News update
  • Chittagong port tariffs increased up to 50 per cent     |     
  • Rising Heat Cost Bangladesh $1.8 Billion in 2024     |     
  • Stocks extend gains; turnover drops in Dhaka, rises in Ctg     |     
  • IAEA Chief Calls for Renewed Commitment to Non-Proliferation     |     
  • UN Aid Chief Warns Humanitarian Work Faces Collapse     |     

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে যে পাঁচটি ঘটনা আগামীতে ঘটতে পারে

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক কুটনীতি 2022-06-10, 10:01am




 যুদ্ধেরও জোয়ার ভাটা আছে। ইউক্রেনে ভ্লাদিমির পুতিনের সামরিক অভিযানও তার ব্যতিক্রম নয়।

শুরুর দিকে ধারণা করা হয়েছিল রাশিয়া হয়তো খুব দ্রুতই এই যুদ্ধে জয়লাভ করবে, কিন্তু পরে দেখা গেল ইউক্রেনীয়দের প্রতিরোধের মুখে তারা পিছু হটেছে।

তাই রাশিয়ার আক্রমণের বর্তমান মূল লক্ষ্য ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল।

ইতোমধ্যে এই যুদ্ধের ১০০ দিনেরও বেশি অতিবাহিত হয়েছে। পরিস্থিতি এর পরে কোন দিকে যেতে পারে?

এখানে সম্ভাব্য পাঁচটি চিত্র তুলে ধরে হলো- এগুলোর একটি আরেকটির সাথে সাংঘর্ষিক নয়, যুক্তির সীমার ভেতরে থেকেই এসব সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করা হয়েছে।

১. শক্তি-ক্ষয়ের যুদ্ধ

এই যুদ্ধ মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর ধরেও চলতে পারে- যতক্ষণ না রুশ এবং ইউক্রেনীয় বাহিনীর এক পক্ষ আরেক পক্ষকে গুঁড়িয়ে দেয়।

উভয়পক্ষের জয় পরাজয়ের মধ্য দিয়ে যুদ্ধের গতি সামনে ও পেছনে যায়।

কোন পক্ষই হাল ছেড়ে দিতে রাজি নয়।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন মনে করছেন কৌশলগত ধৈর্য ধারণ করার মাধ্যমে তিনি লাভবান হতে পারেন। কারণ দীর্ঘ যুদ্ধের ফলে পশ্চিমা দেশগুলো ক্লান্ত হয়ে পড়বে এবং তারা তাদের নিজেদের অর্থনৈতিক সঙ্কট সামাল দেওয়ার পাশাপাশি চীনের হুমকির ব্যাপারে আরো বেশি মনোযোগী হবে।

তবে পশ্চিমা দেশগুলো দৃঢ়-সঙ্কল্পের পরিচয় দিচ্ছে এবং ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে।

যুদ্ধে অস্থায়ী ফ্রন্ট লাইন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে যখন সশস্ত্র যুদ্ধের অবসান ঘটবে কিন্তু কোনো ধরনের শান্তিচুক্তি কিম্বা রাজনৈতিক সমাধান হবে না।

অর্থাৎ এটি "চিরকালীন যুদ্ধে" পরিণত হতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক একজন জেনারেল এবং সামরিক বিশেষজ্ঞ মিক রায়ান বলেন, "স্বল্প মেয়াদে কোনো একটি পক্ষের কৌশলগত বিজয় কিম্বা প্রতিপক্ষকে পুরোপুরিভাবে পরাজিত করার সম্ভাবনা খুব কম। যুদ্ধরত কোন পক্ষই এমন ক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারেনি যা প্রতিপক্ষকে পুরোপুরি ধরাশায়ী করতে পারে।"

২. প্রেসিডেন্ট পুতিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা

কেমন হবে যদি প্রেসিডেন্ট পুতিন একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়ে বিশ্বকে চমকে দেন? যতটুকু এলাকা তারা অর্জন করে নিয়েছে তা থেকেই তিনি রাশিয়ার "বিজয়" ঘোষণা করতে পারেন।

তিনি দাবি করতে পারেন যে তার "সামরিক অভিযান" সম্পূর্ণ হয়েছে: ডনবাসে রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রক্ষা করা হয়েছে, ক্রাইমিয়া পর্যন্ত একটি স্থল করিডোর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

এখন তিনি বলতে পারেন যে নৈতিকভাবে তাদের অবস্থান ঠিক ছিল এবং যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য তিনি ইউক্রেনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারেন।

"রাশিয়া যে কোনো সময়ে এই চাল ব্যবহার করতে পারে। শান্তির বিনিময়ে ইউক্রেন তাদের ভূখণ্ড ছেড়ে দিয়ে আত্মসমর্পণ করুক- ইউরোপের এধরনের চাপকে যদি রাশিয়া পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করতে চায় সেটাও তারা করতে পারে," বলেন লন্ডনে গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউজের রাশিয়া বিষয়ক গবেষক কিয়ের জাইলস।

এধরনের কথাবার্তা ইতোমধ্যে প্যারিস, বার্লিন এবং রোমে শোনা গেছে: যুদ্ধ প্রলম্বিত করার প্রয়োজন নেই, সারা বিশ্বে যে কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তার অবসান ঘটানোর সময় এসেছে, এখন যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দেওয়া যাক।

যদিও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পূর্ব ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ এই ধারণার বিরোধিতা করে। এসব দেশের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন ইউক্রেন ও আন্তর্জাতিক বিশ্বের স্বার্থের জন্যেই রাশিয়ার এই অভিযান অবশ্যই ব্যর্থ হওয়া প্রয়োজন।

ফলে রাশিয়ার একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা পরিস্থিতি বদলে দিতে পারে কিন্তু এর ফলে যুদ্ধ শেষ হবে না।

৩. যুদ্ধক্ষেত্রে অচলাবস্থা

ইউক্রেন এবং রাশিয়া উভয়েই এই উপসংহারে পৌঁছাতে পারে যে সামরিকভাবে তাদের আর কিছু অর্জন করার নেই এবং এর রাজনৈতিক সমাধানের জন্য তারা আলোচনায় বসতে পারে?

তাদের সেনাবাহিনী ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, লোকবল নেই এবং সামরিক রসদও ফুরিয়ে এসেছে। যে পরিমাণ রক্তক্ষয় আর সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে এর পর আরো যুদ্ধের কোনো অর্থ হয় না। রাশিয়ার সামরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতিও আর বহন করা যাচ্ছে না।

ইউক্রেনীয় জনগণ যুদ্ধের ব্যাপারে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, কোনো একদিন যুদ্ধে জয়ী হবে- এই আশায় তারা আরো প্রাণহানির ঝুঁকি নিতে চায় না।

কিয়েভের নেতৃত্ব যদি পশ্চিমা বিশ্বের অব্যাহত সমর্থনের ওপর আস্থা হারিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় যে এখন আলোচনার সময় এসেছে?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রকাশ্যেই স্বীকার করেছেন আমেরিকার লক্ষ্য হচ্ছে আলোচনার টেবিলে ইউক্রেনের অবস্থানকে যতোটা সম্ভব শক্তিশালী করা।

কিন্তু আগামী বহু মাস ধরেই হয়তো যুদ্ধক্ষেত্রে এরকম অচলাবস্থা তৈরি হবে না এবং এর রাজনৈতিক সমাধানের কথাও শোনা যাবে না। কারণ রাশিয়ার প্রতি ইউক্রেনের আস্থার অভাব রয়েছে।

ফলে হয়তো কোনো শান্তি চুক্তিও হবে না এবং তার কারণে আরো যুদ্ধ চলতেই পারে।

৪. ইউক্রেনের 'বিজয়'

সম্ভাবনার বিপরীতে গিয়ে ইউক্রেন যদি বিজয়ের কাছাকাছি কিছু অর্জন করে ফেলে? ইউক্রেন কি পারবে রুশ সৈন্যরা অভিযান শুরু হওয়ার আগে যেখানে ছিল তাদেরকে সেখানে ফিরে যেতে বাধ্য করতে?

"যুদ্ধে অবশ্যই ইউক্রেন জিতবে," ডাচ টিভিকে একথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

যদি রাশিয়া ডনবাসের সমগ্র এলাকা দখল করতে ব্যর্থ হয় এবং তাদের আরো ক্ষয়ক্ষতি হয় তখন কী হবে?

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার যুদ্ধ করার ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দীর্ঘ পাল্লার রকেটের সাহায্যে পাল্টা আক্রমণ করছে ইউক্রেন। যেসব এলাকায় রাশিয়ার সামরিক রসদ পৌঁছে গিয়েছিল সেসব জায়গা পুনর্দখল করে নিচ্ছে তারা।

ইউক্রেন তাদের সেনাবাহিনীকে রক্ষণাত্মক থেকে আক্রমণাত্মক বাহিনীতে রূপান্তরিত করেছে।

এরকম হলে তার পরিণতি নিয়ে নীতিনির্ধারকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার যৌক্তিক কারণ আছে।

প্রেসিডেন্ট পুতিন যদি পরাজয়ের মুখে পড়েন, তিনি কি এই যুদ্ধ ছড়িয়ে দিতে পারেন, তার কি রাসায়নিক অথবা পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে?

ঐতিহাসিক নিয়াল ফার্গুসন লন্ডনে কিংস কলেজের এক সেমিনারে সম্প্রতি বলেছেন, "প্রেসিডেন্ট পুতিনের কাছে যেহেতু পরমাণু অস্ত্র আছে তাই আমার মনে হয় না যে তিনি সামরিক পরাজয় মেনে নেবেন।"

৫. রাশিয়ার বিজয়

আর রাশিয়ার বিজয়ের সম্ভাবনা?

পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলছেন প্রাথমিকভাবে ধাক্কা খাওয়ার পরেও রাজধানী কিয়েভ এবং ইউক্রেনের বেশিরভাগ অংশ দখল করে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে রাশিয়ার।

একজন কর্মকর্তা বলেছেন, "এসব চরম লক্ষ্য এখনও তাদের রয়ে গেছে।"

ডনবাসে রাশিয়া যে অগ্রগতি ঘটিয়েছে সেটাকে তারা ব্যবহার করতে পারে। তাদের সৈন্যরা এখন অন্যত্র যুদ্ধ করতে পারে। এমনকি আরো একবার তারা কিয়েভেও চেষ্টা চালাতে পারে।

ইউক্রেনীয় বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি অব্যাহত রয়েছে।

প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ইতোমধ্যেই বলেছেন প্রতিদিন তাদের ১০০ সৈন্য মারা যাচ্ছে এবং আরো ৫০০ সৈন্য আহত হচ্ছে।

ইউক্রেনের জনগণও বিভক্ত হয়ে পড়তে পারে, কেউ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চাইবেন, অন্যরা চাইতে পারেন শান্তি।

কোনো কোনো পশ্চিমা দেশ ইউক্রেনকে সমর্থন করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারে।

কিন্তু একইভাবে তারা যদি দেখতে পায় যে রাশিয়া জিতে যাচ্ছে তাহলে তারাও যুদ্ধ ছড়িয়ে দিতে চাইতে পারে।

পশ্চিমা একজন কূটনীতিক আমাকে একান্তে বলেছেন, রাশিয়াকে সতর্ক করার জন্য পশ্চিমা শক্তি প্রশান্ত মহাসাগরে পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে পারে।

এই যুদ্ধের ভবিষ্যৎ এখনও লেখা হয়নি। তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।