মিয়ানমারে নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য চলতি বছর তহবিল সংকট চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সহায়তা মিলছে না। যা পাওয়া যাচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম।
তাই ডিসেম্বরে জেনেভাতে গ্লোবাল রিফিউজি ফোরামে রোহিঙ্গাদের সহায়তা দিতে অংশীদারদের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
মানবিক সেবায় আর্থিক সাহায্য এবং তাদের সংকট সমাধানে রাজনৈতিক সহায়তায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানায় সংস্থাটি। মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) সংস্থাটির ঢাকা কার্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ইউএনএইচসিআর তথ্যানুসারে, রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় বাংলাদেশিসহ প্রায় ১ দশমিক ৪৭ মিলিয়ন মানুষকে সহায়তা করতে মানবিক সংস্থাগুলো এ বছর ৮৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আবেদন করেছে।
তারপরও চলতি বছরের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত পাওয়া গেছে যৌথ কর্মপরিকল্পনার (জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান) জন্য প্রয়োজনীয় তহবিলের মাত্র ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরের মানবিক পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে, এ দীর্ঘায়িত সংকটকে ঘিরে ক্রমাগত বাড়ছে চ্যালেঞ্জ। শরনার্থী শিবিরে ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। তহবিলের তীব্র স্বল্পতা বিরাজ করছে।
অর্থের অভাবে মানবিক সংস্থাগুলো শুধুমাত্র অতি গুরুত্বপূর্ণ ও জীবন রক্ষাকারী চাহিদা মেটানোর ওপর নজর দিতে বাধ্য হচ্ছে। শরণার্থীদের খাদ্য সহায়তার ওপর এটি কঠিন প্রভাব ফেলেছে।
যার ফলস্বরূপ ক্রমবর্ধমান অপুষ্টি, শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়া, বাল্যবিয়ে, শিশুশ্রম এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা তাদের সামর্থ্য ও প্রত্যয় দিয়ে পুরো মানবিক কর্মকাণ্ডে অপরিহার্য অবদান রাখছে। রোহিঙ্গাদের জন্য চলমান মানবিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় জনগণের কল্যাণেও কাজ করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে ইউএনএইচসিআর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন, কারিগরি প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ তৈরিতে সাহায্যের আবেদন জানায়।
কারণ, এগুলো শরণার্থী জীবনে মর্যাদা, নিরাপত্তা ও উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করবে। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের কিছু চাহিদা নিজেরাই মেটাতে সক্ষম হবে।
শরণার্থীরা ক্রমঃহ্রাসমান মানবিক সহায়তার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে থাকতে পারে না, তারা সেটা চায়ও না। তারা প্রত্যাবাসন চায়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শরনার্থী সংকটের সমাধান মিয়ানমারে মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসন। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সবসময়ই বলে, নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়ার পরিবেশ তৈরি হলেই তারা মিয়ানমারে যেতে প্রস্তুত।
ইউএনএইচসিআর জানায়, প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে দৃঢ় মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় জনগণের কল্যাণে নিয়মিত আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাই এগিয়ে আসতে হবে। এই গুরু দায়িত্বের ভাগ নিতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নতুন করে চিন্তা ও চেষ্টা করতে হবে। আর টেকসই প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ তৈরির প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে প্রস্তুত রয়েছে জাতিসংঘ। তথ্য সূত্র আরটিভি নিউজ।