প্রশাসনের ২৯ সচিবের সন্তানরা বিদেশে বসবাস করছেন। তাদের অনেকেই পড়াশোনা করছেন, বাকিরা ব্যবসা বা চাকরি নিয়ে স্থায়ী হয়েছেন। একটি সংস্থার অনুসন্ধানে এই তথ্য উঠে এসেছে।
এসব সচিবদের ৪৩ জন সন্তান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আছেন। এর মধ্যে ১৮ জন সচিবের ২৫ সন্তান অবস্থান করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। বাকি ১৮ জন আছেন কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও ভারতে।
প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ সচিব পদমর্যাদার ৮৬ জনের সন্তানদের কে কোথায় আছেন এবং কী করছেন, তা নিয়ে অনুসন্ধান চালায় ওই সংস্থাটি। অনুসন্ধানের পর ৮৬ সচিবের মধ্যে ২৯ জনের সন্তানদের বিদেশে থাকার তথ্য প্রতিবেদন আকারে তৈরি করা হয়।
সরকারি সূত্র জানায়, বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি ঘোষণার পর এই তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের স্ত্রী-সন্তানের বিষয়েও এমন তথ্য এসেছে।
এ ছাড়া মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিষয়েও অনুসন্ধান হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ওই সংস্থার তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, ১৮ জন সচিবের ২৫ সন্তান যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। এরমধ্যে পরিকল্পনা সচিব সত্যজিৎ কর্মকারের দুই মেয়ে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহর দুই মেয়ে, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান (সচিব) মো. ফয়জুল ইসলামের দুই ছেলে, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) মোসাম্মৎ নাসিমা বেগমের এক ছেলে, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মশিউর রহমানের এক ছেলে, তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের এক মেয়ে ও এক ছেলে, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. কামাল হোসেনের এক মেয়ে, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিনের এক মেয়ে, সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেনের এক ছেলে, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোলের এক ছেলে ও এক মেয়ে, সংস্কৃতি সচিব মো. খলিল আহম্মেদের এক ছেলে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারের এক ছেলে ও এক মেয়ে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খানের এক ছেলে, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের এক ছেলে এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিনের এক মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন।
এ ছাড়া মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব ড. নাহিদ রশীদের এক মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। পররাষ্ট্র সচিবের এক মেয়ে কানাডায় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিবের এক ছেলে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিবের এক মেয়ে ভারতে আছেন।
কানাডায় বসবাস করছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খানের দুই ছেলে, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমানের এক মেয়ে। যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন নৌপরিবহন সচিব মো. মোস্তফা কামালের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) আবদুল বাকীর এক ছেলে স্ত্রীসহ নিউজিল্যান্ডে এবং পরিকল্পনা কমিশনের আরেক সদস্য (সচিব) এ কে এম ফজলুল হকের এক ছেলে ফিনল্যান্ডে পড়াশোনা করছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) নাসরীন আফরোজের এক ছেলে এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিনের এক ছেলে অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করছেন।
এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন রেলপথ সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীরের এক ছেলে, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সচিব ড. ফারহিনা আহমেদের এক ছেলে ও এক মেয়ে এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদ সচিব মো. মইনুল কবিরের এক মেয়ে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খানের এক ছেলে কানাডায় ও আরেক ছেলে পোল্যান্ডে আছেন।
উল্লেখ্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী জনপ্রশাসনে এখন ৮৭ জন সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা আছেন। তারা মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দপ্তরে দায়িত্ব পালন করছেন। তথ্য সূত্র আরটিভি নিউজ।