US National Intelligence Director Tulsi Gabard. Source - BBC Bangla_11zon
বিবিসি নিউজ বাংলা, ১৮ মার্চ ২০২৫: বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও 'ইসলামি খেলাফত'কে কেন্দ্র করে মার্কিন ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে যে মন্তব্য করেছেন তার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।
গতকাল সোমবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "আমরা গভীর উদ্বেগ ও হতাশার সাথে তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্য লক্ষ্য করেছি। সেখানে তিনি বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর 'নিপীড়ন ও হত্যা' করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বলেছেন, 'ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীদের হুমকির' মধ্যে ইসলামি খেলাফতের মতাদর্শে দেশ শাসন করার 'আদর্শ ও উদ্দেশ্য নিহিত' আছে।"
তুলসী গ্যাবার্ডের করা এই মন্তব্য "বিভ্রান্তিকর" এবং "বাংলাদেশের সুনাম ও ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর" বলে উল্লেখ করেছে সরকার।
এতে বলা হয়েছে, "বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইসলাম চর্চার জন্য সুপরিচিত এবং চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে"।
বিবৃতিতে অন্তর্বর্তী সরকার দাবি করেছে, "গ্যাবার্ডের মন্তব্য সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ বা অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে করা হয়নি" বরং "পুরো জাতিকে মোটা দাগে ও অযৌক্তিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে"।
বিশ্বের অনেক দেশের মতো "বাংলাদেশও চরমপন্থার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে" বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সামাজিক সংস্কার এবং অন্যান্য সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই সমস্যা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে কাজ করছে বলেও বিবৃতিতে জানিয়েছে সরকার।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গ্যাবার্ডের মন্তব্যে "বাংলাদেশকে ইসলামি খেলাফতের সাথে ভিত্তিহীনভাবে যুক্ত করার অর্থ হলো বাংলাদেশের জনগণ, বিশ্বজুড়ে তাদের বন্ধু এবং অংশীদারদের কঠোর পরিশ্রমকে ছোট করে দেখা, যারা কিনা শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ"।
বাংলাদেশকে "ইসলামি খেলাফতের সঙ্গে যুক্ত করার যে কোনো প্রচেষ্টার" তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মন্তব্য করার আগে, বিশেষ করে সংবেদনশীল বিষয়ে কথা বলার আগে সেসব বিষয়ে সম্যক ধারণা রাখা উচিত বলে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
একইসাথে তাদের ক্ষতিকর গঁৎবাধা ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে ভীতিকর তথ্য না ছড়াতে এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উসকে দেয়ার মতো কোনো কিছু বলা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে সরকার।
অন্তর্বর্তী সরকারের দেয়া এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অভিন্ন বৈশ্বিক প্রচেষ্টাকে বাংলাদেশ সমর্থন করে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাস্তব তথ্য ও সকল দেশের সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তার প্রতি শ্রদ্ধার ভিত্তিতে গঠনমূলক সংলাপ অংশগ্রহণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
তিন দিনের ভারত সফরে গিয়ে সে দেশের টেলিভিশন চ্যানেল এনডিটিভি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড বাংলাদেশকে নিয়ে ওই মন্তব্য করেন।
গতকাল সোমবার তুলসী গ্যাবার্ডের ওই সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর পরই এই প্রতিবাদ জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এনডিটিভিকে বাংলাদেশ নিয়ে একটি প্রশ্নের জবাবে তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, "ইসলামি সন্ত্রাসবাদী'রা নানা দেশে 'ইসলামি খেলাফতে'র আদর্শে শাসনক্ষমতা হাতে নিতে চায়। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসন এই আদর্শকে পরাস্ত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
"ইসলামি সন্ত্রাসবাদে'র বিপদ বাংলাদেশকেও প্রভাবিত করছে" বলে ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া দ্বিতীয় আর একটি সাক্ষাৎকারেও মন্তব্য করেন তুলসী গ্যাবার্ড।
প্রায় দু'মাস আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার পর তার প্রশাসনের কোনো শীর্ষ কর্মকর্তা এই প্রথম বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশ্যে এত কঠোর মন্তব্য করলেন।
সংখ্যালঘু ইস্যুতে টুইট করেছিলেন ট্রাম্প
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে 'সংখ্যালঘু নির্যাতনের' ইস্যুতে টুইট করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গতকাল ৩১শে অক্টোবর বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী রাত ১১টায় পোস্ট করা সেই টুইটে তিনি সবাইকে হিন্দুদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব দীপাবলি'র শুভেচ্ছা জানান।
সেই বার্তায় লিখেন, বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর 'বর্বর' সহিংসতা চালানো হচ্ছে এবং তারা হামলা ও লুটপাটের শিকার হচ্ছেন।
এসবের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেছেন যে বাংলাদেশ একটি সম্পূর্ণ "বিশৃঙ্খল" অবস্থার মাঝে রয়েছে।
গত অগাস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পর থেকেই ভারত ক্রমাগত অভিযোগ করে আসছে যে, সে দেশে হিন্দু-সহ অন্য সংখ্যালঘুরা চরম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার তাদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছে।
মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এই সব অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করে এলেও তুলসী গ্যাবার্ড স্পষ্ট করে দিয়েছেন বর্তমান মার্কিন প্রশাসন সেই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয়।
'সদ্য দায়িত্ব নেওয়া' মার্কিন ক্যাবিনেটের সদস্যরা এই বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে শুরু করেছেন বলেও জানান মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান।
এনডিটিভি-র সঙ্গে সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে তুলসী গ্যাবার্ড নিজেই 'ইসলামি সন্ত্রাসবাদে'র প্রসঙ্গ টেনে বলেন, "আরও একবার ইসলামি সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বলব, সার্বিকভাবে তারা বিশ্ব জুড়ে যে চেষ্টাটা চালাচ্ছে … এক এক জায়গায় এক এক গোষ্ঠী, কিন্তু তাদের আদর্শ ও লক্ষ্যটা অভিন্ন … আর সেটা হল ইসলামি খেলাফতের আদর্শে দেশ শাসন করা।"
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদের শাসনকাল থেকেই ইসলামি জঙ্গিবাদকে পরাস্ত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং নতুন মেয়াদেও সেই ধারাবাহিকতাই অব্যাহত আছে বলে ওই সাক্ষাৎকারে জানান মিজ গ্যাবার্ড।
"দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ইসলামি জঙ্গিবাদের সরাসরি প্রভাব পড়েছে ও এখনও পড়ে চলেছে আমেরিকার মানুষের ওপর" বলেন মিস গ্যাবার্ড।
তিনি বলেন, "আমরা আরও দেখছি এর জন্য কীভাবে ভুগতে হচ্ছে ভারতকে, কীভাবে তা প্রভাব ফেলছে বাংলাদেশে। এখন তা সিরিয়াতে, ইসরায়েলে ও মধ্যপ্রাচ্যের আরও নানা দেশেই প্রভাব ফেলছে।"
কাজী মোস্তফা কামালঃ ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকার গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবারড ভারতের এক টি ভি সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর উথ্যানের সমালোচনা করেছেন এবং বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতন করা হচ্ছে।
গোয়েন্দা প্রধান তুলসী ইসলামিক খেলাফত প্রতিষ্ঠা কারিদের আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গী বা অনুসারি হিসেবে মন্তব্য করেছেন। প্রায় ১০/১২ দিন আগে হিজবুল তাহরি নামে একটি দল ইসলামিক খেলাফতের শ্লোগান ও ফেস্টুন ব্যনার নিয়ে বায়তুল মুকাররম মসজিদের সামনে সমাবেশ করতে গেলে সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কঠোর হস্তে দমন করে। তাছাড়া এ সংঘটনের অস্তিত্ব বাংলাদেশে খুবই ক্ষিন।
এমন অবস্থায় তাদের এই " ইসলামিক খেলাফত " প্রতিষ্ঠার শ্লোগান মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের কানে গেল কিভাবে, শুনেছি ভারত সরাকারের উচ্চ মহল সহ বিশিষ্ট গোয়েন্দা অজিত গোভাল তুলসীর সাথে সাক্ষাত করেছেন -তাহলে কি ধরে নিব এই সংঘটনটি আগে থেকেই জানত তুলসী ভারতে আসছে এবং তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে তুলসীকে আলোকপাত করা হবে!
অথচ ভারতে নিত্যদিন সংখ্যালঘুদের উপর হামলা হচ্ছে খুন হচ্ছে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ভারতের নিরীহ মুসলিমদের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে আসছে এবং তা হচ্ছে মোদী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়।