News update
  • Go live together Friday, we stand united: Prof Yunus urges media      |     
  • Bodies of three Bangladeshis killed in India's Tripura handed over     |     
  • Khaleda, Tarique invited to July Charter signing ceremony     |     
  • Climate adaptation could unlock millions of jobs, growth in BD     |     
  • UN Rights Chief Welcomes Bangladesh's Abuse Prosecutions     |     

টাঙ্গাইলে আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে লাগানো হচ্ছে ধানের বীজ

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক কৃষি 2023-01-29, 2:32pm

image-76648-1674977708-14160869e1bc9d6d82d70ee4fc042a851674981129.jpg




জেলায় প্রচলিত পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি ও চারা রোপণ না করে প্লাস্টিকের ফ্রেমের ট্রে-তে আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে লাগানো হয়েছে ধানের বীজ। এতে ২০-২৫ দিনের মধ্যে চারা মাঠে লাগানোর উপযোগী হবে। রাসায়নিক সারের ব্যবহার না করে সামান্য পরিমাণে জৈব সারের ব্যবহারে খরচ কমে যাচ্ছে। প্লাস্টিকের ফ্রেমের ট্রে-তে বীজতলা করায় ধানের চারা উত্তোলন, চারা লাগানো, ফসল মাড়াই ও সবই এক সময়ে একযোগে করা যাবে। উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের ধানের  বীজ ব্যবহার করায় ১৪০-১৪৫ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হয়।

ধান চাষে কৃষকদের শ্রমিক সংকট নিরসন, সময় অপচয়রোধ ও অতিরিক্ত খরচ রোধে সরকারিভাবে কৃষি প্রণোদনার আওতায় টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলায় ‘সমলয়’ চাষ পদ্ধতিতে বীজতলা ও ধানের চারা রোপণে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি। ফলে কৃষিতে এক নতুন দুয়ার খুলছে। এ বছর ৪০ শতক জমিতে সাড়ে ৪ হাজার ট্রে-তে প্রথমবারের মতো ধানের বীজ বপন করা হয়েছে। স্থানীয় ৮০ জন কৃষকের ১৫০ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করা হবে।

দেলদুয়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সর্বাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে উচ্চ ফলনশীল একই জাত ব্যবহার, ট্রে-তে বীজ বপন, কম বয়সের চারা রোপণ, চারা রোপণে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ব্যবহার, সুষম সার ব্যবহার, ধান কর্তনে কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো, উৎপাদন খরচ সাশ্রয় করা ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ভরা মৌসুমে ধান কর্তনকালে কৃষি শ্রমিকের সংকটের সমাধানে সমলয় চাষাবাদ উজ্জল দৃষ্টান্ত হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র আরোও জানায়, একটি বিশেষ অটোমেটিক কৃষি যন্ত্রের মাধ্যমে ট্রে-তে চারা বপন করা হয়। ট্রে-তে চারা বপনের যন্ত্রের তিনটি চেম্বর থাকে। প্রথম চেম্বারে ঝুরঝুরে মাটি দেয়া হয়। মেশিনের মাধ্যমে মাটি সরাসরি পরিমানমত ট্রেতে পড়ে। দ্বিতীয় চেম্বারে অঙ্কুরিত বীজ দেয়া হয়। সেই বীজও মেশিনের মাধ্যমে সঠিক পরিমানে ট্রে-তে পড়ে। সর্বশেষ তৃতীয় চেম্বারে আবার ঝুরঝুরে মাটি দেয়া হয়। সেই মাটিও মেশিনের মাধ্যমে বীজসহ ট্রে-তে পড়ে বীজ গুলো ঢেকে দেয়া হয়। এরপর ট্রে গুলো জমিতে সারিবদ্ধ ভাবে রাখা হয়। মাটি যেন শুকিয়ে না যায় সে জন্য পানি স্প্রে করা হয়। শীতে ট্রে-র চারার যেন কোন ক্ষতি না হয় সে জন্য পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। চারার উচ্চতা চার ইঞ্চি হলে বা চারার বয়স ২০-২৫ দিন হলে তা জমিতে রোপণ করার উপযোগী হয়। ট্রে-তে চারা উৎপাদনে জমির অপচয়ও কম। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে চারা একই গভীরতায় সমানভাবে লাগানো যায়। ফলে ফলনও বাড়বে। একসঙ্গে রোপণ করায় ধান একসঙ্গে পাকবে ও কৃষকরা একসঙ্গে ধান ঘরেও তুলতে পারবেন। এ বছর ৪০ শতক জমিতে সাড়ে ৪ হাজার ট্রে-তে প্রথমবারের মতো ৮০ জন কৃষকের ১৫০ বিঘা জমিতে ধান রোপণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

দেলদুয়ার সদর ইউনিয়নের বারপাখিয়া ব্লকের রমজান আলীসহ অন্যান্য কৃষকরা জানান, বোরো ধান চাষাবাদে এর আগে কখনো আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে ট্রে-তে ধান-চারা উৎপাদন করা হয়নি। প্রথমবারের মতো এমন পদ্ধিতে ধানের বীজতলা করেছি। কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার হচ্ছে না। কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় ট্রে-তে বীজ বপন ও চারা উৎপাদন হচ্ছে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ধানের চারা রোপণের ব্যাপক প্রস্তুুতি নেওয়া হয়েছে।

দেলদুয়ারের সদর ইউনিয়নের বারপাখিয়া ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার রাজীবুল হাসান মল্লিক বলেন, কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে টেকসই যান্ত্রিকীকরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার। যার একটি হচ্ছে সমলয় পদ্ধতি। একটি মাঠে কৃষকরা একসঙ্গে একই জাতের ধান একই সময়ে যন্ত্রের মাধ্যমে রোপণ করতে পারবেন। এ পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি, চারা রোপণ ও ধান কর্তন সবই হবে যন্ত্রের মাধ্যমে।

দেলদুয়ার উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার এস এম রাশেদুল হাসান জানান, প্রচলিত রীতিতে বীজতলা তৈরি না করে জমি ও অপচয়রোধে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের যুগোপযোগী পদ্ধতি হচ্ছে সমলয় চাষ। স্বল্প জমিতে প্লা­াস্টিকের ফ্রেমে বা ট্রে-তে লাগানো যায় ধানের বীজ। মাত্র ২০-২৫ দিনের মধ্যে চারা হবে। তারপর রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টারের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণ করা হবে। একটা ট্রান্সপ্ল্যান্টার ঘণ্টায় এক একর জমিতে চারা লাগাতে পারে। তিনি আরও জানান, স্বল্প জমিতে অধিক ধান উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সমলয় পদ্ধতিতে বোরো ধানের বীজতলা ও চাষাবাদের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এর মধ্যে সরকারিভাবে কৃষি প্রণোদনা কার্যক্রমের আওতায় কৃষকরা নতুন মাত্রায় ট্রে-তে বীজ বপন করেছে এবং অনেক ট্রে-পদ্ধতির চারা রোপণের পস্তুতি  নেওয়া হয়েছে। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ ও শ্রমিক সংকট দূর হবে এবং কৃষকরা আরও অধিক লাভবান হবে।

দেলদুয়ার উপজেলা কৃষি অফিসার শোয়েব মাহমুদ জানান, সমলয় হলো এমন একটা পদ্ধতি, যেখানে এক সাথে বীজতলা করা, চারা রোপণ করা ও কর্তন করা হয় যান্ত্রীকিকরণের মাধ্যমে। এর ফলে ধান পরর্বতী ফসল সঠিক সময় করা সহজ হয়। এবার আমার বিনামূল্যে সার বীজ দিয়ে কৃষকদের মাধ্যমে এ পদ্ধতিতে ধানের চাষাবাদ করাচ্ছি। এর প্রধান উদ্দেশ্য হল কৃষকদের মধ্য থেকে উদ্যোক্তা তৈরি করা। কেউ চাইলে এটাকে ব্যবসা হিসেবেও করতে পারবে। কৃষির সকল যন্ত্রের সুবিধা পাওয়ার জন্য ও কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের জন্যই এ সমলয় পদ্ধতি। এতে  কৃষকের উৎপাদন খরচ ও শ্রমিক সংকট দূর হবে। তথ্য সূত্র বাসস।