দুবাইয়ে অবস্থিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল একাডেমির মাঠে অনুশীলন করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফ্রির জন্য বাংলাদেশের এবারের লড়াইটা ভারত, পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।
তবে "চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির যে কোনো দলের সাথে তুলনা করলে বাংলাদেশ মানের দিক থেকে পিছিয়ে আছে," বলে মনে করেন বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়ান সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিং।
শুধু পন্টিং নন, ভারতের সাবেক কোচ ও বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেটার রাভি শাস্ত্রীও বাংলাদেশ নিয়ে আশা দেখছেন না। তার মতে, বাংলাদেশের গ্রুপ থেকে পাকিস্তান ও ভারত কোয়ালিফাই করবে।
রাভি শাস্ত্রী বলেন, "এই গ্রুপে অন্য কোনো দল যদি সুবিধা করতে পারে সেটা নিউজিল্যান্ড হতে পারে।"
রিকি পন্টিং আরও কঠিন ভাষায় বলেন, "একদম নিজেদের মাটিতে ছাড়া বাংলাদেশ তেমন ভালো করতে পারছে না। আমার মনে হয় এই দলটা ভুগবে এবং আফগানিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে ভালো খেলবে বলেই মনে হয় আমার কাছে।"
বাংলাদেশের জন্য কথাগুলো 'কঠিন ও শক্ত' বলে মনে হলেও ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বলছেন, এটাই বাস্তবতা!
'চ্যাম্পিয়ন হতেই খেলতে যাচ্ছি'
বাংলাদেশের অধিনায়করা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলতে যাওয়ার আগে একটা প্রশ্নের সম্মুখীন হন–– কী প্রত্যাশা নিয়ে যাচ্ছেন তারা।
এখানে দুই ধরনের উত্তর আসে–– বাস্তবতা মেনে নিয়ে এক বা দুই ম্যাচ জয়ের কথা বলেন অনেকে, তখন অনেকে বলে থাকেন মাঠে নামার আগেই হেরে বসে আছে। আবার অনেক উচ্চাভিলাষী কিছু বললে তখনও সমালোচনা শুনতে হয় যে বাড়াবাড়ি কথা বলছে।
এবারে শান্ত বেশ শক্তভাবেই বলে গেছেন, "আট দলেরই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ থাকবে, সবারই কোয়ালিটি আছে। আমি মনে করি আমাদের দলের সামর্থ্য আছে, আমাদের কোনো বাড়তি চাপ নেই।"
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল চ্যাম্পিয়ন হতেই খেলতে যাবে, বলেছেন শান্ত।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স কী বলে?
বাংলাদেশের ক্রিকেট সাংবাদিক মাঝহারুল ইসলাম বলেন, "আপনি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স দেখলে সমালোচকদের কথায় খুব বেশি ভুল খুঁজে পাবেন না।"
বাংলাদেশ ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর চারটি ওয়ানডে সিরিজের মাত্র একটিতে জয় পেয়েছে, শেষ ছয় সিরিজেও সেটিই বাংলাদেশের একমাত্র জয়।
অথচ এক সময় বলা হতো ওয়ানডে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে সেরা ফরম্যাট। এখন সেই ফরম্যাটেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দল 'সবচেয়ে খারাপ দল' হিসেবে একটা সিরিজ খেলতে যাচ্ছে।
মাঝহারুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, "বাংলাদেশকে রিকি পন্টিং বা ভারত পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটাররা যে কথাগুলো বলছে সেগুলো অনেকটাই বাস্তব।"
বাংলাদেশ নিয়ে যে যাই বলুক, বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলা ছাড়া উপায় নেই বলছেন মাঝহারুল ইসলাম।
তার মতে ক্রিকেটারদের এসব বাইরের কথা মাথায় না নেয়াই ভালো।
তিনি বলছেন, ভারতের যে দল, তার সাথে বাংলাদেশের যোজন যোজন পার্থক্য। কিন্তু "যদি কোনো কারণে বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে জয় পেয়ে যায় সে ক্ষেত্রে এসব কথার ভিত্তি থাকবে না"।
'সিনিয়র ক্যাম্পেইনাররা নেই'
এই ধরনের আসরে বড় দলগুলো বড় ক্রিকেটারদের ওপর নির্ভর করে।
যেমন ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ব্যাটে ভর করে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল।
বাংলাদেশের বর্তমান অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলে গেছেন, "মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ বড় ভূমিকা পালন করবেন" বলে আশা রাখেন তিনি।
তবে মুশফিক বা মাহমুদুল্লাহ ক্যারিয়ারের বিদায়ী অধ্যায়ে পা দিয়েছেন। তাই বাংলাদেশের যেই দল মধ্যপ্রাচ্য ও পাকিস্তানে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে গেছে সেই দল নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী হওয়া যায় না বলছেন বিশ্লেষকরা।
এর মাঝে বাংলাদেশ কোনো সাম্প্রতিক ওয়ানডে ফরম্যাটের ক্রিকেট খেলা ছাড়াই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে যাচ্ছে।
মিরাজের ওপর বাড়তি প্রত্যাশা থাকবে
বড় টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের পারফর্মার সাকিব আল হাসান এবারে নেই, রাজনৈতিক নানা হিসাব-নিকাশের বাইরে যোগ হয়েছে বোলিং অ্যাকশন নিয়ে নিষেধাজ্ঞা।
তাই এবার অলরাউন্ডার রোলে মিরাজের ওপর থাকবে বাড়তি নজর।
মিরাজের কাঁধে আছে সহ-অধিনায়কের দায়িত্বও।
মিরাজ সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের দলের নেতৃত্বও দিয়েছেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে তিন ম্যাচে ১৫২ রান তুলেছেন, ৫০ গড়ে।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও খুব ভালো বল করেছেন মিরাজ।
টেস্টেও মিরাজ ব্যাটে রান পেয়েছেন।
মিরাজ ক্রমশই বাংলাদেশ দলে সাকিবের জায়গা নিয়ে নিচ্ছেন, এবার বড় টুর্নামেন্টে প্রমাণের পালা।