গত ১৮ মে এক পোস্টে তিনি লেখেন, আমাদের নতুন হোটেল এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করলাম আজ। হোটেল সান মেরিনা, কুয়াকাটা।

প্রসঙ্গত, রোববার (৭ জুলাই) গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে এ তথ্য জানা গেছে, বিপিএসসির কোনো নিয়োগ পরীক্ষা এলেই প্রশ্নফাঁস করে অর্থ লোপাটে মেতে উঠত গ্রেপ্তার চক্রটি। এসব তথ্য নিশ্চিত করতে দেশের একটি গণমাধ্যম গেল ৫ জুলাই শুক্রবার অনুষ্ঠিত রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলীর নিয়োগ পরীক্ষাটিকে বেছে নেয়। প্রস্তুতি শেষে ছদ্মবেশী প্রার্থীকে তুলে দেয় চক্রের সদস্যদের হাতে। এরপর শুক্রবার (৫ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত যে প্রশ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, হোয়াটসঅ্যাপে তার একটা কপি পাঠানো হয় অন্তত ১ ঘণ্টা আগে। আর অজ্ঞাত স্থানে রেখে চুক্তিবদ্ধ শিক্ষার্থীদের তা পড়ানো হয় আগের রাতেই।

চক্রটির মূল হোতা বিপিএসসির অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম বলেন, উপপরিচালক মো. আবু জাফরের মাধ্যমে ২ কোটি টাকার বিনিময়ে শুক্রবার (৫ জুলাই) অনুষ্ঠিত রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করা হয়। তিনি বড় কর্মকর্তাদের ট্রাঙ্ক থেকে পরীক্ষার আগের দিন আমাকে প্রশ্ন আমাকে সরবরাহ করেন।

তিনি আরও বলেন, আমি এটাও জানি ৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস করা হয়।

রোববার (৮ জুলাই) আলোচনায় আসা সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী ও দুই পরিচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গণমাধ্যমে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

জানা গেছে, গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন পিএসসির উপ-পরিচালক মো. আবু জাফর ও মো. জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবির, অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান ও অফিস সহায়ক (ডিসপাস) সাজেদুল ইসলাম।

এ তালিকায় আরও রয়েছেন- পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী ও তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম। ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী আবু সোলায়মান মো. সোহেল, ব্যবসায়ী সহোদর সাখাওয়াত হোসেন, ব্যবসায়ী মো. জাহিদুল ইসলাম, সাবেক সেনা সদস্য নোমান সিদ্দিকী, অডিটর প্রিয়নাথ রায়, নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী শাহাদাত হোসেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মেডিকেল টেকনিশিয়ান মো. নিয়ামুন হাসান, ঢাকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত মো. মামুনুর রশীদ, লিটন সরকার ও সায়েম হোসেন।

এ ব্যাপারে সিআইডির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাঁড়াশি অভিযান চলছে। যাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া যাবে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা এখন পর্যন্ত ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। আরটিভি