News update
  • FAO Warns of ‘Silent Crisis’ as Land Loss Threatens Billions     |     
  • Indices tumble on both bourses amid broad-based sell-off     |     
  • BNP Names 237 Possible Candidates for Polls     |     
  • Bangladeshi leader of disabled people of world Dulal honoured     |     
  • UN Report Warns Inequality Fuels Global Pandemic Vulnerability     |     

রিজার্ভ ৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক অর্থনীতি 2023-03-11, 11:03am

33e59510-bf56-11ed-830a-b3366810e005-1-22b6f81e4737a1e5fd751d000b45516b1678511038.jpg




বাংলাদেশে ক্রমাগতভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমার বিষয়টি ভবিষ্যতে ব্যাপক উদ্বেগের বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন যে, বর্তমানে দেশের অর্থনীতির যে অবস্থা তাতে করে হঠাৎ করেই রিজার্ভ ঘুরে দাঁড়াবে না। ফলে, সামনের মাসগুলিতে রিজার্ভ নিয়ে সংকটে পড়তে পারে সরকার।

অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রিজার্ভ নিয়ে উদ্বেগের কারণ রয়েছে যেহেতু এটি এই মুহূর্তে একটি চলন্ত সূচক এবং এটি স্থির নয়। বরং এটির ক্রমাবনতি হচ্ছে এবং এর বাড়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

তার মতে, আমদানি নিয়ন্ত্রণ করার পরও আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য ঠিক রাখা যাচ্ছে না। আর রেমিটেন্সের প্রবাহও এখনো ঋণাত্মক। এর পাশাপাশি বৈদেশিক সাহায্যের প্রবাহ কম।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলছেন, আগামী ৫-৬ মাসের মধ্যে রিজার্ভ বাড়ার মতো কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ফলে সংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি।

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম বড় দুটি মাধ্যম হলো রেমিটেন্স এবং রপ্তানী আয়। এই দুই ক্ষেত্রে ডলারের প্রবাহ না বাড়লে ভবিষ্যতে সংকটে পড়ার কথা বলছেন অর্থনীতিবিদরা।

রিজার্ভ আসলে কত?

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি মাসে দায় পরিশোধের পর রিজার্ভের পরিমাণ হয়েছে ৩১.১৯ বিলিয়ন ডলার। বলা হচ্ছে যে, গত ছয় বছরের তুলনায় এটি সবচেয়ে কম পরিমাণ রিজার্ভ। জানুয়ারিতেও এর পরিমাণ ছিল ৩২ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের যে হিসাব দিচ্ছে তাতে ফাঁক রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে রিজার্ভের পরিমাণ আরো কম।

অর্থনীতিবিদদের মতে, রিজার্ভ বলতে বোঝায় তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহারযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের পরিমাণ কত সেটা। তাই যে অর্থ তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহারের জন্য পাওয়া যায় না সেটি রিজার্ভের মোট হিসাব থেকে বাদ দেয়ার কথা বলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থা আইএমএফ।

এর মধ্যে রয়েছে রপ্তানী উন্নয়ন তহবিল এবং উন্নয়ন অবকাঠামো খাতে সরকারি বিনিয়োগ।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, রপ্তানী উন্নয়ন তহবিলে ৭ বিলিয়ন বা সাতশ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা রয়েছে।

সে হিসেবে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের পরিমাণ সরকারি হিসেবেই দাঁড়ায় ২৪ বিলিয়নে।

তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন এই পরিমাণ ২০-২২ বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য বলছে যে, আইএমএফ এর সাথে রিজার্ভের একটা উপাদান নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। আর সেটা হচ্ছে ফরেন অ্যাসেট।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, “ডিফারেন্ট অপিনিয়ন(ভিন্ন মতামত) থাকতে পারে, বাট দ্য ফরেন অ্যাসেট ইজ দেয়ার।”

অর্থনীতিবদরা বলছেন, এই পরিমাণ রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের বেশি আমদানি ব্যয় বহন করা সম্ভব নয়। এটি সমস্যার কারণ হবে না যদি বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ ভাল থাকে।

আর তা না হলে রিজার্ভের পরিমাণ না বাড়লে তা নিয়ে সরকার সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আইএমএফ’র শর্ত অনুযায়ী, এ বছরের জুন মাসের শেষে নেট রিজার্ভের পরিমাণ ২৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি দেখাতে হবে। আইএমএফর এর কাছ থেকে নেয়া ঋণের কিস্তি চালু রাখতে হলে এই শর্ত পূরণ করতে হবে।

তিনি বলছেন, রিজার্ভে যে তিন-চার বিলিয়ন ঘাটতি রয়েছে সেটি পূরণ করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ বিক্রি অব্যাহত রাখার নীতিগত জায়গা থেকে সরতে হবে।

রিজার্ভ থেকে ২০২২ সালে ১২.৬১ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করা হয়েছে।

রেমিটেন্সের প্রবাহ কেমন?

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশে এখনো রিজার্ভ বাড়ানো সম্ভব এবং বেশ কিছু উপায় রয়েছে।

বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, রেমিটেন্সের প্রবাহ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ গত দুই বছরে বিশাল সংখ্যক মানুষ বিদেশে শ্রমিক হিসেবে পাড়ি জমিয়েছে। এর মধ্যে ২০২২ সালে প্রায় ১১ লাখ নতুন শ্রমিক বিদেশ গিয়েছে। আর এর আগের বছর গেছে প্রায় ৬ লাখ। গত দুই বছরে বিদেশে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানান তিনি।

তবে রেমিটেন্সের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, গত বছরের সেপ্টেম্বরের পর থেকে রেমিটেন্স আসায় একটা পতন হয়েছে। মি. হোসেন বলেন, যেখানে বাংলাদেশে প্রতিমাসে ২০০ কোটি ডলার করে রেমিটেন্স আসার কথা সেখানে এটি কমে ১৫০-১৬০ কোটি ডলার করে আসছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রেমিটেন্সের প্রবাহ ২.০৩ শতাংশ কমে গিয়েছিল।

আর ২০২১-২২ অর্থবছরে রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে ১৫.১১ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতেও রেমিটেন্স কমেছে ২০ শতাংশ। এ মাসে রেমিটেন্স এসেছে ১৫৬কোটি ডলার। এর আগের মাসে অর্থাৎ জানুয়ারিতে রেমিটেন্স এসেছিল ১৯৬ কোটি ডলার।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক অবশ্য বলেছেন যে, গত বছরের তুলনায় এ বছর রেমিটেন্স বেড়েছে।

চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট রেমিটেন্স এসেছে ১৪.০১ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ১৩.৪৩ বিলিয়ন ডলার।

মি. হক বলেন, “একটা পারর্টিকুলার মান্থ ধরে রেমিটেন্সের ট্রেন্ড দেখানো ঠিক নয়। সেটা আবার ফেব্রুয়ারি মাস, যেটা তিন দিন কম...”

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে না বিষয়টি আসলে তা নয়। বরং তারা বৈধপথে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে না। আর এটা হচ্ছে ডলারের বিনিময় মূল্যে পার্থক্য থাকার কারণে।

দেশে বর্তমানে ডলারের বিনিময়ের সরকারি হার ১০৮ টাকা করে হলেও কার্ব মার্কেটে ডলার ১১৬-১১৭ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

ডলারের বিনিময় হারের এই পার্থক্য রোধ করা গেলে বৈধপথেই আরো অন্তত ৫০ কোটি ডলার রেমিটেন্স আয় আনা সম্ভব বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

রপ্তানী আয় কি বাড়ছে?

বাংলাদেশ রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানী আয় ৭.৮১ শতাংশ বাড়লেও তা এর আগের তিন মাসের তুলনায় কমেছে।

এর আগের তিন মাসে অর্থাৎ জানুয়ারি, ডিসেম্বর ও নভেম্বরে রপ্তানী আয় ৫০০ কোটি ডলারের বেশি হলেও ফেব্রুয়ারিতে এটি কমে ৪৬৩ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।

অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, রপ্তানীর যে হিসাব পাওয়া যাচ্ছে সেটি আসলে জাহাজীকরণের তথ্য। অর্থাৎ রপ্তানীর জন্য এই মূল্যের পণ্য জাহাজে তোলা হয়েছে প্রতি মাসে।

কিন্তু এটার বিপরীতে যে ডলার প্রবাহ হওয়ার কথা সেগুলো আসছে না বলে মনে করেন তিনি।

“ব্যবসায়ীরা বলেন যে, আমাদের যে এক্সপোর্ট করা হয়েছে পরে সেখান থেকে অনেক কাট-ছাট হয়, শর্ট শিপমেন্ট হয়, ডিসকাউন্ট দিতে হয়, বায়াররা বিল পেমেন্ট করতে দেরি করেন ইত্যাদি। কিন্তু এগুলো তো আগেও ছিল। নতুন কোন বিষয় নয়।”

অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রপ্তানীর ক্ষেত্রে যে তথ্যটা দেয়া হয় সেটা আসলে অর্ধসত্য। কারণ রপ্তানীর আয়ের হিসাবে সামগ্রিক রপ্তানীর সংখ্যাটা থাকে। কিন্তু এই রপ্তানীর পেছনে যে আমদানীর ব্যয় আছে সেটি ধরা হয় না।

তার মতে, আমদানির ব্যয় বাড়ার কারণে রপ্তানীর আয় বাড়ছে। কারণ আমদানিকৃত পণ্যের ভিত্তিতেই আমাদের রপ্তানীর মূল পণ্য তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানী হয়। আর তৈরি পোশাক শিল্পের বেশিরভাগ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়।

রপ্তানী ও রেমিটেন্সের আয় বাড়াতে হলে ডলারের বিনিময় হার বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি। তবে বিনিময় হার বাড়লে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়ার আশঙ্কা থেকে সরকার ডলারের বিনিময় হার বাড়াতে আগ্রহী নয় বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি অনুযায়ী, রপ্তানী করা হলে সেই রপ্তানীর মুনাফা ১২০ দিনের মধ্যে অবশ্যই দেশে ফেরত আনতে হয়। তা না হলে সেই এক্সপোর্টার আর কোন এক্সপোর্ট করতে পারে না।

তাই বিনিময় হারের পার্থক্যের কারণে রপ্তানী আয় আসা বন্ধ নেই বলে জানান তিনি।

“আমাদের কাছে যে ধরণের তথ্য আছে তাতে আমরা এ ধরণের কোন প্রবলেম দেখছি না,” বলেন মি. হক। তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।