News update
  • Bumper harvest of Jujube in Ramu Upazila     |     
  • Govt urged to offer scholarships to Palestinian students     |     
  • Caretaker Govt Review Hearing on Supreme Court Cause List     |     
  • Bangladesh Single Window to Launch by March: Lutfey Siddiqi     |     
  • UNRWA chief: Ceasefire is the start, not the solution     |     

জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে কি লাভ হলো?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক জ্বালানী 2024-04-06, 6:34pm

iweuweu-c6b92484f892835a7d11d586fb2f73301712406878.jpg




বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম কমার পর বাস ও মিনিবাস ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে তিন পয়সা করে কমানোর সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে বেশ আলোচনা।

পরিবহন মালিকরা বলছেন, দূরত্ব অনুযায়ী যাত্রীরা এর সুফল ভোগ করতে পারবে। ভাড়া কিছুটা হলেও কমবে বলে দাবি করছেন তারা।

তবে, এই ভাড়া কমানোতে যাত্রীদের উপর তেমন কোনো প্রভাবই পড়বে না বলে মনে করছেন যাত্রী অধিকার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে যে হারে ভাড়া বাড়ানো হয়, কিন্তু কমলে সেভাবে ভাড়া কমানো হয় না।

স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে প্রতিমাসে সমন্বয়ের অংশ হিসাবে গত ৩১শে মার্চ ডিজেল ও কেরোসিনে ২ টাকা ২৫ পয়সা কমানো হয়েছে। এর ফলে এই দুই জ্বালানির দাম হয়েছে ১০৬ টাকা।

দাম কমানোর পর বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সোমবার বাস, মিনিবাসের ভাড়া তিন পয়সা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। যা মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হয়েছে।

নতুন ভাড়া নির্ধারণ

স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে প্রতিমাসে সমন্বয়ের অংশ হিসাবে ৩১শে মার্চ ডিজেল ও কেরোসিনের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিআরটিএর বাস ভাড়া নির্ধারণ কমিটি বৈঠক করে ভাড়া কমানোর সুপারিশ করে।

ওই বৈঠক প্রতি কিলোমিটারে তিন পয়সা করে ভাড়া কমানোর সুপারিশ করে যা মঙ্গলবার থেকেই কার্যকর হয়েছে।

ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার রুটে বাস ও মিনিবাসে প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া হবে দুই টাকা ১২ পয়সা। যা আগে ছিল দুই টাকা ১৫ পয়সা। অর্থাৎ তিন পয়সা কমানো হয়েছে।

এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে দুই টাকা ৪২ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।

একইসাথে বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা এবং মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৮ টাকা বহাল রাখা হয়েছে।

যে ভাড়া কমানো হয়েছে তাতে ঢাকা মহানগরীর যাত্রীদের উপর তেমন একটা প্রভাব পড়বে না বলে জানান যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা।

তারা বলছেন, ঢাকার যেসব রুট রয়েছে বেশিরভাগ রুটের গন্তব্যের শুরু ও শেষ ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে। যাত্রীরা ও যাতায়াত করেন অল্প দূরত্বে।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, প্রতি কিলোমিটারে তিন পয়সা কমানো হলে ৩৩ কিলোমিটার যাতায়াতের পর ৯৯ পয়সা বা এক টাকা ভাড়া কমবে।

রাজধানীর মিরপুর থেকে সদরঘাট পর্যন্ত দূরত্ব ১৮ দশমিক ২ কিলোমিটার। এ দূরত্বে যাতায়াত করলে একজন যাত্রীর ৫৪ দশমিক ৬ পয়সা ভাড়া কমবে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ভাড়া কমানোতে যাত্রীর উপর কোনো প্রভাব পড়বে না। কোনো বাস কাউন্টারেই এ ধরনের ভাঙতি পয়সার প্রচলন নেই”।

তিনি বলেন, “অতীতে যখন বিভিন্ন সময় ভাড়া কমানো হয়েছিল, তখন কোনো যাত্রাপথে ছয় টাকা, পাঁচ টাকা বা তিন টাকার খুচরা ভাড়া থাকলে সেটাকে তারা একটা রাউন্ড ফিগারে আদায় করে নেয়। তারা খুচরা এ টাকা কোনো হিসাবের মধ্যে নিয়ে আসেন না। যাত্রীরা এই টাকা কম দেয়ার সুযোগ পায় না ”।

ফলে অতীতে বিভিন্ন সময় ভাড়া কমালেও বাসে ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রে কার্যকর করা যায়নি বলে জানান মি. চৌধুরী।

“এবারও এই ভাড়া কার্যকর করা যাবে এমনটি মনে হয় না,” বলেন মি. চৌধুরী।

সাধারণ মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলে এমনভাবে তেলের দাম কমিয়ে গণ-পরিবহনের ভাড়া কমাতে সরকারের প্রতি তিনি আহবান জানান।

যাত্রীরা যা বলছেন

ঢাকার মিরপুর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত বাসে যাতায়াত করেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের চাকুরিজীবী নাজিয়া শারমিন।

তিনি বলেন, “মিরপুর ১২ থেকে তিব্বত পর্যন্ত ভাড়া প্রথমে ২০ টাকা ছিল। যখন তেলের দাম বাড়ায় তখন ভাড়া একবারে ২৫ টাকা করে ফেলে বাস মালিকরা। পরে তেলের দাম কমলে ও কিন্তু ওই ভাড়া কমানো হয়নি”

“আবার যেসব রুট অনুযায়ী ২৩ টাকা ভাড়া হয় সেখানে তারা কখনোই ভাঙতি টাকা দেয় না। দূরপাল্লার রুটে ভাড়া নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয়,” বলেন মিজ শারমিন।

এবারও যত ক্ষুদ্র অংকের ভাড়াই কমানো হোক না কেন তাতে যাত্রীদের উপর কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এই তিন পয়সা ভাড়া কমানোর বিষয়টি নিয়ে অনেকেই ব্যঙ্গ করে লিখছেন।

“যে দেশে দুই টাকার নিচে চকলেট পাওয়া যায় না, সেদেশে বাস ভাড়া তিন পয়সা কমানো, এটা পুরাই আসলে হাস্যকর,” ফেসবুকে এভাবেই কিলোমিটার প্রতি বাস ভাড়া তিন পয়সা কমানো নিয়ে মন্তব্য করেছেন ইয়াসিন মুন্সি নামে এক ব্যক্তি।

আমরিন শেখ নামে একজন স্ট্যাটাস দিয়েছেন, “এই তিন পয়সা দিয়ে আমি গুলশানে একটা বাড়ি কিনবো আর একটা রোলস রয়েস কিনবো। আর আপনি?”

এর আগে ২০১০ সালে বাস ভাড়া পাঁচ পয়সা এবং ২০১৬ সালে তিন পয়সা করে কমানো হয়েছিলো। কিন্তু পরিবহন সংশ্লিষ্টরা ওই সময় ভাড়া কমায়নি।

এরপর ২০২২ সালেও পাঁচ পয়সা ভাড়া কমানো হয়েছিলো। কিন্তু যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রে পরিবহন মালিক - শ্রমিকরা এসব বিবেচনা করে না।

এরই মধ্যে প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদের যাত্রায় বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

বাড়তি ভাড়া দিয়ে ঢাকার গাবতলী থেকে ঝিনাইদহের বাসের টিকেট কাটতে বাধ্য হন বেসরকারি চাকরিজীবী আজমল হোসেন।

তিনি জানান, “ঢাকা থেকে ঝিনাইদহ আগে ভাড়া ছিল বারশ টাকা। কিন্তু এখন ঈদের সময় ভাড়া বাড়িয়ে আঠারশ টাকা করা হয়েছে। যদি তিন পয়সাও কমায় সেটার তো কোনো লক্ষণই নাই। উল্টো বাড়তি দিতে হয় আমাদের” ।

পরিবহন মালিকরা যা বলছেন

বাংলাদেশে ২০২১ সালে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়।

পরের বছর আবারো ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৩৪ টাকা বৃদ্ধি করে সরকার। ফলে ডিজেলের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১১৪ টাকা।

একবারে প্রায় ৫০ শতাংশ দাম বাড়ানোকে সে সময় বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে উল্লেখ করে সরকার। ফলে জ্বালানি তেলের এমন নজিরবিহীন দাম বৃদ্ধির কারণে বাস ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া হয়।

এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার পর সরকার এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে মূল্য নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়।

আন্তর্জাতিক বাজারদরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রাইসিং ফর্মুলা অনুসারে ৩১শে মার্চ জ্বালানি তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের বর্তমান দাম ১০৮ টাকা ২৫ পয়সা থেকে কমিয়ে ১০৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ দুই টাকা ২৫ পয়সা কমানো হয়েছে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাস, মিনিবাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে তিন পয়সা ভাড়া কমিয়েছে বিআরটিএ ।

পরিবহন মালিকরা বলছেন, সরকার যখন এক লাফে ডিজেলের দাম বাড়ায় তখন পরিবহন শিল্পে ধস নামে। সে সময় বাস ভাড়া বাড়ানো হয়।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হোসাইন আহমেদ মজুমদার বিবিসি বাংলাকে বলেন, “সরকার একরকম মস্করার মতো করে এবার প্রথম দফায় ৭৫ পয়সা, পরে দুই টাকা ২৫ পয়সা দাম কমায়। ৩৪ টাকা বৃদ্ধির পরে তিন টাকা কমানোটা বৈষম্যের মতো”।

তবুও আন্তর্জাতিক বাজারের উপর সমন্বয় করে ডিজেলের দাম কমানোতে একে সাধুবাদ জানাচ্ছেন তারা।

একইসাথে যে ভাড়া কমানো হচ্ছে তাতে দূরপাল্লার যাত্রীরা এর সুফল ভোগ করবেন বলে মনে করছেন পরিবহন মালিকরা।

মি. মজুমদার বলেন, “ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব ২৩০ কিলোমিটার হলে সাড়ে সাত টাকা থেকে আট টাকা ভাড়া কমতে পারে”।

আর চট্টগ্রাম শহরের ভেতরে গেলে দূরত্ব ২৪০ কিলোমিটার হবে কিন্তু ভাড়া ১০ টাকার কমবে না বলেও তিনি জানান।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হোসাইন আহমেদ মজুমদার বিবিসি বাংলাকে বলেন, “সরকার একরকম মস্করার মতো করে এবার প্রথম দফায় ৭৫ পয়সা, পরে দুই টাকা ২৫ পয়সা দাম কমায়। ৩৪ টাকা বৃদ্ধির পরে তিন টাকা কমানোটা বৈষম্যের মতো”।

তবুও আন্তর্জাতিক বাজারের উপর সমন্বয় করে ডিজেলের দাম কমানোতে একে সাধুবাদ জানাচ্ছেন তারা।

একইসাথে যে ভাড়া কমানো হচ্ছে তাতে দূরপাল্লার যাত্রীরা এর সুফল ভোগ করবেন বলে মনে করছেন পরিবহন মালিকরা।

মি. মজুমদার বলেন, “ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব ২৩০ কিলোমিটার হলে সাড়ে সাত টাকা থেকে আট টাকা ভাড়া কমতে পারে”।

আর চট্টগ্রাম শহরের ভেতরে গেলে দূরত্ব ২৪০ কিলোমিটার হবে কিন্তু ভাড়া ১০ টাকার বেশি বাড়বে না বলেও তিনি জানান।

তবে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ক্যাবের উপদেষ্টা এবং জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম মনে করেন, গণপরিবহনের জন্য যে তিন পয়সা ভাড়া কমানো হয়েছে তাতে জনগণ কোনো সুবিধা পাবে না, বরং পরিবহন মালিকরাই সুবিধা পাবে। বিবিসি বাংলা