News update
  • NIDs of Sheikh Hasina and Family Locked by EC      |     
  • Rains likely across Bangladesh Monday     |     
  • Dhaka seeks duty-free access for key exports to US     |     
  • Dhaka’s air against worst in the world on Sunday     |     
  • 14-year-old Vaibhav Suryavanshi youngest ever IPL cricketer     |     

মায়ের অকৃত্তিম স্নেহ

প্রবাস 2025-04-21, 12:28pm

nazrul-islam-enayetpur-d535aa1c26118458cd6080737a9f5aca1745216896.jpg

Nazrul Islam



ক) ১৯৯২, মাকে হারিয়েছি সে অনেক দিন হলো। কিন্তু মায়ের সঙ্গে আমার কিছু স্মৃতি আজ ও মনে পড়ে। যখনই একা থাকি,মায়ের সে সব পুরানো স্মৃতি স্বরণ করি। ১৯৭২-৭৩, সকাল ৫-৬ টার দিকে বাড়ি থেকে বের হবো; বাড়ি থেকে ৩ মাইল হেঁটে মাছুয়াখাল গিয়ে লঞ্চ ধরে নারায়ণগঞ্জ পৌঁছে বাসে ঢাকা গিয়ে অফিস করবো।

এক ঘন্টার মধ্যে আমাকে লঞ্চ ঘাটে পৌঁছতেই হবে, ৭টার লঞ্চ কোনোক্রমেই মিস করা যাবে না। মাকে রাতে ঘুমানোর আগে যতই বলি, “মা! তুমি আমরা জন্য কিছুই রান্না করবে না। এত ভোরে খাবার রুচি হয় না,তাছাড়া এত জোরে হাঁটি , খালি পেটে হাঁটতে ভালো লাগে।“ কিন্তু মা কিছুই শুনবে না, আমার জন্য রাতে নারিকেলের পিঠা, আরও কত রকমের পিঠা এবং মাছ ভাজি করে গরম ভাত না খাইয়ে দেবে না। যতই রাগ করে বলি খেতে ইচ্ছে করছে না,তবু জোর করবে “এই কৈ মাছ তোমার জন্য ভাজি করেছি, এই পিঠা তোমার জন্য, একটু খেয়ে যাও“।

আমি জোরে হাঁটতে থাকি, কিছুদূর হেঁটে পিছন ফিরে দেখি মা তখনও দাঁড়িয়ে আমার দিকে চেয়ে আছে। গ্রামের মেঠো পথ ধরে জোরে হেঁটে চলছি -সামনে দোজানা, পথেপুর, তুলপাই, বোয়ালজুড়ি খাল; পথ যেন আর শেষ হয় না, ডানে মেহরণ (দালাল বাড়ি), মনে পড়ে আমার এক সময়ের বন্ধু- লব, এক সঙ্গে মতলব স্কুলের মাস্টারি জীবনের কিছু স্মৃতি, তার মা খুব আদর করে নারিকেল মুড়ি খাওয়াতো,সে সব কথা ভাবছি আর হাঁটছি; সামনে নারায়ণপুর বাজার এক সময় এই বাজারে বাড়ি যাওয়া- আসার পথে চায়ের আড্ডা, ভাবতে ভাবতে কখন যে চলেই এলাম লঞ্চ ঘাটে।

খ) শিশু যেমন মাবাবার সেবা-সুশ্রষা ব্যতীত থাকতে পারে না, তেমনি বার্ধক্য বয়সে ও প্রতিটি পুরুষ বা মহিলা অসহায় এবং পরের উপর নির্ভর করতে হয়। বার্ধক্য বয়সে শারীরিক সমস্যা শ্রবণশক্তি হ্রাস, মানসিক চাপ, উচ্চ রক্তচাপ,ডায়াবেটিস, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, থাইরয়েড, স্ট্রোক বা আলঝাইমার, চলাফেরা ও চোখের সমস্যা এবং জীবনের অতৃপ্ত হতাশার মতো আরও কত কি সমস্যা থাকে। আমাদের ৮০% লোক গ্রামেগঞ্জে খেতখামারে কাজ করে অবসর নিয়ে থাকে। এরা বৃদ্ধ বয়সে খালিহাতে ঘরে ফিরে। অনেকেই শেষ বয়সে প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাত হয়ে বৎসরের পর বৎসর বিছানায় পড়ে থাকে। তাছাড়া মেয়ে বিয়ে দেয়া হয় নি, যৌতুক দিতে হবে, ছেলে বেকার আরও কত কি ঝামেলা। আর্থিক সমস্যার কারণে একটু ভালো খাওয়া দাওয়া ,ডাক্তারের নাম নিলে হাজার হাজার থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা দরকার হয়ে পড়ে। এ সব লোক বৃদ্ধ বয়সে কতখানি অসহায়, তা বলে শেষ করা যাবে না।

গ ) আলো আর অন্ধকার মিলিয়ে দিবস। দিবসের আলোতে মানুষ হরেক রকমের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে; রাতের অন্ধকারে প্রয়োজন বিশ্রাম, একটু শান্তি এবং এই রাত কেউ নিজের জীবন সঙ্গী, ছেলেমেয়ে নিয়ে শান্তিতে ঘুমায় ,কেউ এই রাতের কিছু অংশ পড়াশুনা বা ইশ্বর বা আল্লাহর ধ্যানে অতিবাহিত করে, কেউ নিঃস্বঙ্গ জীবন নিয়ে হায়হুতাস করে, কেউবা রাস্তায় অনাহারে, অনাদরে পড়ে থাকে-এর-ই নাম জীবন ।

মানুষের জীবনে- আলো-অন্ধকার,জয়-পরাজয়, হাসি -কান্না দুটি দিক-ই থাকে। জীবনে সাফল্যের পেছনে ব্যর্থতা থাকে - এটাই চিরাচরিত নিয়ম। কেউ তার ব্যর্থতার কথা অন্যের নিকট বলে, কেউ না বলে নীরবে চোখের পানি বা জল ফেলে। আবার কিছু মানুষ সোনার চামচ নিয়ে দুনিয়াতে জন্ম নেয়, তারা সারা জীবন আরাম আয়েশে, সুখে কাটায় যেমন রাজ-রাজাদের কাহিনী সবাই শুনে থাকবেন, তাদের ছেলেমেয়েদের কিছুই

ভাবতে হয় না।

আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের জীবনে ছিল সবটুকুই দুঃখ ভরা, সমস্যা। বাংলার বিশিষ্ট কবি জীবনান্দ দাস “আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে ... “ আর্থিক দুরবস্থায় জর্জরিত ছিলেন, ৫৫ বৎসর বয়সে ট্রামের নিচে পড়ে মারা যান। তাঁর মৃত্যু নিয়ে ও নানা জনের নানা প্রশ্ন করেন। “শত শত আঘাতের পরেও মুখে হাসি রেখে পথ চলার নামই জীবন।” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। জীবন এত সহজ “পুস্প সজ্জা” নয়, কঠোর পরিশ্রমের সমষ্টি হলো জীবন।

ঘ ) উন্নত দেশগুলিতে সরকার বৃদ্ধ বা বৃদ্ধাদের জন্য ভাতা, অবস্থানুসারে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা এবং সুচিকিৎসা দিয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে করুন অবস্থা। কে তাদের জন্য চিন্তা করে?

আজ বৃদ্ধ বয়সে মায়ের স্মৃতি নিয়ে কত কি না বলা কথা ভাবি, মা বাবাকে হারিয়েছি সে তো অনেকদিন, সুদূর ক্যানাডা থেকে মাবাবার মৃত্যু শয্যার পার্শে দাঁড়াতে পারি নি। সকল মাবাবা সুখে থাকুক এই প্রত্যাশাই করছি।