News update
  • Guterres Urges Leaders to Act as UNGA Week Begins     |     
  • BNP to go door to door for hearts and votes     |     
  • Chittagong port tariffs increased up to 50 per cent     |     
  • Rising Heat Cost Bangladesh $1.8 Billion in 2024     |     
  • Stocks extend gains; turnover drops in Dhaka, rises in Ctg     |     

শ্বেতপত্র কমিটির কাজ চুরির বর্ণনা দেয়া, চোর ধরা নয়: ড. দেবপ্রিয়

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক অর্থনীতি 2024-12-02, 12:29pm

rewrwerw-1a0e23619a774195c82047d1a2f5a27a1733120965.jpg




শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির কাজ হলো চুরির বর্ণনা দেয়া, চোর ধরা নয় বলে জানিয়েছে কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরতে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

ড. দেবপ্রিয় বলেন,  মোট ১২ জন নামজাদা অর্থনীতিবিদ নিয়ে শ্বেতপত্র কমিটি গঠন করা হয়েছিল। একটি প্রতিনিধিত্বশীল কমিটির মাধ্যমে এই শ্বেতপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে। এই শ্বেতপত্রে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নয়, দুর্নীতির পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেছি। এই কমিটির কাজ চোর ধরা না, চুরির প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা।

কমিটির প্রতিটি সদস্য বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, তিন মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করে  এই শ্বেতপত্র তৈরি করা হয়েছে। এমনকি যতটি সভা হয়েছে সেখানে একটি পয়সা সিটিং অ্যালাউন্স নেয়া হয়নি।

তবে বিদেশি পরামর্শক এনে এই শ্বেতপত্র করা হলে ন্যূনতম ২৫ কোটি টাকা খরচ হতো বলে জানান ড. দেবপ্রিয়। তিনি বলেন, কমিটি এটি দেশের জন্য নিঃস্বার্থ অবদান হিসেবে করেছে, যা দেশের স্বার্থে উদহারণ হয়ে থাকবে।

তিনি বলেন, রিপোর্টটিকে সাবধানতার কারণে এখনো খসড়া হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কিছু পরিসংখ্যান পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে। আগামী ১ মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে এটি ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করা হবে। এই রিপোর্টের গ্রন্থস্বত্ব স্বয়ং বাংলাদেশ সরকার। এটিকে সরকার নিজস্ব দলিল হিসাবে স্বীকার করে নিয়েছে।

প্রথাগত গবেষণা পদ্ধতির বাইরে গিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক আলোচনা এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। দেশি-বিদেশিদের সঙ্গে আলোচনা করে এই প্রতিবেদনের নানা দিক অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, ৯০ দিনের মধ্যে আমরা নিজেরা ১৮ বার সভা করেছি। নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ২২ বার সভা করেছি। আমাদের প্রথম সভা ছিল ছাত্রদের সঙ্গে। তাদের সর্বোচ্চ জোর ছিল মানসম্মত শিক্ষার ওপরে। শ্বেতপত্রের পুরো প্রক্রিয়া না বুঝলে এই দলিলের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। জনমানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বজায় রেখে এটি প্রস্তুত হয়েছে।

কমিটির পর্যবেক্ষণে যে-সব বিষয় উঠে এসেছে তা হলো-

রাজস্ব ফাঁকি ও আর্থিক ক্ষতি

কর ফাঁকি, কর ছাড়ের অপব্যবহার এবং দুর্বলভাবে পরিচালিত সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনা রাষ্ট্রকে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ থেকে বঞ্চিত করেছে, ফলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বছরে গড়ে ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে। যা বিদেশি সাহায্য এবং এফডিআই প্রবাহের সম্মিলিত মানের দ্বিগুণেরও বেশি। তদুপরি, কর ছাড় অর্ধেকে নামিয়ে আনলে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দ্বিগুণ এবং স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ তিনগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব।

সরকারি বিনিয়োগ

বড় আকারের সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতির কারণে গড় ব্যয় ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সময়সীমা পাঁচ বছরের বেশি পেরিয়ে গেছে। গত ১৫ বছরে এডিপি এবং উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে ১৪ থেকে ২৪ বিলিয়ন বা ১ লাখ ৬১ হাজার থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির কারণে নষ্ট হয়েছে। রাজনৈতিক চাঁদাবাজি, ঘুষ এবং ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তৈরি বাজেটের কারণে সম্পদ হারিয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের সময় তহবিলের অপব্যবহার এবং পক্ষপাতদুষ্ট প্রকল্প পরিচালকদের নিয়োগ আরও বেশি সম্পদ সংকট সৃষ্টি করেছে। যার ফলে অবকাঠামো ও সামাজিক বিনিয়োগ থেকে সম্ভাব্য সুফল হ্রাস পেয়েছে।

খাদ্যপণ্যের সরবরাহ চেইন ধ্বংস

গৃহস্থালির উৎপাদন পরিসংখ্যান বিকৃত করা এবং চাহিদা কম দেখানো হয়েছে। বিশেষ করে চাল, ভোজ্য তেল এবং গমের মতো প্রধান পণ্যের ক্ষেত্রে এমন চিত্র দেখা গেছে। যা বাজারকে অস্থিতিশীল করেছে। এলোমেলো ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত ক্রয় নীতিমালা শক্তিশালী ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলোকে সুবিধা দিয়েছে এবং সাধারণ ভোক্তাদের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। নিয়মিত মজুত পর্যবেক্ষণের অভাবে এই সমস্যাগুলোকে আরও জটিল করেছে।

ব্যাংকিং এবং আর্থিক ব্যবস্থা

রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত ঋণদান প্রক্রিয়া ব্যাংকিং খাতের সংকটকে আরও গভীর করেছে। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত আর্থিক মূল্য হিসাব করলে ১৪টি ঢাকা মেট্রো সিস্টেম বা ২৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণের সমান হবে। ধারাবাহিক ঋণ খেলাপি এবং উচ্চ প্রোফাইল জালিয়াতি আর্থিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং উৎপাদনশীল খাত থেকে মূলধন সরিয়ে নিয়েছে।

শ্রম অভিবাসন

গত এক দশকে ১৩ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো ভিসা ক্রয়ের জন্য ব্যয় করেছে। যা ঢাকা এমআরটি-৬ (উত্তরা-মতিঝিল) নির্মাণের খরচের চার গুণ। সিন্ডিকেট এবং শোষণমূলক রিক্রুটমেন্ট কার্যক্রম অভিবাসী শ্রমিকদের ন্যায্য চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে। যার রেমিট্যান্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

সামাজিক সুরক্ষা নেট

সামাজিক সুরক্ষা প্রোগ্রামের মধ্যে তহবিলের অযথা ব্যয় লাখ লাখ মানুষকে বিপন্ন অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। ২০২২ সালে ৭৩ শতাংশ সামাজিক সুরক্ষা সুবিধাভোগী গরিব হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ হয়নি।

পরিবেশ ব্যবস্থাপনা

জলবায়ু অভিযোজন তহবিলের মধ্যে দুর্নীতি পরিবেশগত অবক্ষয়কে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। রাজনৈতিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত জলবায়ু সম্পদের অপব্যবস্থাপনা স্থায়িত্বমূলক উদ্যোগগুলোকে ব্যাহত করেছে এবং জলবায়ু-উদ্ভূত ঝুঁকির বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।