
বিশ্বনেতাদের আগমনে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর এখন বিশ্ব কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। রোববার (২৬ অক্টোবর) দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক জোটের (আসিয়ান) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ও আসিয়ান চেয়ার আনোয়ার ইব্রাহিম।
স্বাগত ভাষণে আনোয়ার ইব্রাহিম সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘অন্তর্ভুক্তি ও স্থায়িত্ব’-এর ওপর জোর দেন।
সম্মেলনে আসিয়ানের ১০ সদস্য দেশের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রায় ৩০ জন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান অংশ নিচ্ছেন।
সম্মেলনে অংশ নিতে রোববার সকালে কুয়ালালামপুরে পৌঁছেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তবে ভারতে চলমান দীপাবলি উৎসবের কারণে নরেন্দ্র মোদি ভার্চুয়ালি এই সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল পূর্ণ সদস্য হিসেবে পূর্ব তিমুরকে স্বাগত জানানো ও আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। দীর্ঘ ১৪ বছরের প্রচেষ্টার পর এই জোটের সদস্যপদ পেল দেশটি।
এবারের সম্মেলনে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। যার মধ্যে মিয়ানমারে রাজনৈতিক ও মানবিক সংকট মোকাবিলায় সম্মত হওয়া ‘পাঁচ-দফা ঐকমত্য’র বাস্তবায়ন পর্যালোচনা এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ।
এছাড়া দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে আঞ্চলিক নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং চীনের সঙ্গে দ্রুত আচরণবিধি চূড়ান্ত করার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা। মার্কিন-চীন প্রতিযোগিতা পরিস্থিতিতে আসিয়ানের ঐক্য ও কেন্দ্রীয়তা বজায় রাখার কৌশল নির্ধারণ। গাজার পরিস্থিতি নিয়ে আসিয়ানের যৌথ অবস্থান ও বিবৃতি নিয়ে আলোচনা।
এছাড়া আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংযোগ গভীর করা এবং প্রবৃদ্ধির কৌশল নিয়ে আলোচনা, ডিজিটাল ইকোনমি ফ্রেমওয়ার্ক কে ২০২৬ সালের মধ্যে কার্যকর করার লক্ষ্য নির্ধারণ, আসিয়ান ট্রেড ইন গুডস এগ্রিমেন্ট এর দ্বিতীয় সংশোধনী প্রোটোকল স্বাক্ষর, বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যে সরবরাহ শৃঙ্খলের স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা জোরদার করা, আঞ্চলিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের চুক্তির সফল বাস্তবায়ন পর্যালোচনা, জলবায়ু মোকাবিলায় ‘এশিয়া জিরো এমিশন কমিউনিটি’ গড়ার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা, অঞ্চলজুড়ে টেকসই পরিকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক সুবিধা সমাজের সকল স্তরে পৌঁছানোর নীতি ও কর্মসূচির ওপর জোর দেয়া।
সম্মেলনের ফাঁকে আসিয়ান তার গুরুত্বপূর্ণ ডায়ালগ পার্টনারদের সাথে সম্পর্ক জোরদার করতে বিভিন্ন বৈঠক করার কথা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদারের আলোচনা হবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ম্যাক্রো-অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়েও পর্যালোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।