পরীক্ষার আগেই এইচএসসির প্রশ্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় বিকল্প সেটে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোর্ড। তবে এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটার পেছেনে প্রশ্ন সংরক্ষণে উদাসীনতা ও অপরাধীদের শাস্তি না হওয়াকে দায়ী করছেন শিক্ষাবিদরা। আর ঝুঁকি এড়াতে প্রশ্ন সংরক্ষণ ও পরীক্ষা ব্যবস্থাপনায় সেনাবাহিনীর সহায়তা নেয়ার পরামর্শ বিশ্লেষকদের।
সম্প্রতি নওগাঁয় থানা হেফাজতে থাকা আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকেই পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ও আনুষাঙ্গিক সরঞ্জামাদির নিরাপত্তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা সমালোচনা। এর আগেও ২০২২ সালে কুড়িগ্রামে এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে সংশ্লিষ্ট দিনের প্রশ্নের পাশাপাশি পরবর্তী দিনের পরীক্ষার প্রশ্নও লকার থেকে বের করার ঘটনা ঘটেছে।
বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় কমিটি বলছে, প্রশ্নফাঁসের এ ঘটনায় বোর্ডের কোনো গাফিলতি নেই। থানায় মালখানার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের অবহেলায় ঘটতে পারে এই ঘটনা। তবে একটি বিষয়ে প্রশ্নের একাধিক সেট ছাপানো থাকে। তাই কোনো বোর্ডে এ ধরনের সমস্যা হলেও বিকল্প সেট দিয়ে পূর্ব নির্ধারিত তারিখেই সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা নেয়া যাবে বলে জানিয়েছেন কমিটির সভাপতি ড. খন্দোকার এহসানুল কবীর।
তিনি বলেন, এটি কেন, কীভাবে হলো-- এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন আসলে বিস্তারিত জানতে পারবো। আমাদের কাছে একাধিক সেট আছে। সেগুলো দিয়ে আমরা পরীক্ষা চালাতে পারবো। পরীক্ষা নিয়ে কোনো জটিলতা তৈরি হবে না।
কী কারণে ঘটেছে এমন ঘটনা? এ প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, শিক্ষা- বিশেষত লাখ লাখ পরীক্ষার্থীর সঙ্গে সম্পৃক্ত পাবলিক পরীক্ষা নিয়ে উদাসীনতাই এর পেছনে দায়ী। এছাড়া এ সংক্রান্ত অপরাধে জড়িতদের উল্লেখযোগ্য কোনো শাস্তি না হওয়ায় বারবার একই ঘটনা ঘটছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মজিবুর রহমান বলেন, ‘মনোযোগের অভাব, গুরুত্বহীনতা এবং শিক্ষাখাতকে অবহেলার ফলে এসব হচ্ছে। এ বিষয়ে গুরুত্ব না দেয়া পর্যন্ত এগুলো এমনই থাকবে!’
আর বর্তমান পরিস্থিতিতে সামনের পরীক্ষাগুলোতেও এমন ঝুঁকি থাকতে পারে, তাই আপদকালের জন্য প্রশ্নসহ পরীক্ষার সরঞ্জামাদির নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে-এমন পরামর্শ দিয়েছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা।
অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, আমরা একটা আপদকালীন সময় বলি বা নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে একটা সংকট আছে, পুলিশ নিজেরাও নিরাপত্তা সংকটের মধ্যে আছে বা ঝুঁকিতে আছে। তাই এ সময়টাতে পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সংরক্ষণ, বিতরণ কিংবা এ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সেনাবাহিনীকে আমরা সম্পৃক্ত করতে পারি।
আগামী বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) থেকে শুরু হচ্ছে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা।