
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিদেশি মদ আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপের পর বেড়েছে দেশি মদের চাহিদা। এবারও মদ বিক্রিতে সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়েছে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার কেরু অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড। সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে মদ উৎপাদনের কাজ চলছে। এতে কয়েক গুণ বাড়বে উৎপাদন ক্ষমতা।
কেরুর তথ্যমতে, প্রথমবারের মতো প্রায় ৪৩৯ কোটি টাকার মদ বিক্রি করেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৮৫ বছরের পুরোনো প্রতিষ্ঠানটি। যা কোম্পানির ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিক্রির রেকর্ড। মদের উৎপাদন বাড়াতে কেরুর ডিস্টিলারি বিভাগকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে করপোরেশন। সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে মদ উৎপাদনের কাজ চলছে। এতে কয়েক গুণ বাড়বে উৎপাদন ক্ষমতা। কেরুর সফলতা ধরে রাখতে কাঁচামাল আখ উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি লিমিডেট। দেশে বিদেশি মদের আমদানি কমে যাওয়ায় বেড়েছে কেরুর মদের চাহিদা। চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৫৯ লাখ ৬৭ হাজার ৬২০ লিটার মদ উৎপাদন করেছে দেশের অন্যতম ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে ১৬ লাখ ৪২ হাজার ৬১৯ লিটার বিলেতি মদ ও ৩২ লাখ ৮০ হাজার ২২০ লিটার বাংলা মদ উৎপাদন হয়েছে। বেচাবিক্রি হয়েছে ৪৩৮ কোটি ৯১ লাখ ২৯ হাজার ৯৮ টাকা। এটিই কোম্পানির ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিক্রির রেকর্ড। এর মধ্যে শুধু ডিস্টিলারি বিভাগের লাভ দাঁড়িয়েছে ১৫২ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১৩ কোটি টাকা বেশি। এবছর কেরুর জৈব সার উৎপাদন খাতে লাভ হয়েছে ১৪ লাখ টাকার বেশি। আকন্দবাড়িয়া সমন্বিত খামারে লাভ ১৫ লাখ টাকা, বাণিজ্যিক কৃষি খামারে লাভ ২৫ লাখ টাকা ও ডিস্টিলারি বিভাগে লাভ হয়েছে ১৫২ কোটি টাকা। তবে, অন্য বছরগুলোর মতো এবারও লোকসান হয়েছে চিনি বিভাগে। এ বছর চিনি বিভাগে কেরুর লোকসান হয়েছে ৬৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এ অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব খাতে ১৪৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা জমা দিয়েছে কেরু।
কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, চলতি অর্থবছরে ৫৭ লাখ ৭৩ হাজার ১১ প্রুফ লিটার মদ বিক্রি হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ৩ লাখ ২৫ হাজার প্রুফ লিটার বেশি। প্রতি বছর চিনি খাতে লোকসান গুনতে হয় কেরুকে। এবার চিনি বিভাগের ৬৮ কোটি টাকা লোকসান পুষিয়ে কেরুর নিট লাভ হয়েছে ৮০ কোটি টাকা। কেরুর সফলতা ধরে রাখতে প্রধান কাঁচামাল আখের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বিদেশি মদের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করায় দেশে কেরুর মদের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। শুল্ক ফাঁকি রোধে মদ আমদানিতে নজরদারি বাড়ায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে বৈধপথে হ্রাস পায় মদ আমদানি। তাই বিদেশি মদের সংকট দেখা দেয় দেশের অনুমোদিত বারগুলোতে। তারপর থেকে ক্রমেই বৃদ্ধি পায় দেশে উৎপাদিত মদের চাহিদা। সেই চাহিদা পূরণে উৎপাদন বাড়ায় কেরু। এতে কেরুর উৎপাদিত মদ বিক্রি বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে মুনাফার পরিমাণ। মদের পাশাপাশি ডিনেচার স্পিরিট, রেক্টিফাইড স্পিরিট, ভিনেগার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সার, চিনি ও গুড়ের মতো অন্যান্য পণ্যও উৎপাদন করে থাকে কেরু। কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ঢাকা, চট্টগ্রাম ও চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনায় তিনটি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। সারাদেশে কেরুর ১৩টি ওয়্যারহাউস ও তিনটি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। এরইমধ্যে কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় নতুন দুটি বিক্রয়কেন্দ্রের অনুমোদন দিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
কেরুর ডিস্টিলারি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক রাজিবুল হাসান বলেন, বর্তমানে কেরুতে চিনি, ডিস্টিলারি, ফার্মাসিউটিক্যালস, বাণিজ্যিক খামার, আকন্দবাড়িয়া খামার (পরীক্ষামূলক) এবং জৈব সার এই ছয়টি ইউনিট রয়েছে। এরমধ্যে শুধু ডিস্টিলারি ও জৈব সার ইউনিটই লাভজনক। আখের রসের গুড় থেকে অ্যালকোহল ও বিভিন্ন ধরনের স্পিরিট তৈরি করে থাকে কোম্পানিটি। যা চিনি উৎপাদনের উপজাত। চিনি উৎপাদনের জন্য আখের রস আহরণের পর তিনটি উপজাত পাওয়া যায়। এরমধ্যে রয়েছে গুড়, ব্যাগাস ও প্রেস মাড। মদ বা অ্যালকোহল উৎপাদনের প্রধান উপাদান হলো গুড়। গুড়ের সঙ্গে ইস্ট প্রক্রিয়াকরণের পরে তৈরি করা হয় অ্যালকোহল।
তিনি বলেন, কেরুতে রয়েছে ইয়েলো লেবেল মল্টেড হুইস্কি, গোল্ড রিবন জিন, ফাইন ব্র্যান্ডি, চেরি ব্র্যান্ডি, ইম্পেরিয়াল হুইস্কি, অরেঞ্জ কুরাকাও, জারিনা ভদকা, রোসা রাম ও ওল্ড রামের মতো মদের ৯টি ব্র্যান্ড। মদের উৎপাদন বাড়াতে কেরুর ডিস্টিলারি বিভাগকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে করপোরেশন। সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে মদ উৎপাদনের কাজ চলছে। এতে কয়েকগুণ বাড়বে উৎপাদন ক্ষমতা। অন্যান্য বছরে তুলনায় এবার প্রত্যাশার থেকে বেশি লাভ হয়েছে লোকসান গোনা কেরুতে। এ অর্জনে শ্রমিকদের মধ্যে নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে চিনিকলটি। তথ্য সূত্র আরটিভি নিউজ।