News update
  • Bangladesh Faces $1.25 Billion Export Loss from US Tariffs     |     
  • Israel Expands Gaza Assault as UN Warns of ‘Genocide’     |     
  • World Ozone Day Highlights Progress and Future Action     |     
  • DG Health Services gives 12 directives to treat dengue cases     |     
  • Stock market shows recovery as investors back: DSE chairman     |     

চার প্রদেশ, নতুন বিভাগ, ডিসি-ইউএনও পদবি পরিবর্তনসহ সংস্কারে যত প্রস্তাব

বিবিসি বাংলা খবর 2025-02-05, 9:19pm

werewrewr-05c77217b94926d2894add0de821dade1738768799.jpg




পুরনো চারটি বিভাগের সীমানাকে চার প্রদেশে বিভক্ত করে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা চালু, কুমিল্লা ও ফরিদপুর নামে নতুন দুটি বিভাগ, 'নয়া দিল্লির মতো' কেন্দ্র শাসিত রাজধানী মহানগর সরকার গঠন করে প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে পুনর্বিন্যাসের জন্য সংস্কার প্রস্তাব করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।

এছাড়া, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদবি পরিবর্তন, জেলা পরিষদ বাতিল, উপজেলা পর্যায়ে একজন এএসপিকে 'জননিরাপত্তা অফিসার' হিসেবে নিয়োগ দেয়ার মতো সুপারিশও এনেছে কমিশন।

একটির বদলের তিনটি পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন এবং উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কোটা ৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫০ শতাংশে আনার মতো প্রস্তাবও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

বুধবার জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।

এরপর একটি নির্বাহী সারসংক্ষেপ গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

পদবি পরিবর্তন

'জেলা প্রশাসক' পদবি পরিবর্তন করে 'জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা কমিশনার' করার সুপারিশ করা হয়েছে।

ইংরেজিতে 'ডিসট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট' ও 'ডিসট্রিক্ট কমিশনার' হওয়ার সুবাদে সংক্ষিপ্ত রূপ 'ডিসি' অপরিবর্তিত থাকবে।

আর, 'উপজেলা নির্বাহী অফিসার' পদবি বদলে 'উপজেলা কমিশনার' করতে বলা হয়েছে।

ইংরেজিতে যা অভিহিত হবে সাব-ডিসট্রিক্ট কমিশনার বা এসডিসি হিসেবে।

এছাড়া, 'অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)' এর স্থলে 'অতিরিক্ত জেলা কমিশনার (ভূমি ব্যবস্থাপনা)' করা যেতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

ডিসি'র মামলা গ্রহণের ক্ষমতা

জেলা কমিশনারকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সি আর মামলা (নালিশি মামলা) প্রকৃতির অভিযোগগুলো গ্রহণের ক্ষমতা দেয়ার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।

বলা হয়েছে, "তিনি অভিযোগগুলো তদন্তের জন্য উপজেলার কোনো কর্মকর্তাকে বা সমাজের স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মাধ্যমে সালিশী বা তদন্ত করার নির্দেশ দিতে পারবেন। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হলে থানাকে মামলা গ্রহণের নির্দেশ দিতে পারবেন।"

পরবর্তীতে মামলাটি আদালতের বিচার প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।

এছাড়া, নিকাহ নিবন্ধন অফিসগুলোকে জেলা কমিশনারের অধীনে ন্যস্ত করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছে কমিশন।

উপজেলা পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট

উপজেলা পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট স্থাপনের সুপারিশ রয়েছে প্রতিবেদনে।

দেওয়ানি ও ফৌজদারি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট পুনঃস্থাপন করা হলে নাগরিকরা উপকৃত হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেছে কমিশন।

উপজেলা জননিরাপত্তা অফিসার

থানার অফিসার ইন চার্জ - ওসি'র কাজ ও সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষার তদারকির জন্য উপজেলা পর্যায়ে একজন সহকারী পুলিশ সুপারকে 'উপজেলা জননিরাপত্তা অফিসার' হিসেবে পদায়নের সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।

বলা হয়েছে, "এর ফলে থানার জবাবদিহিতা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।"

চার প্রদেশ, নতুন বিভাগ, রাজধানী সরকার

প্রাদেশিক ব্যবস্থা

দেশের জনসংখ্যা ও সরকারের কার্যপরিধির নিরিখে বর্তমান প্রশাসনিক ও স্থানীয় সরকার কাঠামো যথেষ্ট নয় বলে মত সংস্কার কমিশনের।

বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় তখন ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা এই চার বিভাগে বিভক্ত ছিল।

বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে পুরনো চার বিভাগের সীমানা ধরে চারটি প্রদেশ করে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করেছে কমিশন।

"এর ফলে এককেন্দ্রিক সরকারের পক্ষে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার সুযোগ হ্রাস পাবে। পাশাপাশি রাজধানী ঢাকা শহরের ওপর চাপ কমবে," এমনটিই বলা হয়েছে প্রস্তাবের নির্বাহী সারসংক্ষেপে।

নতুন দুই বিভাগ

প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে নতুন বিভাগ গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

অনেকদিন ধরেই কুমিল্লা ও ফরিদপুরে বিভাগ করার বিষয়ে আলোচনা চলে আসছে।

এর প্রতিফলন দেখা গেছে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবেও।

কুমিল্লা ও ফরিদপুর নামেই দু'টি নতুন বিভাগ গঠন করার সুপারিশ করেছে কমিশন।

রাজধানী মহানগর সরকার

বাংলাদেশের রাজধানী 'ঢাকা মহানগরীর জনসংখ্যা ও পরিষেবার ব্যাপ্তি'কে আমলে নিয়ে 'নয়া দিল্লির মতো ফেডারেল সরকার নিয়ন্ত্রিত ক্যাপিট্যাল সিটি গভর্নমেন্ট বা রাজধানী মহানগর সরকারের গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে।

"অন্যান্য প্রদেশের মতোই এখানেও নির্বাচিত আইনসভা ও স্থানীয় সরকার থাকবে। ঢাকা মহানগরী, টঙ্গী, কেরানীগঞ্জ, সাভার ও নারায়ণগঞ্জকে নিয়ে 'ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্ট' এর আয়তন নির্ধারণ করা যেতে পারে।"

এছাড়া, জেলা পরিষদ বাতিল ও উপজেলা পরিষদকে শক্তিশালী করতেও বেশ কিছু প্রস্তাব রয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রশাসনের সংস্কার

প্রশাসনে নানামাত্রিক সংস্কারের সুপারিশ করেছে কমিশন।

পাবলিক সার্ভিস কমিশন পুনর্গঠন

বর্তমানে ক্যাডার ও নন ক্যাডার সার্ভিসের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অধীনে।

তবে, সরকারকে দেওয়া প্রস্তাবে তিনটি পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।

ক্ষেত্রগুলো হলো - সাধারণ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য।

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পুনর্গঠন

সিভিল সার্ভিসের আওতায় 'একীভূত ক্যাডার সার্ভিস' এর বদলে 'কাজের ধরন ও বিশেষায়িত দক্ষতা' অনুযায়ী আলাদা নামকরণের সুপারিশ করা হয়েছে।

বলা হয়েছে, বর্তমানে চালু বিভিন্ন ক্যাডারকে ১২টি প্রধান সার্ভিসে বিন্যস্ত করা যেতে পারে।

আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সুপারিশ

উপসচিব পদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কোটা ৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫০ শতাংশে আনার প্রস্তাব আছে কমিশনের প্রতিবেদনে।

সচিব নিয়োগে মন্ত্রিসভা কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে সংস্কার কমিশন।

সিনিয়র সচিব পদটির পরিবর্তে মুখ্য সচিব পদ চালুর কথা বলেছে।

সুপারিশ করা হয়েছে, শূন্য পদ ব্যতীত পদোন্নতি না দিতে।

পদোন্নতির উপযুক্ত হয়েও কোনো কর্মকর্তা পদোন্নতি না পেলে দুই বছর পর পরবর্তী বেতন স্কেল দিতে বলা হয়েছে প্রস্তাবে।

নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে যাদের স্নাতক ও মাস্টার্স পরীক্ষায় কমপক্ষে ৩.৫ গ্রেড পয়েন্ট রয়েছে ও ১৫ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের উপসচিব পদোন্নতির পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া যেতে পারে বলেও সারসংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা হ্রাস

বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সংখ্যা কমিয়ে পুনর্বিন্যাসের সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।

বর্তমানে ৪৩টি মন্ত্রণালয় এবং ৬১টি বিভাগ রয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "মন্ত্রণালয়গুলোকে যুক্তিসঙ্গতভাবে হ্রাস করে কমিশন মোট ২৫টি মন্ত্রণালয় ও ৪০টি বিভাগে পুনর্বিন্যাস করার সুপারিশ করছে।"

মন্ত্রণালয়গুলোকে পাঁচটি গুচ্ছে বিভক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

এগুলো হলো:

বিধিবদ্ধ প্রশাসন

অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য

ভৌত অবকাঠামো ও যোগাযোগ

কৃষি ও পরিবেশ

মানব সম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন

প্রতিবেদনের পরিশিষ্টে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সরকার মনোনীত সদস্য শিক্ষার্থী প্রতিনিধি মেহেদী হাসানের একটি বিশেষ নোট সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

এতে তরুণ প্রজন্মের অনুভূতি ও আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে সার সংক্ষেপে।