News update
  • CA Yunus pays homage to Liberation War martyrs on Victory Day     |     
  • Bangladesh capital market extends losing streak for second day     |     
  • Bangladesh celebrates Victory Day Tuesday     |     
  • 'Different govts presented history based on their own ideologies': JU VC     |     

ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারলো বাংলাদেশ

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক ক্রিকেট 2022-07-08, 4:10pm




অধিনায়ক নিকোলাস পুরান ও ওপেনার কাইল মায়ার্সের ব্যাটিং নৈপুন্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে টি-টোয়েন্টি সিরিজও হারলো সফরকারী বাংলাদেশ। 

গতরাতে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৫ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। ফলে টি-টোয়েন্টি সিরিজ ২-০ ব্যবধানে হারলো টাইগাররা। টি-টোয়েন্টির আগে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিলো বাংলাদেশ। 

বৃষ্টির কারনে প্রথম টি-টোয়েন্টি ভেস্তে যাবার পর দ্বিতীয়টিতে ৩৫ রানে জিতেছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাই সিরিজের তৃতীয় ও শেষটি দু’দলের জন্যই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। ম্যাচ জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিরিজ জয়ের স্বাদ নেয়া এবং আর সিরিজ হার এড়াতে জয়ের বিকল্প ছিলো না বাংলাদেশের। 

এমন সমীকরনে গায়ানার প্রোভিডেন্স স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। পেসার তাসকিন আহমেদের জায়গায় একাদশে সুযোগ পান স্পিনার নাসুম আহমেদ। 

প্রথম দুই ওভারে ৯ রান তুলতে পারেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার লিটন দাস ও আনামুল হক। মায়ার্সের তৃতীয় ওভারের পঞ্চম বলে ফ্লিক করে মিড উইকেট দিয়ে বাংলাদেশ ইনিংসের প্রথম চার মারেন লিটন। 

পরের ওভারে স্পিনার আকিল হোসেনের তৃতীয় ডেলিভারিতে কাট করে পয়েন্ট দিয়ে আরও একটি বাউন্ডারি আদায় করে নেন লিটন। 

বাউন্ডারি দিয়ে পেসার ওডিন স্মিথের চতুর্থ ওভার শুরু করেছিলেন এনামুর হক বিজয়। ফুলটস পেয়ে ফাইন লেগ দিয়ে ইনিংসে নিজের প্রথম চার মারেন বিজয়। তবে এক বল পরই বিদায় ঘটে তার। ১১ বলে ১০ রান  বিজয় আউট হলে  প্রথম  উইকেট হারায় বাংলাদেশ। 

দলীয় ৩৫ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গার পর ক্রিজে আসেন গত ম্যাচে দলের সর্বোচ্চ স্কোরার সাকিব আল হাসান। প্রথম বলেই বাউন্ডারি দিয়ে রানের খাতা খুলেছিলেন সাকিব। তবে পরের ওভারে রোমারিও শেফার্ডের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দেন সাকিব। সাকিবের ক্যাচ নিতে বেশ কয়েক কদম পেছনে গিয়ে দারুনভাবে সেটি মিড উইকেটে তালুবন্দি করেন স্মিথ। ৩ বলে ৫ রান করেন সাকিব। পাওয়ার প্লেতে ৪৪ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। 

সাকিবের বিদায়ে ক্রিজে আসেন আফিফ হোসেন। সাকিবের আউটের পর ১৫ বল কোন বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারি ছিলো না বাংলাদেশের। নবম ওভারে আফিফ ১টি চার ও লিটন ১টি ছক্কা মারেন।

এরপর আবারও ১৫ বল কোন চার-ছক্কা বিহীন থাকেতে হলে ১১ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় স্কোর ৭৬। এ অবস্থায় স্মিথের ১২তম ওভারে ২০ রান তুলেন আফিফ-লিটন। ঐ ওভার শেষে হাফ-সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যান লিটন। কিন্তু নিজের ভুলেই হাফ-সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন তিনি।  স্পিনার হেইডেন ওয়ালশের বলে উইকেট ছেড়ে চড়াও হয়ে খেলতে গিয়ে পয়েন্টে আকিলের হাতে জমা পড়লে  বিদায় নেন ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪১ বলে ৪৯ রান করা লিটন। আফিফের সাথে তৃতীয় উইকেটে ৪৪ বলে ৫৭ রান তুলেন লিটন। 

দলীয় ৯৯ রানে তৃতীয় উইকেট পতনের পর ব্যাট হাতে নামেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। অফ-ফর্মে থাকা মাহমুুদুল্লাহ প্রথম ৬ বলে নেন ২ রান। সপ্তম বলে হুক করে ছক্কা মারেন তিনি। 

১৬তম ওভারে ১টি করে চার-ছক্কায় নিজের রানকে চল্লিশের ঘরে নিয়ে যান আফিফ। ১৮ ও ১৯তম ওভারে দু’টি চার মেরে বিদায় নেন মাহমুদুল্লাহ। ১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে ওয়ালশের বল রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোর আউট হন টাইগার দলপতি। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ২০ বলে ২২ রান করেন তিনি। 

অধিনায়কের বিদায়ের ওভারের পঞ্চম বলে ২ রান নিতে গিয়ে রান আউট হন আফিফ। ১ রান যোগ হওয়ায় টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন তিনি। ৩৮ বল খেলে ২টি করে চার-ছক্কয় ৫০ রান করেন আফিফ। 

শেষ ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে দু’টি চার মেরে বাংলাদেশের স্কোর ৫ উইকেটে ১৬৩ রানে নিয়ে যান মোসাদ্দেক। ৬ বলে অপরাজিত ১০ রান করেন মোসাদ্দেক। ২ রানে অপরাজিত থাকেন নুরুল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওয়ালশ ২৫ রানে ২ উইকেট নেন।


ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৬৪ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দিয়ে শুরুতেই ম্যাচের লাগাম টেনে ধরে বাংলাদেশের তিন স্পিনার নাসুম আহমেদ, মাহেদি হাসান ও সাকিব। প্রথম ওভারের শেষ বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনার ব্রান্ডন কিংকে থামান নাসুম। 

প্রথম বলটি ওয়াইড হবার পরের ডেলিভারিতে স্লগ সুইপে ছক্কা মারেন কিং। শেষ বলটি মিড-অনের উপর দিয়ে মারতে চেয়েছিলেন কিং। কিন্তু সার্কেলের মধ্যে থাকা মাহমুদুল্লাহর হাতে ক্যাচ জমা পড়ে। ৭ রান করেন কিং।  

চতুর্থ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে দ্বিতীয় আঘাত হানেন মাহেদি। আগের দুই ওভারে নাসুম ও মাহেদি একটি করে চার মারা ব্রুকস থামেন। সুইপ করে স্কয়ার লেগে বিজয়ের হাতে ক্যাচ দেন ৯ বলে ১২ রান করা ব্রুকস।

২২ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এ অবস্থায় রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করে মায়ার্স। পঞ্চম ওভারে নাসুমকে ১টি করে চার-ছক্কা মারেন তিনি। পরের ওভারে ১টি চার মারেন। ফলে পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারিয়ে ৪৩ রান পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। 

পাওয়ার প্লে শেষে প্রথমবারের মত বল হাতে আক্রমনে আসেন সাকিব। প্রথম ডেলিভারিতেই উইকেট তুলে নেন সাকিব। সাকিবের স্টাম্পে পড়া বল সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোর হন স্মিথ। রিভিউ নেননি তিনি। ২ রান করেন স্মিথ। ফলে ৪৩ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় ক্যারিবীয়রা। 

এরপর ক্রিজে মায়ার্সের সাথে জুটি বাঁধেন পুরান। পরিস্থিতির সাথে দ্রুত মানিয়ে নিয়ে উইকেট ধরে খেলেন তারা। ফলে ১১ ওভার শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ছিলো ৩ উইকেটে ৮০। শরিফুলের করা ১২তম ওভার থেকে ১৩ রান নেন মায়ার্স-পুরান। 

মুস্তাফিজের করা ১৩তম ওভার থেকে ১৫ রান নেন মায়ার্স-পুরান। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে বোলার মোসাদ্দেকের মাথার উপর দিয়ে ছক্কা মেরে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মায়ার্স। এজন্য ৩৩ বল খেলেছেন তিনি।

নাসুমের শেষ ও ইনিংসের ১৫তম ওভারে ভাঙ্গে মায়ার্স-পুরান জুটি। দ্বিতীয় বলে পুরান ছক্কা মারলেও, চতুর্থ বলে মায়ার্সকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান নাসুম। ৩৮ বলে ২টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৫৫ রান করেন মায়ার্স। তবে  ঐ ওভারের শেষ দুই বলে ১টি করে চার-ছক্কা মারেন পুরান। পঞ্চম বলে মারা ছক্কায় টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের নবম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন পুরান। ওভার থেকে ১৯ রান পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই ১৯ রানেই ম্যাচের লাগাম নিয়ে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এমন অবস্থায় জয়ের জন্য শেষ ৫ ওভারে ২৬ রান দরকার পড়ে ক্যারিবীয়দের। 

১৭তম ওভারে দ্বিতীয়বারের আক্রমনে আসেন সাকিব। ততক্ষণে ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে বাংলাদেশ। ১৮তম ওভারে রোভম্যান পাওয়েলকে ৫ রানে বিদায় দেন আফিফ। ঐ ওভারের চতুর্থ ও মাহমুুদুল্লাহর পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা মেরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জয় এনে দেন পুরান। 

৫টি করে চার-ছক্কায় ৩৯ বলে অপরাজিত ৭৪ রান করেন পুরান। ৩ রানে অপরাজিত থাকেন আকিল। বাংলাদেশের নাসুম ২টি, মাহেদি-সাকিব-আফিফ ১টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ ও সিরিজ সেরা হন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দলনেতা পুরান।  


আগামী ১০ জুলাই তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু করবে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। 

স্কোর কার্ড : (টস-বাংলাদেশ)

বাংলাদেশ ইনিংস :

লিটন ক হোসেন ব ওয়ালশ ৪৯

বিজয় ক হোসেন ব স্মিথ ১০

সাকিব ক স্মিথ ব শেফার্ড ৫

আফিফ রান আউট (পাওয়েল/পুরান) ৫০

মাহমুদুল্লাহ এলবিডব্লু ব ওয়ালশ ২২

নুরুল হাসান অপরাজিত ২

মোসাদ্দেক অপরাজিত ১০

অতিরিক্ত (বা-২, লে বা-৩, নো-১, ও-৯) ১৫

মোট (৫ উইকেট, ২০ ওভার) ১৬৩

উইকেট পতন : ১/৩৫ (আনামুল), ২/৪২ (সাকিব), ৩/৯৯ (লিটন), ৪/১৪৮ (মাহমুদুল্লাহ), ৫/১৫০ (আফিফ)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিং :

মায়ার্স : ২-০-১৪-০,

ম্যাককয় : ৪-০-২৯-০ (ও-৫, নো-১),

আকিল : ৪-০-৩১-০ (ও-১),

স্মিথ : ৩-০-৩৪-১ (ও-২),

শেফার্ড : ২-০-১৯-১ (ও-১),

ড্রাকস : ১-০-৬-০,

ওয়ালশ : ৪-০-২৫-২। 

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস :

ব্রান্ডন কিং ক মাহমুদুল্লাহ ব নাসুম ৭

মায়ার্স ক মাহেদি ব নাসুম ৫৫

ব্রুকস ক আনামুল ব মাহেদি ১২

স্মিথ এলডিব্লু ব সাকিব ২

পুরান অপরাজিত ৭৪

পাওয়েল ক লিটন ব আফিফ ৫

আকিল অপরাজিত ৩

অতিরিক্ত (বা-২, লে বা-১, ও-৮) ১১

মোট (৫ উইকেট, ১৮.২ ওভার) ১৬৯

উইকেট পতন : ১/৯ (কিং), ২/২২ (ব্রুকস), ৩/৪৩ (স্মিথ), ৪/১২৮ (মায়ার্স), ৫/১৫৩ (পাওয়েল)। 

বাংলাদেশ বোলিং :

নাসুম : ৩-০-৪৬-০ (ও-২),

মাহেদি : ৪-০-৩১-১ (ও-২),

সাকিব : ৪-০-৩৮-১ (ও-১),

মোসাদ্দেক : ১-১-০-১ (ও-১), 

মুস্তাফিজ : ৪-০-৩৭-০ (ও-১),

শরিফুল : ৪-০-৪০-২,

আফিফ : ৪-০-৪০-২ (ও-১),

মাহমুদুল্লাহ : ৪-০-৪০-২।

ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেটে জয়ী।

ম্যাচ সেরা : নিকোলাস পুরান (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।

সিরিজ সেরা : নিকোলাস পুরান (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।

সিরিজ সেরা : তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ।  তথ্য সূত্র বাসস।