News update
  • Indices tumble on both bourses amid broad-based sell-off     |     
  • BNP Names 237 Possible Candidates for Polls     |     
  • Bangladeshi leader of disabled people of world Dulal honoured     |     
  • Dengue: 5 more die, 1,147 hospitalised in 24hrs     |     
  • UN Report Warns Inequality Fuels Global Pandemic Vulnerability     |     

ভারত-কানাডা বিরোধ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো শঙ্কিত কেন

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক কুটনীতি 2023-09-21, 8:41am

b2f1f5a0-5791-11ee-83bb-5f9bffc8f569-0a1b135233a6924814003c00b20efe291695264114.jpg




কানাডার শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার ঘটনায় ভারতের সরকারের দিকে সরাসরি অভিযোগের আঙ্গুল তোলার পরে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এখন চাইছেন যে কানাডার মিত্র দেশগুলি তাদের পাশে দাঁড়াক।

কমনওয়েলথ ছাড়াও কানাডা নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন, অর্থাৎ নেটো এবং জি-৭-এর সদস্য।

মি.ট্রুডো চান এই দুটি গোষ্ঠী ভারতের বিরুদ্ধে আনা তাদের অভিযোগগুলি গুরুত্ব সহকারে দেখুক।

মঙ্গলবার তিনি বলেন, “এটি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের ঘটনা, যা অত্যন্ত গুরুতর।“

তার কথায়, মিত্র-দেশগুলি ও ভারতের কাছে উত্থাপন করার আগে পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করেছেন।

মঙ্গলবার পার্লামেন্ট হিলে জাস্টিন ট্রুডো সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা যা জানতে পেরেছি ঘটনাটি নিয়ে, সেটা প্রথমে আমাদের সহযোগী দেশগুলিকে জানাতে চেয়েছিলাম। আবার আমরা বিষয়টি ভারতের কাছেও গুরুত্ব সহকারে উত্থাপন করেছি।“

ভারত জাস্টিন ট্রুডোর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে যে এটি কানাডায় 'খালিস্তানি সন্ত্রাসীদের' আশ্রয় দেওয়ার ইস্যু থেকে মনোযোগ ঘোরানোর জন্য করা হচ্ছে।

মিত্র দেশগুলিকে আগেই জানিয়েছিল কানাডা

নেটো আর জি-৭ ছাড়া ফাইভ আইজ ইন্টেলিজেন্স অ্যালায়েন্সেরও সদস্য কানাডা । ওই গোষ্ঠীতে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও কানাডা রয়েছে। কানাডার তোলা অভিযোগগুলিকে অন্য চারটি দেশই অত্যন্ত গুরুতর বলে অভিহিত করেছে।

পশ্চিমা একটি সূত্রের বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, ফাইভ আইজ অ্যালায়েন্স হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার নিন্দা জানিয়ে প্রকাশ্যে একটি যৌথ বিবৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানালেও জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের আগে বিষয়টি উত্থাপন করে। ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, জাস্টিন ট্রুডো ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও এই ইস্যুতে কথা বলেছেন।

ফাইভ আইজ ইন্টেলিজেন্স অ্যালায়েন্সের সঙ্গে যুক্ত দেশগুলি একে অপরের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করে।

ফাইভ আইজ-এর অপর সদস্য দেশ অস্ট্রেলিয়া গত কয়েক বছরে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক দৃঢ় করেছে। চীনের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের পর থেকেই ভারতের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে।

আবার অস্ট্রেলিয়ায় হিন্দু মন্দিরগুলিতে খালিস্তান-সমর্থকদের ক্রমবর্ধমান হামলার নানা খবর আসছে এবং নরেন্দ্র মোদী অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজের কাছেও ওই হামলার ঘটনাগুলির বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন।

পশ্চিমা কূটনৈতিক তৎপরতা তুঙ্গে

নিউ ইয়র্ক থেকে বিবিসি-র কূটনীতিক সংবাদদাতা জেমস ল্যাণ্ডেলের বিশ্লেষণ:

কানাডা ও ভারতের মধ্যে যে কূটনৈতিক বিরোধ শুরু হয়েছে, তা যাতে অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্পর্কগুলির ওপরে প্রভাব না ফেলে, তার জন্যই এখন প্রবল প্রচেষ্টা চালাবে পশ্চিমা বিশ্বের মন্ত্রী আর কর্মকর্তারা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা শক্তিগুলি এই মুহূর্তে কখনই চাইবে না যে এমন একটা বিরোধ তৈরি হোক যেটি ভারতের সঙ্গে তাদের দূরত্ব বাড়িয়ে দেবে।

বিশ্ব রাজনীতির বৃহত্তর দাবার বোর্ডে ভারত এক গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ।

তারা যে শুধুই একটি ক্রমবর্ধমান শক্তি, তা নয় – ভারত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ এবং পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি। আবার চীনের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সুরক্ষা প্রাচীর হিসেবেও ভারতকে দেখে পশ্চিমা দেশগুলি।

এটা ভারতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে দেখা গিয়েছিল যখন রাশিয়ার আগ্রাসনের বিষয়ে নাম উল্লেখ না করেই একটি চূড়ান্ত বিবৃতিতে ঐকমত্যে পৌঁছিয়েছিল ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্র-দেশগুলি।

এই বিবৃতি নিয়ে বিতর্ক এড়ানোর মাধ্যমে তারা ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক রক্ষা করার পথ বেছে নিয়েছিল, যদিও তাতে আবার কিয়েভের একটা অংশ ক্ষুব্ধ হয়।

পশ্চিমা কূটনীতিকদের মধ্যে আরেকটি আশঙ্কা আছে যদি বিভিন্ন দেশ কানাডা-ভারত বিরোধে কোনও একটা পক্ষ নেওয়া শুরু করে।

গত জুনে কানাডার পশ্চিমাঞ্চলে এক শিখ নেতাকে হত্যার পেছনে ভারতের হাত রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এই সপ্তাহের গোড়ায় অভিযোগ করার ফলে দুই দেশের মধ্যে যথেষ্ট উত্তেজনা তৈরি হয়।

ভারত সম্প্রতি নিজেকে উন্নয়নশীল দেশগুলি, যাদের কখনও ‘গ্লোবাল সাউথ’ হিসাবে পরিচয় দেওয়া হয়, তাদের নেতা হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। এই দেশগুলির মধ্যে অনেকেই ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কিছু ইউরোপীয় দেশ কঠোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যাতে এইসব দেশগুলিকে বোঝানো যায় যে এই যুদ্ধ তাদের কাছে এবং তাদের অর্থনীতির কাছে কেন গুরুত্বপূর্ণ।

কূটনীতিকরা চাইবেন না যে তাদের সেই প্রচেষ্টায় কোনও নেতিবাচক প্রভাব ফেলুক ভারত-কানাডা বিতর্ক, যেটাকে দুটি কমনওয়েলথ দেশের মধ্যে উত্তর বনাম দক্ষিণ বিরোধ অথবা একটি ট্রান্স-আটলান্টিক শক্তি আর একটি উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব হিসাবে পরিগণিত হয়।

কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মি. ট্রুডো মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের কী অবস্থান?

আপাতত কানাডার মিত্ররা বিশ্বস্ত, অথচ সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।

হোয়াইট হাউস বলেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই হত্যার অভিযোগের বিষয়ে ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’ আর ‘কানাডার যে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা সেটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’।

যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলির জন্য, যেখানে বৃহৎ শিখ সম্প্রদায় রয়েছে, সেখানে সবসময় এই জাতীয় কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিণতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

যুক্তরাজ্যের বিদেশ সচিব জেমস ক্লেভারলি বলছেন যে ব্রিটেন “কানাডার গভীর উদ্বেগগুলি খুবই মনোযোগ দিয়ে শুনবে।“

তিনি বিবিসিকে জানিয়েছেন যে কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রী মেলানি জলির সঙ্গে তাদের তোলা অভিযোগগুলি নিয়ে সোমবারেই কথা হয়েছে এবং “কানাডা যা বলছে, সেগুলিকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে” যুক্তরাজ্য।

তবে ব্রিটেন ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করবে কী না, তা নিয়ে কিছু বলতে চান নি, তবে এটা বলেছেন যে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কানাডীয় তদন্ত শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করবে যুক্তরাজ্য।

“কানাডা এবং ভারত উভয়ই যুক্তরাজ্যে ঘনিষ্ঠ মিত্র, তারা কমনওয়েলথের অংশীদার,” বলেছেন মি. ক্লেভারলি।

অস্ট্রেলিয়ার বিদেশ মন্ত্রকের এক মুখপাত্র জানাচ্ছেন, ওই অভিযোগুলির ব্যাপারে ক্যানবেরা ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’, এবং তাদের ‘উদ্বেগের ব্যাপারে ভারতের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।‘

তাই, আপাতত পশ্চিমা দেশগুলি তদন্তের অগ্রগতির ওপরে নজর রাখবে।

আবার কানাডীয় গোয়েন্দারা যা জেনেছেন, সেই তথ্য কয়েকটি মিত্র দেশের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া হতে পারে।

যদি সেটা করা হয়, তাহলে পশ্চিমা শক্তিকে বেছে নিতে হবে যে দিল্লি না অটোয়া, কাকে তারা সমর্থন করবে। আইনের শাসনের নীতিমালা, না রাজনীতির কঠোর বাস্তবতা – এই দুইয়ের মধ্যে একটিকে বেছে নিতে হবে তখন।

অতীতে রাশিয়া, ইরান বা সৌদি আরবে মতো দেশের বিরুদ্ধে যখন ভিন দেশে হত্যার অভিযোগ উঠেছে, তখন পশ্চিমা বিশ্ব সেই ঘটনাগুলির নিন্দা জানিয়েছিল।

তারা চাইবে না যে ভারতও সেই তালিকাভুক্ত হোক। তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।