কক্সবাজারের রামু সহিংসতা'র ১৩ বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রামুর ১২টি বৌদ্ধ বিহার ও বৌদ্ধপল্লির ২৬টি ঘরে অগ্নিসংযোগ ও হামলা করে দুর্বৃত্তরা। পরদিন পুড়িয়ে দেয়া হয় উখিয়া-টেকনাফের আরো ৭টি বৌদ্ধ বিহার।
এ সহিংস ঘটনাকে স্মরণ করে রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ যুব পরিষদ, বুডিস্ট সোশ্যাল মুভমেন্টসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও ২৯ সেপ্টেম্বর দিনব্যাপী কর্মসূচী পালনের উদ্যোগ নিয়েছে।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে - বুদ্ধপূজা, জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, চিত্র প্রদর্শনী, অষ্টপরিস্কারসহ মহাসংঘদান, ধর্মালোচনা সভা, শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন, অতিথি ভোজন, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের শান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা।
স্মরণ সভায় দেশবরেণ্য পন্ডিত, প্রাজ্ঞ বৌদ্ধ ভিক্ষু ও নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন ২৯ সেপ্টেম্বর স্মরণসভা উদযাপন পরিষদ নেতৃবৃন্দ।
২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর উত্তম বড়ুয়া নামের এক বৌদ্ধ যুবকের ফেসবুকে পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে রামুর বৌদ্ধবিহার ও বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়।
ওই দিনের হামলায় কয়েকশ বছরের প্রাচীন ১২টি বৌদ্ধবিহার ও ২৬টি বসতঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়। এছাড়াও বৌদ্ধবিহার ও ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়িগুলোতে ব্যাপকভাবে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। পরদিন উখিয়া-টেকনাফের আরো ৭টি বৌদ্ধ বিহারেও অগ্নিসংযোগ, হামলা ও লুটপাট চালানো হয়।
রামু, উখিয়া ও টেকনাফে সহিংসতার ঘটনায় ১৯টি মামলা হয়। এতে এজাহারভুক্ত ৩৭৫ জনসহ ১৫ হাজার ১৮২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। পরে আপোসের ভিত্তিতে একটি মামলা প্রত্যাহার হলেও বাকি ১৮ মামলা সাক্ষীর অভাবে নিষ্পত্তি হয়নি এখনো। মামলার সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে না চাওয়ায় মামলা নিষ্পত্তিতে দেরি হচ্ছে বলে জানান কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
বুডিস্ট সোশ্যাল মুভমেন্ট এর সংগঠক অ্যাডভোকেট সিপ্ত বড়ুয়া জানান, শুধুমাত্র রামু'র বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন সাক্ষ্য দিচ্ছে না এই অজুহাতে হামলার ঘটনায় হয়া মামলাগুলো স্থবির হয়ে আছে। অথচ, রাষ্ট্র চাইলে সে সময়কার হামলার ঘটনায় ছবি-ভিডিও যাচাই করে সাক্ষ্য হিসেবে মান্য করে বিচার করা যায়।
বিচারহীনতার মধ্য দিয়ে জাতিগত জনগোষ্ঠী নিধনের যে সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো করে যাচ্ছে তারা আবারো হামলা করার পরিকল্পনার চাল চালবে তাতে কোনো সন্দেহ নাই।
কক্সবাজার বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি, রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের ভিক্ষু প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো বলেন, রামুর ধর্মীয় সম্প্রীতিতে যারা আঘাত হেনেছিল তারা সফল হয়নি। যে ক্ষতের তৈরি হয়েছিলো, ১২ বছরে আমরা সবাই মিলে তা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছি। তবে দুঃখের বিষয় হলো হামলার একযুগ পার হলেও ওই ঘটনার হামলাকারীদের পরিচয় এখনো অজানাই রয়ে গেছে।
স্থানীয় বৌদ্ধ নেতারা জানান, সহিংস ঘটনার পর তৎকালীন সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত বিহার গুলো বৌদ্ধদের চাহিদা মতো দৃষ্টিনন্দন ভাবে পুণ:নির্মাণ করে দিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলোও বিজিবির মাধ্যমে পুনঃনির্মাণ ও সংস্কার করে দেয়।
তারা জানান-বৌদ্ধ বিহার ও বসতিতে হামলা করে যারা রামুর হাজার বছরের সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চেয়েছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। ওই ঘটনায় বৌদ্ধদের মনে ক্ষতের সৃষ্টি হলেও সকল ধর্মের সচেতনতায় রামুতে আগের সম্প্রীতি অনেকটা ফিরে এসেছে। তবে দুঃখের বিষয় হলো হামলার এক যুগ পার হলেও ওই ঘটনার বিচার সম্পন্ন না হওয়ায় হামলাকারীদের পরিচয় এখনো অজানাই রয়ে গেছে।
এদিকে যার ফেসবুকে ছবি ট্যাগ করাকে কেন্দ্র করে এ সাম্প্রদায়িক হামলা সেই উত্তম বড়ুয়ার খোঁজ মিলেনি এখনও। মা, বাবা, স্ত্রী, সন্তানের সাথেও কোন যোগাযোগ নাই বলে জানান তারা। সময়।