[ মাশান চিত্রকলায় দুর্গা প্রতিমা । ছবিঃ সংগৃহীত ]
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার কালীঘাটের নিকটবর্তী ৯৭ বছরের বকুলবাগান পূজা কমিটি এবার রাজবংশী সম্প্রদায়ের মাশান চিত্রকলাকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার করেছে।
ভারতের জলপাইগুড়ি শহরের সেনপাড়ার শিল্পী মধুসুদন দাস এই মাশান চিত্রকলাকে ব্যবহার করেছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
[ শিল্পী মধুসুদন দাসের (বাম থেকে তৃতীয়) বকুলবাগানের মণ্ডপসজ্জার কাজ দেখে এখন মাশান শিল্পকলা নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। ছবিঃ সংগৃহীত ]
উল্লেখ্য, শিল্পী মধুসুদন মাশান চিত্রকলা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস, লন্ডন, এবং আমেরিকার নিউ ইয়র্ক সহ বিভিন্ন দেশে তাঁর মাশান চিত্রকলা নিয়ে প্রদর্শনী হয়েছে।
শোলার উপরে মাশান চিত্রকলা আঁকা হয় বলে জানান শিল্পী মধুসুদন। বকুলবাগানের পূজায় ৪০ ফুট উচ্চতা এবং ৭০ ফুট লম্বা মণ্ডপে মাটির দেওয়ালে মাশান চিত্রকলা থাকছে। দুর্গা প্রতিমার সামনেও মাশান চিত্রকলা থাকছে।
শিল্পী মধুসূদন দাস আরো বলেন, 'আমি ২০ বছর আগে থেকে প্রথম শিল্পী হিসেবে মাশান শিল্প নিয়ে গবেষণা করছি। এই গবেষণার জন্য ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে ইতিমধ্যে আমি সিনিয়র ফেলোশিপ পেয়েছি। গবেষণার মাধ্যম মাশান শিল্পকে এবার প্রথম পূজা প্যান্ডেলে ব্যাবহার করা হল। এজন্য আমি শিল্পী অদিতি চক্রবর্তীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তিনি আমার কাজ ফেসবুকে দেখে আমার সাথে যোগাযোগ করেন। এরপরে তিনি আমার কাছে মাশানের ইতিহাস জেনেছেন। আমার সহযোগিতা নিয়ে এই শিল্প কর্মকে মন্ডপ সজ্জা ও প্রতিমাতে প্রকাশ করেছেন। আর কোচবিহারের বড়বাড়ির আদলে ও মাশান শিল্পকে অবলম্বন করে আমার সঙ্গে আলোচনা করে অসাধারণ প্রতিমায় রুপ দিয়েছেন শিল্পী হ্যালি গোস্বামী। বকুলবাগান পূজা কমিঠির সুমন ভট্টাচার্য, সুধীর দাস, গৌরব দত্ত, রাম কুমার দে, সজ্ঞীব ঘোষ, কিসান সিং, সন্দীপ বসু, জ্যোতির্ময় ব্যানার্জী, সুকদেব রাও ও রোহিত বাসু সহ সকল সদস্যবৃন্দ সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন এই পূজাকে সাফল্যমন্ডিত করার জন্য।'
জলপাইগুড়ি জেলার গৌরীহাট, রাজগঞ্জ, বেলাকোবা সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে স্থানীয় শিল্পীদের কাছ থেকে মাশান চিত্রকলা সংগ্রহ করেছেন মধুসূদন। সেই চিত্রকলাগুলিও স্থান পাচ্ছে মণ্ডপে।
উত্তরবঙ্গের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ হল রাজবংশী। কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা জেলাতে রয়েছেন রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষ।রোগব্যাধির হাত থেকে মুক্তি পেতে মাশান চিত্রকলার পূজা সাহায্য করে বলেই তাঁদের বিশ্বাস।
মধুসুদনের পাশাপাশি সহযোগী শিল্পীরাও বাড়তি উৎসাহ নিয়ে বকুলতলা পূজা কমিটির মণ্ডপসজ্জার কাজ করেছেন। বকুলতলা পূজা কমিটি প্রতি বছরের মতো এবারেও মাশান চিত্রকলার সুবাদে সবাইকে আনন্দ দেবে বলে প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মহা ষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে আগামী বুধবার (৯ অক্টোবর) শুরু হচ্ছে দুর্গাপূজা। রবিবার (১৩ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে উৎসব।