An iron bridge has disappeared in the darkness of night in Kalapara, Patuakhali.
পটুয়াখালী প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বিএনপি'র নেতাকর্মীদের হট কানেকশনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ ভাঙ্গারী চোরাই চক্রের সদস্যরা। বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত স্টিল, তামা, লোহা, স্ক্রাপ ফ্রি স্টাইলে চোরাই পথে বিক্রির পর এবার রাতের আঁধারে গায়েব হয়ে গেছে এলজিইডি'র আয়রন ব্রীজ। এসব চোরাই ভাঙ্গারী মালামাল হাত বদলে বিক্রী হচ্ছে ভাঙ্গারী দোকান গুলোতে। যা ট্রাক যোগে চলে যাচ্ছে বরিশাল, খুলনা, যশোর সহ ঢাকার শ্যামপুর, মেঘনার পাড়, কাঁচপুর এলাকার বড় বড় মহাজনদের কাছে। তবে এনিয়ে আই ওয়াশ মূলক হলেও বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে কলাপাড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। কিন্তু এলজিইডি'র আয়রন ব্রীজ গায়েবের ঘটনায় অদ্যাবধি আইনী পদক্ষেপ নেয়নি কেউ। এলজিইডি ইঞ্জিনিয়ার বলছেন ব্রীজটি নির্মাণ শেষে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে, এটি এখন তাদের সম্পত্তি। আর ইউপি চেয়ারম্যানের বক্তব্য, এ নিয়ে সম্পর্ক নষ্ট করতে চাই না।
সূত্র জানায়, গত দেড় দশক ধরে রাজনৈতিক দলের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রনে চলছে অবৈধ ভাঙ্গারী বানিজ্য। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতাকর্মী জড়িয়ে পড়েছেন ভাঙ্গারী ব্যবসার পার্টনারশিপে। বিদ্যুৎ প্লান্টের অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারীরাও ভাঙ্গারী বানিজ্যে সরাসরি জড়িত থাকার গুঞ্জন রয়েছে। লোহা, টিন, স্টিল, তামা, সোলার প্যানেল, বিদ্যুৎ ট্রান্সমিটার, ব্যাটারী, টিউবওয়েলের হ্যান্ডেল, টিউবওয়েল ভাঙারী চক্রটি পাচার করে আসছে। এভাবে অবৈধ বানিজ্যে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। মোটা অংকের কমিশন পাচ্ছে রাজনৈতিক দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতারা ও প্রশাসন।
সূত্রটি আরও জানায়, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দেড় শতাধিক ছোট বড় ভাঙ্গারী মালামাল ক্রয় বিক্রয়ের দোকান রয়েছে। কিবরিয়া, অপু, মেম্বার, জাকির মুসুল্লি, হালিম গাজী, ওয়াসিম, জালাল, খালেকের মতো ডাক সাইডের ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীদের মালিকানাধীন দোকানে রয়েছে শত শত দাদন দেয়া গাওয়াল (হকার)। যারা নতুন হাঁড়ি পাতিল নিয়ে বাড়ী বাড়ী গিয়ে বিক্রি সহ পুরাতন ভাঙ্গারী মালামাল ক্রয় করেন। পুরাতন ফ্যান কেজি প্রতি ৩০০-৫০০ টাকা, তামা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা প্লাস্টিক ২০ থেকে ২১ টাকা, লোহা ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, কাগজ ১০ থেকে ১৫ টাকা। আর বিদ্যুৎ প্লান্ট সহ মেগা প্রকল্পের মালামাল চোরাই পথে ক্রয় বিক্রয় চলছে রাজনৈতিক কানেকশনে। এসব চোরাই মাল ক্রয়ের পর ট্রাক যোগে চলে যাচ্ছে বড় মহাজনদের কাছে।
এদিকে উপজেলার চম্পাপুর ইউনিয়নের ৪০ মিটার দৈর্ঘ্য, ৩ মিটার প্রস্থ মাছুয়াখালী আয়রন ব্রীজ রাতের অন্ধকারে ঘাতক হামজায় ভরে পাচার করে দিয়েছে সংঘবদ্ধ চোরাই চক্র। অনুমান আড়াই হাজার কেজি লোহার এঙ্গেল, ফিস প্লেট, স্ক্রাপ, স্ক্রু সহ ব্রীজের লোহার মালামাল কেটে হামজায় ভরে নেয়ার সময়ে ১০/১২ জনকে দেখতে পান মাছুয়াখালী গ্রামের বাসিন্দারা। অপরদিকে ধানখালী ইউনিয়নের গিলাতলা চোরাই স্পটে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সীমানা প্রাচীরের সুরঙ্গ কেটে চোরাই মালামাল পাচার হচ্ছে রাত দিন। গিলাতলা স্পট থেকে ভাঙারী ব্যবসায়ীদের গোডাউনে চলে যায় এসকল চোরাই মালামাল। এখানে দুইটি টিনের ঘর তৈরী করে চোরাই মালামাল গোডাউনে সংরক্ষন করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী অপু জানান, গিলাতলা থেকে এক গাড়ী ভাঙ্গারী মাল এনেছি। ধানখালীর লোন্দায় ৫ টি ও নোমোর হাট বাজারে ভাঙ্গারীর অনেক গুলো দোকান খুলে ওপেনে মালামাল বেঁচা কেনা হচ্ছে।
আরেক ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী কিবরিয়া বলেন, আমার বাড়ী গোপালগঞ্জ। আমি চোরাই ব্যবসা করিনা, কাগজপত্র থাকলে মাল কিনি, নতুবা কিনিনা। কিবরিয়া আরও বলেন, এ ব্যবসায় এখন আর লাভ নেই। নেতাদের সঙ্গে নিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে। মেম্বার চলে গেছে। আমিও ভাবছি চলে যাবো।
স্থানীয় বিএনপি'র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, 'গত ১৫ বছর ধরে এ ব্যবসার মূল্য লভ্যাংশ শতকরা ৫ ভাগ হারে নিয়েছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় এমপিরা। তখন তাদের নেতাকর্মীদের আর চান্স ছিল না দেখে জানাজানি হয়নি। এখন আমরা একাধিক নেতাকর্মী এ নিয়ে ঠোকাঠুকি করায় আওয়াজ ছড়িয়ে পড়েছে। তার দাবী মোটা অংকের টাকা ইনভেস্ট করে বৈধ ভাবে ব্যবসা করছেন তারা।'
চম্পাপুর ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল মাষ্টার বলেন, ব্রীজের মালামাল কেটে নিয়ে কারা বিক্রী করে দিয়েছে তা সবাই জানে। এ বিষয়ে আইনী পদক্ষেপ নিয়ে কারও সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে চাই না।
এলজিইডি'র উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাদিক বলেন, 'আয়রন ব্রীজটি অনেক পূর্বে ইউনিয়ন পরিষদকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। আইনী পদক্ষেপ নেয়া এখন তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।'
কলাপাড়া থানার ওসি মো.জুয়েল ইসলাম বলেন, 'ভাঙ্গারীর চোরাই মাল ট্রাক যোগে পাচার করার সময় ইতিপূর্বে অনেক মাল জব্দ করা হয়েছে। মামলা দায়ের করা হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে বিভিন্ন সময়ে আটকও করা হয়েছে। বিদ্যুৎ প্লান্টের মালামাল চুরির ঘটনায়ও মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য কিংবা অভিযোগ পেলে আরও তল্লাশি, চোরাই মালামাল উদ্ধার সহ জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করা হবে।'
কলাপাড়া ইউএনও মো. রবিউল ইসলাম বলেন, 'এলজিইডি'র আয়রন ব্রীজ রাতের আঁধারে চুরি হয়ে যাওয়ার পর এলজিইডি এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে আইনী পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।' - গোফরান পলাশ