ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সময় নিয়ে মতভেদ দেখা দিয়েছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মধ্যে। বিশেষ গোষ্ঠীর সুবিধা দেখছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। আর বামপন্থী সংগঠনগুলো বলছে, নির্বাচন পদ্ধতি ও কাঠামোগত সংস্কারের পরই হতে হবে সংসদ নির্বাচন। অন্যদিকে দ্রুত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন চায় ছাত্রশিবির। ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন চেয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
সম্প্রতি ৩০টি ছাত্র সংগঠনের বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনাও করে অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
তবে ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন নিয়ে একমত নয়, ছাত্র সংগঠনগুলো। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনে করে, তড়িঘড়ি নির্বাচন হলে বিশেষ একটি গোষ্ঠী সুবিধা পাবে।
সংগঠটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. নাছির উদ্দীন বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে- এমনটা আমরা মনে করছি না। আমরা মনে করছি, দুটি আলাদা প্ল্যাটফর্ম। ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের চিন্তা করা হচ্ছে। এর পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে বলেই মনে করছি।
বাম ছাত্রসংগঠনগুলো বলছে, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে প্রয়োজন নির্বাচন প্রক্রিয়া সংস্কার। তবে তা হতে হবে জাতীয় নির্বাচনের আগেই।
ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ বলেন, ৭৩ এর অধ্যাদেশে যে চারটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত আগে সেই অধ্যাদেশে কী কী পরিবর্তন করতে হবে সেজন্য একটি কমিশন গঠন করা দরকার। যে কমিশনে ছাত্র সংগঠনকে যুক্ত করা দরকার। এখন ছাত্র সংসদ নির্বাচন কখন হবে সে সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। নিজেদের সুবিধামতো ছাত্র সংসদ নির্বাচন করলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয় না।
আর ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি রাগীব নাঈম মনে করেন, শিক্ষার পরিবেশ ফেরানোর পরই ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত। তবে সেটা দুই মাসে সম্ভব না। কমপক্ষে তিন-চার মাস সময় লাগবে। তবে আলোচনা শুরুর পরই বোঝা যাবে কত দিন সময় লাগবে।
গণঅভ্যুত্থানের পর, সব বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রকাশ্যে রাজনীতির সুযোগ পেয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির। তারা বলছে, দ্রুত নির্বাচন করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে আলোচনা শুরু করা উচিত।
কারণ হিসেবে সংগঠনটির সভাপতি মো. মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচিত সরকার এলে তখন নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। যে দল ক্ষমতায় আসবে তার ছাত্র সংগঠন প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করবে। কিন্তু এখন কোনো নির্বাচিত সরকার নেই। ফলে প্রভাবমুক্ত একটি নির্বাচন পাওয়া সম্ভব। তাই আমরা চাই জাতীয় নির্বাচনের আগেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন হোক।
তিনি বলেন, শুধু দলীয় হস্তক্ষেপই নয়; ছাত্র সংসদে দীর্ঘ দিনের শূন্যতা এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে যাতে ছাত্ররা ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে পারে সেজন্যও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নির্বাচন দরকার।
সবশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন হয় ২০১৯ সালে। আর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ আছে ছাত্র সংসদ নির্বাচন।