News update
  • Fire breaks out at jacket factory in Chattogram     |     
  • Dhaka, Delhi agree to bring down border killings to zero     |     
  • Natore’s Baraigram OC closed over negligence in bus robbery case     |     
  • Imported fruit prices surge by up to Tk 100 per kg     |     
  • 35% of air pollution in BD originates from external sources: Experts     |     

চট্টগ্রামের পূজা মণ্ডপে 'ইসলামী গান' পরিবেশন নিয়ে যা জানা যাচ্ছে

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক খবর 2024-10-11, 1:59pm

img_20241011_135932-aa32b435158b3d754c8e76756df3f21e1728633588.png




চট্টগ্রামের একটি পূজা মন্ডপের মঞ্চে ছয় জন যুবকের ইসলামী গান গাওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা তৈরি হয়।  

পূজা মণ্ডপে মঞ্চে 'ইসলামী গান' গাওয়ার ভিডিও ঘিরে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল আলোচনা-সমালোচনার জের ধরে দু'জনকে আটক করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে একটি ভিডিওর কিছু অংশ ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দেখা যায় একটি পূজা মণ্ডপে ছয়জন যুবক 'ইসলাম ধর্মের মাহাত্ম্য' প্রকাশ করে – এমন একটি গান গাইছেন।

মোবাইলে ধারণ করা প্রায় এক মিনিটের ভিডিওটিতে দেখা যায়, কোনো বাদ্যযন্ত্র ছাড়া মাইক হাতে নিয়ে ঐ ছয় যুবক পূজার স্টেজে গান গাইছেন।

ভিডিওতে গানের যে কয়েকটি লাইন শুনতে পাওয়া যাচ্ছিল সেগুলো ছিল ‘এসো সেই ইসলাম বুঝি, সত্য ন্যায়ের পথ খুঁজি, বিশ্ব মানুষের মুক্তির শেষ পথ, বিপ্লব ইসলামী বিপ্লব।’

পূজা মণ্ডপে ছিল চট্টগ্রাম শহরের রহমতগঞ্জ এলাকার জেএম সেন হলের মাঠে। চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন কমিটি এই পূজার আয়োজন করে বলে এটিকেই চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় পূজা মণ্ডপে হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ হওয়ার পরপরই তা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।

পূজা মণ্ডপে 'ইসলামী গান' গাওয়ার জন্য ঐ ছয় যুবকের সমালোচনা হতে থাকে, পাশাপাশি কীভাবে পূজা মন্ডপে তারা এই গান গাওয়ার সুযোগ পেলেন সেটিকে কেন্দ্র করে আয়োজকদের সমালোচনাও শুরু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা কী বলছেন?

বৃহস্পতিবার পূজা মণ্ডপে উপস্থিত থাকা ব্যক্তিরা জানান, সন্ধ্যা সাতটার কিছুক্ষণ পর কয়েকজন যুবক স্টেজে ওঠেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত একজন হিন্দু তরুণ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসি বাংলাকে বলেন, তারা স্টেজে উঠে যখন ইসলাম নিয়ে একটি গান গাওয়া শুরু করেন তখন উপস্থিত মানুষজন কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন।

“আমরা বেশ কয়েকজন বন্ধুবান্ধব সেখানে ছিলাম। আমরা কিছুটা অবাক হয়ে একজন আরেকজনকে জিজ্ঞেস করতে থাকি যে এই গান গাচ্ছে কেন, কারা গাচ্ছে? আশেপাশের মানুষজনকে দেখেও কিছুটা হতচকিত মনে হচ্ছিল”, বলেন সে তরুণ।

প্রথম গান শেষ করে তারা সুপরিচিত আরেকটি গান গায়। গান শেষে স্টেজ থেকে নামার আগে তাদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানায় অনুষ্ঠানের আয়োজকরা।

ঐ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা একজন সাংবাদিক বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের স্থানীয় কয়েকজন রাজনীতিবিদের অতিথি হিসেবে থাকার কথা ছিল।

চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য বিবিসি বাংলাকে জানান যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মন্ডপে ‘স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের’ আসাকে কেন্দ্র করে পূজা উদযাপন কমিটির সদস্যরা বেশ ব্যস্ত ছিলেন। সেই সময় ঐ ছয় যুবকের গান গাওয়ার ঘটনাটি ঘটে।

যেভাবে পূজার মন্ডপে 'ইসলামী গান'

আশীষ ভট্টাচার্য বিবিসি বাংলাকে জানান, পূজা মণ্ডপে যে ইসলামী গান গাওয়া হবে, সে বিষয়ে কমিটির সদস্যরা আগে থেকে কিছু জানতেন না।

মঞ্চে ওঠার আগে ঐ যুবকদের ‘চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি’র সদস্য হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। মি. ভট্টাচার্য বলছিলেন, সেদিন তাদের অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করার কথা ছিল না।

তবে আশীষ ভট্টাচার্য বিবিসি বাংলাকে বলেন, পূজা উদযাপন কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তের অনুমতি নিয়ে ঐ ছয় যুবক গান গাইতে মঞ্চে উঠেছিলেন।

“পূজার অনুষ্ঠানে কী গান গাওয়া হবে তা নিয়ে কয়েকমাস ধরে প্রস্তুতি নেয়া হয়। যে গান নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেটি অনুষ্ঠান সূচীতে ছিল না। ঐ সময় সজল দত্ত মঞ্চে ঐ যুবকদের গান গাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান বলে আমরা জানতে পেরেছি,” আশীষ ভট্টাচার্য।

“তিনি আমাদের কারো সাথে আলোচনা না করে একক সিদ্ধান্তে তাদের গান গাওয়ার সুযোগ দেন।”

তবে ঐ ঘটনার পর থেকে সজল দত্তের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে জানান মি. ভট্টাচার্য।

ঘটনাটি নিয়ে কথা বলার জন্য 'চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির' সাথে সম্পৃক্ত কোন ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি।

আলোচনা তৈরি হওয়ার পর বিভিন্নভাবে এটি প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমগুলোতে। চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সভাপতি সেলিম জামানের বরাত দিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করে যে প্রতিষ্ঠানটিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল পূজার অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য।

আবার কিছু গণমাধ্যমের খবরে বলা হয় যে ঐ যুবকরা সন্ধ্যায় উপস্থিত হয়ে সজল দত্তকে অনুরোধ করেন তাদের গান গাওয়ার সুযোগ দেয়ার জন্য।

তবে প্রকৃতপক্ষে ঠিক কী ঘটেছিল, তা নিশ্চিতভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সভাপতি সেলিম রেজার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

এমনকি পূজা উদযাপন কমিটিও বলছে যে ঘটনাটি সম্পর্কে তারা নিশ্চিতভাবে জানতে পারেনি।

মি. ভট্টাচার্য বলছিলেন, “আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে দেখছি যে সে (সজল দত্ত) তাদের গান গাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। কিন্তু আমরা তার সাথে কথা বলতে পারিনি। সন্ধ্যা থেকে তার ফোন বন্ধ আছে আর তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।”

“আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি যে সে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, না কি তারা এসে গান গাওয়ার অনুরোধ করেছে।”

প্রশাসন কী বলছে

এ বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে বৃহস্পতিবার রাতে পূজা মন্ডপে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেন কমিটির সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য।

মি. ভট্টাচার্য সে সময় পূজা উদযাপন কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তকে আজীবন বহিষ্কারের ঘোষণা দেন।

বিবিসি বাংলাকে তিনি জানান যে ‘দায়িত্বে অবহেলা’র দায়ে সজল দত্তকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটি।

এই ঘটনার জের ধরে রাতে জেএম সেন হলের পূজামন্ডপে বিক্ষোভ করে কয়েকশো হিন্দু ধর্মাবলম্বী। রাত প্রায় দুইটা পর্যন্ত জে এম সেন হলের পূজা মন্ডপের বাইরে চলে এই বিক্ষোভ।

সেসময় সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‍্যাবের সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন।

বৃহস্পতিবার রাতেই চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম জে এম সেন হলের পূজা মন্ডপে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেন।

সে সময় তিনি এই ঘটনার জন্য দু:খ প্রকাশ করেন এবং ’২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে’ দোষীদের আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দেন।

শুক্রবার দুপুরের মধ্যেই পুলিশ জানায়, যে ছয়জন গান পরিবেশন করেছিলেন তাদের দু'জনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, আটক দুইজনই স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষক।

দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার ক্রাইম অ্যান্ড অপারশন্স রইছ উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে, তারা পূজা উদযাপন কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তের আমন্ত্রণে গান পরিবেশন করতে গিয়েছিলেন।”

তবে এ বিষয়ে সজল দত্তের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে জানায় মি. রইছ উদ্দিন।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি। যাদের আটক করা হয়েছে তাদের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা বা তারা ‘অসৎ উদ্দেশ্যে’ এই কাজ করেছিলেন কি না তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।