News update
  • IAEA Chief Calls for Renewed Commitment to Non-Proliferation     |     
  • UN Aid Chief Warns Humanitarian Work Faces Collapse     |     
  • Arab-Islamic Summit yields limited action over Israeli strike on Doha     |     
  • National Consensus Commission term extended till October 15     |     
  • EU Helping BD prepare for free, fair elections: Envoy Miller     |     

লিবিয়ায় চার বাংলাদেশিকে অপহরণের অভিযোগ, ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক প্রবাস 2024-06-09, 12:51am

lkdjkljaoifak-95a64d0403c9fe81f3690952b329d8ea1717872680.jpg




লিবিয়া প্রবাসী চার বাংলাদেশি যুবককে অপহরণের পর পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে। টাকা চেয়ে লিবিয়া থেকে যারা ফোন করছে কথাবার্তা শুনে তাদেরও বাংলাদেশি বলেই মনে হয়েছে ভুক্তভোগীদের পরিবারের।

বিবিসি বাংলাকে তারা জানিয়েছেন, গত শনিবার লিবিয়ার বেনগাজি থেকে ওই চারজনকে অপহরণ করা হয়। পরদিন পরিবারকে ফোন করে মুক্তিপণের কথা জানায় অপহরণকারীরা।

হাত-পা বেঁধে শারীরিক নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে তারা হুমকি দিচ্ছে, রোববারের মধ্যে চারজনের জন্য ৪০ লাখ টাকা না পেলে তাদের মেরে ফেলা হবে।

অপহৃতদের বাড়ি বাংলাদেশের নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলায়।

এ ঘটনায় এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো অভিযোগ বা মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. উজ্জ্বল হোসেন। তবে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

অপহরণের ব্যাপারে ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে এখনো কোনো তথ্য নেই।

তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে জানান, বিভিন্ন অপহরণকারী চক্রের সাথে লিবিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও কেউ কেউ জড়িয়ে পড়েছেন বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে।

নির্যাতনের বর্ণনা

গত রোববার ভোর ৬ টার দিকে লিবিয়া থেকে স্বামী নাজিম আলীর ফোনকল পান নাদিরা বেগম।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, মি. নাজিম ফোনে জানান, তাকে কে বা কারা ধরে নিয়ে এসেছে, মারধর করছে এবং টাকা দাবি করেছে।

সেই টাকার অংক ১০ লাখ। এরপর থেকে প্রতিদিনই টাকার তাগাদা আর হুমকি নিয়ে ফোন আসছে। একই রকম ফোন পায় সোহান প্রামাণিকের পরিবারও।

"এক রুমের মধ্যে আটকায়ে রাখছে, হাত পা বাধা, মুখে কাপড় বাধা, মারতেছে আর সময়ে সময়ে ভিডিও পাঠাচ্ছে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি. সোহানের চাচাতো ভাই মো. হাদিস ইসলাম।

হাদিস ইসলাম বলেন, কথা শুনে মনে হচ্ছে অপহরণকারীরা খুলনা-বরিশাল অঞ্চলের লোক।

তাদের লিবিয়ান দিনারে মুক্তিপণের কিছু অর্থ দেয়ার প্রস্তাব করা হলেও রাজি হয়নি বলে জানান মি. ইসলাম। বরং তারা বাংলাদেশি টাকা চায় এবং বাংলাদেশের একটি ব্যাংকের নাম জানিয়েছে। যদিও এখনো কোনো অ্যাকাউন্ট নাম্বার সরবরাহ করেনি।

টাকা দেয়ার পর কোনো "ভেজাল না বাধানোর" হুঁশিয়ারিও দিয়েছে তারা।

কিন্তু, পরিবারের অর্থনীতির চাকা সচল করতে ধার-দেনা করে সন্তানকে বিদেশ পাঠানোর পর এতো বিপুল অর্থের যোগান দেয়া অসম্ভব, বলছেন স্বজনরা।

এদিকে, নির্যাতনের ভিডিও দেখে পরিবারের সদস্যরা মুষড়ে পড়েছেন।

সোহানের মা দুলি বেগম বলছিলেন, "জোর করে দেখিছি। দেখে ঠিক থাকতে পারতেছি না।সরকারের কাছে দাবি, উদ্ধার করে আমার সন্তানরে আমার কাছে পাঠায়ে দিক।"

নির্যাতনের মাত্রা প্রতিদিন বাড়তে থাকবে, স্বজনদের এমন ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আর টাকা দিতে না পারলে মেরে লাশ পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে অপহরণকারীরা।

দূতাবাস কী বলছে?

জিম্মি চার জন গুরুদাস উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। সম্পর্কে একে অন্যের আত্মীয়ও হন তারা। নাজিম, সোহান ছাড়া অপর দুই যুবক হলেন মোঃ সাগর হোসেন ও মোঃ বিদ্যুৎ হোসেন।

সোহান ও সাগর দুই বছর যাবৎ লিবিয়ায় বিভিন্ন কাজে শ্রমিক হিসাবে নিয়োজিত ছিলেন। বিদ্যুৎ আর নাজিম যান দুই মাস আগে। তারা বেনগাজি থেকে 'অপহৃত' হয়েছেন বলে পরিবার অভিযোগ করছে।

এই এলাকাটি খলিফা হাফতারের নিয়ন্ত্রণে বলে জানান বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা।

খলিফা হাফতার অন্যতম প্রভাবশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির কমান্ডার। বেনগাজি-সহ লিবিয়ার পূর্বাঞ্চল তার নিয়ন্ত্রণে।

চার বাংলাদেশি অপহরণ সম্পর্কে এখনো কোনো তথ্য পাননি দূতাবাসের কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, তারা বলছেন, ঘটনার বিস্তারিত এবং অবস্থান সম্পর্কে না জানলে পদক্ষেপ নেয়া বেশ কঠিন। কারণ লিবিয়ায় আইনশৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই।

যেভাবে জড়ায় বাংলাদেশিরা

লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের অপহরণের ঘটনা নতুন নয়। এর আগে ২০২০ সালে দেশটিতে ২৬ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করে অপহরণকারীরা। তাদেরকে মানবপাচারকারী চক্রের কাছ থেকে অপহরণ করা হয়েছিল।

হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া একজন আহত বাংলাদেশি নাগরিকের বয়ানের ভিত্তিতে লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের তৎকালীন শ্রম বিষয়ক কাউন্সিলর আশরাফুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছিলেন, যুদ্ধকবলিত লিবিয়ায় একাধিক সরকার থাকায় প্রচলিত পথে নানা রকম তল্লাশি হয়।

পাচারকারীরা সেই পথ এড়িয়ে কম ব্যবহৃত মরুভূমির মধ্যকার রাস্তা দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের কবলে পড়ে।

বর্তমানে ত্রিপোলির বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত এক কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলেন, মিলিশিয়াদের (সশস্ত্র গোষ্ঠী) সাথে লিবিয়ার বাংলাদেশিদের কারো কারো সংশ্লিষ্টতা আছে।

"মিলিশিয়ারা রাস্তা থেকে বা সাগর থেকে কোনো বাংলাদেশিকে ধরলে কিছু টাকার বিনিময়ে দিয়ে দেয় সেই বাংলাদেশি চক্রের কাছে।"

"বাংলাদেশিরাই টর্চার করে এবং মুক্তিপণ আদায় করে," যোগ করেন তিনি।

লিবিয়ার পরিস্থিতি

২০১১ সালে পশ্চিমা সমর্থিত বিদ্রোহীদের হাতে কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন হওয়ার পর থেকে লিবিয়ায় চলছে সীমাহীন নৈরাজ্য এবং অরাজকতা।

লিবিয়ায় নানা মত ও পথের অসংখ্য সশস্ত্র মিলিশিয়া বাহিনী তৎপর। দেশের পূর্বে এবং পশ্চিমে রয়েছে দুটো ভিন্ন রাজনৈতিক শাসন কেন্দ্র।

কিছু মিলিশিয়া দল পূর্বের রাজনৈতিক নেতৃত্বের অনুগত, কিছু আবার সমর্থন করে পশ্চিমের অর্থাৎ ত্রিপলি নিয়ন্ত্রণকারী প্রশাসনকে।

লিবিয়াতে এখন যার হাতে যত বেশি অস্ত্র , তার শক্তি এবং প্রভাবও তত বেশি। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন লিবিয়া এখন অস্ত্রের বাজারে পরিণত হয়েছে।

আর অস্ত্রের সহজলভ্যতার কারণে পুরো দেশেই বিভিন্ন পন্থী ছোট ছোট মিলিশিয়া গ্রুপ তৈরি হয়েছে। বিবিসি বাংলা