News update
  • Hadi is no more, state mourning on Saturday: CA     |     
  • Bangladesh capital market falls; weekly turnover lowest     |     
  • Sharif Osman Hadi No More     |     
  • Tarique Rahman to Return Home With Daughter on Dec 25     |     
  • ILO praises Bangladesh’s labour reforms, new milestones     |     

মোদীর 'বিজয় দিবস'- এর বার্তা ঘিরে বাংলাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া

বিবিসি বাংলা কুটনীতি 2024-12-17, 10:33am

img_20241217_103226-5523da5ad51fc0113c8e07a0a82224cc1734410003.jpg




বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয় দিবসকে ১৯৭১ সালে 'ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়' বর্ণনা করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটি স্ট্যাটাস দেয়ার পর এ নিয়ে বাংলাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

এর আগেও স্বাধীনতা দিবস বা বিজয় দিবসের মতো বিশেষ বিশেষ দিনে নিয়মিতই নিজের বার্তা পোস্ট করেছেন নরেন্দ্র মোদী।

তবে তার বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা বার্তায় সাধারণত বাংলাদেশ বা মুক্তিযুদ্ধের উল্লেখ থাকে না। কারণ বিজয় দিবসকে ভারত তথা ভারতের সেনাবাহিনী যুদ্ধে তাদের বিজয় হিসেবেই তুলে ধরে থাকে।

শুধু নরেন্দ্র মোদী নন ভারতের সামরিক বাহিনী কিংবা অন্য রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় থেকেও ১৬ ডিসেম্বরের এই দিনটিকে বরাবরই 'ভারতীয় সেনাবাহিনীর অসাধারণ সাফল্য' হিসেবে বর্ণনা করা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ একরকম অনুচ্চারিতই থেকে যায়।

তবে, বাংলাদেশে এর আগে কখনও সরকারি বা রাজনৈতিক পর্যায়ে নরেন্দ্র মোদীর শুভেচ্ছা বার্তা নিয়ে এত নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।

অবশ্য, আ‍ওয়ামী লীগ সরকার এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। পাঁচই অগাস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর রাজনীতি থেকে কূটনীতি সবক্ষেত্রেই দুই দেশের মধ্যে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই স্ট্যাটাস ঘিরে নতুন করে আলোচনা তৈরি হয়েছে।

কী লিখেছেন মোদী?

বিজয় দিবসের সকালেই নরেন্দ্র মোদীর বার্তা সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

সেখানে তিনি লিখেছেন, "আজকের এই বিজয় দিবসে, সেইসব নির্ভীক সেনাদের সাহস ও আত্মত্যাগকে আমরা সম্মান জানাই, যারা ১৯৭১ সালে ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়ে অবদান রেখেছিল।"

"তাদের দৃঢ় সংকল্প ও নিঃস্বার্থ আত্মোৎসর্গ জাতিকে করেছে সুরক্ষিত এবং বয়ে এনেছে গৌরব। তাদের অসামান্য বীরত্ব ও অবিচল মনোবলের প্রতি সম্মান জানাতেই আজকের দিন।," যোগ করেন মোদি।

"তাদের আত্মত্যাগ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে অনুপ্রেরণা যোগাবে এবং ইতিহাসে লেখা থাকবে।'

নরেন্দ্র মোদীর এই বক্তব্যে কোথাও বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

প্রতিবছরই ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুভেচ্ছা বার্তা দিয়ে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই দিনটিকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিও পালিত হয় ভারতে।

শুভেচ্ছা বার্তায় বরাবরই ১৯৭১ সালের নিহত ভারতীয় সৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয় এবং বলা হয় তাদের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বিজয়ের কথা বলা হয়।

সেখানে বাংলাদেশ বা মুক্তিযুদ্ধের কোনো উল্লেখ থাকে না। তবে সরাসরি ভারতের বিজয় বলেও বর্ণনা করা হয় না।

ব্যতিক্রম হিসেবে দেখা যায় ২০২১ সালের বিজয় দিবসকে। সেবার স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করে বাংলাদেশ।

ওই বছর নরেন্দ্র মোদী তার টুইটে ভারতীয় সেনাদের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের কথা লিখেছিলেন। সুবর্ণ জয়ন্তীর অতিথি হিসেবে তৎকালীন ভারতীয় রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ তখন বাংলাদেশে। সেই সূত্রে ঢাকার কথা লিখেছিলেন মোদী।

বাংলাদেশে প্রতিক্রিয়া

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই পোস্টটি প্রকাশ্য হওয়ার পর থেকেই নানা ধরনের আলোচনা তৈরি হয়েছে।

ফেসবুক, এক্স দুই প্ল্যাটফর্মেই মি. মোদীর হ্যান্ডেলে 'বিজয় দিবস' নিয়ে পোস্টটি করা হয়েছে।

ফেসবুকে তার পোস্টের নিচেই অনেক বাংলাদেশি ব্যবহারকারীকে প্রতিবাদ জানাতে দেখা গেছে। মুজাহিদ শুভ নামে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'ফ্যাব্রিকেটেড হিস্ট্রি' (বানোয়াট ইতিহাস)।

ফররুখ মাহমুদ নামে আরেকজন লিখেছেন, "ইট ওয়াজ আওয়ার ভিক্টোরি। উই আর বাংলাদেশি।" (এটা আমাদের বিজয়। আমরা বাংলাদেশি।)

সরকার পতন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ'র প্রতিক্রিয়ার পর বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে।

ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া পোস্টে হাসনাত আবদুল্লাহ লেখেন, "এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু মোদী দাবি করেছে, এটি শুধু ভারতের যুদ্ধ এবং তাদের অর্জন। তাদের বক্তব্যে বাংলাদেশের অস্তিত্বই উপেক্ষিত।"

নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্যকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি হুমকি বলে মনে করেন মি. আব্দুল্লাহ।

"যখন এই স্বাধীনতাকে ভারত নিজেদের অর্জন হিসেবে দাবি করে, তখন আমি একে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রতি সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখি," লেখেন তিনি।

"ভারতের এই হুমকির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়া অবশ্যম্ভাবী" মন্তব্য করে মি. আব্দুল্লাহ আরো লেখেন "এই লড়াই আমাদের চালিয়ে যেতেই হবে।"

অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলও বিজয় দিবস নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বার্তার 'তীব্র প্রতিবাদ' জানিয়েছেন।

তিনি লিখেছেন, "তীব্র প্রতিবাদ করছি। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ ছিল বাংলাদেশের বিজয়ের দিন।"

"ভারত ছিল এই বিজয়ের মিত্র, এর বেশি কিছু নয়," যোগ করেন আইন উপদেষ্টা।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের হাল

১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল এবং সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের বিজয় ত্বরান্বিত করেছিল।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় আশ্রয় দেয়া, প্রশিক্ষণ দেয়া, অস্ত্র সহায়তার পাশাপাশি সরকারি অংশ নিয়েছে ভারতের সেনারা। সেই যুদ্ধে ভারতের অনেক সামরিক সদস্যও নিহত হয়।

১৬ই ডিসেম্বর ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমপর্ণ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। স্বাধীনতার দলিলেও সেভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে অগাস্ট মাসে গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্কের বেশ অবনতি হয়েছে।

একদিকে যেমন বাংলাদেশিদের জন্য জরুরি চিকিৎসা সেবা ছাড়া অন্য ভিসা দেয়া বন্ধ রেখেছে ভারত, তেমনি ভারতের মাটিতে বাংলাদেশ মিশনে হামলার মতো ঘটনাও ঘটেছে।

ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ে হামলা ও পতাকা পোড়ানোর পর দিল্লিকে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা।

সরকারের নানা উপদেষ্টা ও কর্মকর্তাদের তরফ থেকে বলা হয়েছে, এতদিন ভারতের সাথে অনেকটা নতজানু নীতি থাকলেও এখন সম্পর্ক হবে সমতার ভিত্তিতে।

ভারতের সেভেন সির্স্টার্সকে টার্গেট করে বক্তব্য-হুঁশিয়ারি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার হওয়ায় উদ্বেগ ও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে ভারতে।

অন্যদিকে ভারতীয় গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করতে দেখা গেছে। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু এবং হিন্দুদের ওপর হামলা এবং অত্যাচারের নানা রকম তথ্য, অপতথ্য এবং গুজবও ব্যাপকভাবে প্রচার হতে দেখা গেছে ভারতে।

এমন প্রেক্ষাপটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই স্ট্যাটাস ঘিরে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হলো।