মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংএর মধ্যে এক মুখোমুখি বৈঠক সোমবার ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে দুই নেতাই ইউক্রেনের যুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান প্রকাশ করেছেন।
জিটুয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলনের জন্য বালিতে আগত মি. বাইডেন এবং মি শি-র মধ্যে এই বৈঠক তিন ঘন্টা ধরে চলে। সাক্ষাতের শুরুতে দুই নেতা সাংবাদিকদের সামনে হাসিমুখে করমর্দন করেন।
এ বৈঠকের ফলে দুই পরাশক্তির মধ্যে সম্প্রতি শীতল হয়ে পড়া সম্পর্ক অন্তত কিছুটা উষ্ণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে যে মি. বাইডেন এ বৈঠকের সময় মি. শি-কে বলেন, দু দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলবে, কিন্তু তা সংঘাতে পরিণত হতে দেয়া উচিত নয়। মি. শি এ বৈঠকে জো বাইডেনের সাথে একমত হন যে ইউক্রেনের যুদ্ধে পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার কখনোই হওয়া উচিত নয়।
মি. বাইডেন চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোন নতুন ঠাণ্ডা যুদ্ধ শুরু হবার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তিনি ও শি জিনপিং পরস্পরকে বোঝেন এবং বেজিং বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা পাল্টে দিতে চায় না।
বৈঠকের সময় তিনি চীনের শিনজিয়াং ও তিব্বত অঞ্চলে সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাইওয়ানের ব্যাপারে চীন যে "জবরদস্তিমূলক এবং আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ" নিচ্ছে তারও বিরোধিতা করেন মি. বাইডেন।
চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, তারদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক যেন যথাযথভাবে রক্ষিত হয় তা সারা বিশ্ব প্রত্যাশা করে।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, মি. শি সতর্ক করে দিয়েছেন যে তাইওয়ানের অবস্থান চীনের স্বার্থের কেন্দ্রস্থলে - যে দ্বীপটিকে চীন তার নিজের অংশ বলে মনে করে।
আগস্ট মাসে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের পর বেজিং ক্ষিপ্ত হয় এবং চীন-মার্কিন সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকে।
এ বৈঠকে আদৌ কতটা অগ্রগতি হবে?
মি. বাইডেন ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট হবার পর এটিই দুই নেতার প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ। তবে এর আগে তারা পাঁচবার ফোন ও ভিডিও কলে কথা বলেছেন এবং মি. বাইডেন যখন ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখনও তাদের মধ্যে একাধিকবার সাক্ষাৎ হয়েছে।
সেপ্টেম্বর মাসে তাদের মধ্যে শেষবার যখন কথা হয় তখন তারা ইউক্রেন, কোভিড এবং তাইওয়ান ইস্যু নিয়ে কথা বলেছিলেন।
মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি আগস্ট মাসে তাইওয়ান সফর করার পর চীন অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয় এবং প্রেসিডেন্ট শি সেসময় ওয়াশিংটনের সমালোচনা করেছিলেন।
এর পর চীন জলবায়ু এবং কোভিড মহামারী সংক্রান্ত কিছু বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়।
সোমবারের বৈঠকের পর এগুলোর কয়েকটি আবার শুরু করতে পারলে তাকে একটি ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবেই দেখা হবে – সংবাদমাধ্যমকে এমন কথা বলেছেন একজন মার্কিন কর্মকর্তা।
দুই নেতার আলোচনায় বাণিজ্য, উত্তর কোরিয়ার উস্কানিমূলক আচরণ, তাইওয়ান নিয়ে উত্তেজনা এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার চালানো অভিযানের মত প্রসঙ্গগুলো ছিল ।
জো বাইডেন কী বললেন?
সংবাদ মাধ্যমের খববে বলা হয়, চীনা নেতাকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন , যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে কোন সংঘাত বেধে যাওয়া ঠেকানোটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি এ ব্যাপারেও একমত হন যে মুখোমুখি কথা বলার চেয়ে ভালো বিকল্প খুব কমই আছে।
মি. বাইডেন আরো বলেন, দু দেশের মধ্যে যোগাযোগের পথগুলো খোলা রাখার ব্যাপারে তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ – যার ফলে দু দেশ জরুরি বৈশ্বিক ইস্যু – যেমন জলবায়ু পরিবর্তন বা নিরাপত্তাহীনতা – এগুলোর ব্যাপারে একসাথে কাজ করতে পারে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এক সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করবে তা সারা বিশ্বই প্রত্যাশা করে।
চ্যানেল’ এবং ‘কিছু লাল রেখা অতিক্রম না করার নীতি“ থাকতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
একজন বিশেষজ্ঞ বলছেন, তৃতীয় কোন দেশে বড় সম্মেলনের ফাঁকে দুই নেতার এ ধরনের বৈঠক যদিও কিছুটা 'মিডিয়াতে দেখানোর জন্যই' আয়োজন করা হয়, তবে এগুলো সম্পূর্ণ অর্থহীন নয়।
হংকং-এর চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিয়ের ল্যান্ড্রি বলেন, এসব বৈঠকেও কখনো কখনো রাজনৈতিক অচলাবস্থা কেটে গেছে এমন নজির আছে। তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।