News update
  • $10mn Approved for Climate Resilience in CHT: ICIMOD     |     
  • At least 143 dead in DR Congo river boat fire tragedy     |     
  • Dhaka has worst air pollution in the world Saturday morning     |     
  • Container ships to ply between Mongla and Chattogram ports     |     
  • France to Break Away from UK & US in Recognising Palestine as Nation State     |     

হামজা চৌধুরী যেভাবে ইংল্যান্ড থেকে বাংলাদেশের হলেন

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক ফুটবল 2024-12-20, 6:34pm

img_20241220_183410-5b181c551bd7bb2bcb71df83dc9032151734698099.png




বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ১৯শে ডিসেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, "বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্য প্রবাসী ফুটবলার হামজা দেওয়ান চৌধুরী বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে খেলার আনুষ্ঠানিক অনুমতি পেয়েছেন।"

প্রথমে হামজা নিজের ইচ্ছা প্রকাশ, অতঃপর বাংলাদেশের তরফ থেকে চেষ্টা, আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবনা, চলতি বছর বাংলাদেশের পাসপোর্ট হাতে পাওয়া, ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সবুজ সংকেত এবং সবশেষ ফুটবল বিশ্বের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার অনুমোদন পেয়ে লাল সবুজ জার্সি গায়ে বাংলাদেশের জাতীয় দলের হয়ে খেলা হামজা চৌধুরীর জন্য সময়ের ব্যাপার মাত্র।

অনেকেই প্রত্যাশা করছিলেন হামজা চৌধুরী নভেম্বরে মালদ্বীপের বিপক্ষেই বাংলাদেশের হয়ে মাঠে নামবেন। ফিফার অনুমতি পেতে দেরির পাশাপাশি খানিকটা চোটেও ভুগছিলেন এই লেস্টার সিটি মিডফিল্ডার।

সূচি অনুযায়ী হামজা চৌধুরী মার্চে ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কোয়ালিফায়ারের ম্যাচ খেলতে পারেন, যদি না তার আগে বাংলাদেশের কোনও প্রীতি ম্যাচ থাকে।

এ বছরই হামজা চৌধুরী বাংলাদেশের পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন, জুন মাসে পাসপোর্ট আবেদন করে অগাস্টে মা রাফিয়া চৌধুরী লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামজার বাংলাদেশি পাসপোর্ট গ্রহণ করেন।

এরপর হামজার ক্লাব লেস্টার সিটি এবং ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের অনুমতির পর ফিফার প্লেয়ার্স স্ট্যাটাস কমিটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের দেয়া এক ভিডিও বার্তায় হামজা চৌধুরী বলেন, "শেষ ধাপ সম্পন্ন, এবারে বাংলাদেশের হয়ে মাঠে নামার জন্য মুখিয়ে আছি।"

হামজা চৌধুরী 'জনস্রোত' নিয়ে আসছেন

বাংলাদেশের সাবেক ফুটবলার এবং বর্তমানে ফর্টিস ক্লাবের ম্যানেজার রাশেদুল ইসলাম হামজার বাংলাদেশে আসাকে ইতিবাচকভাবেই দেখতে চান।

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, "হামজা যেই মানের প্লেয়ার, যেই লেভেলে খেলতে আসছে, কাছাকাছিও সেই মানের প্লেয়ার নেই। এখানে এসে হামজা যে কোনও পজিশনে খেলতে পারবে। হামজা যে খেলাটা জানে আমাদের এখানে অনেকেই সেই স্ট্যান্ডার্ডের ফুটবল খেলে না।"

মি. ইসলামের মতে, হামজা বাংলাদেশের ফুটবলে একটা জনস্রোত নিয়ে আসছে।

হামজা বাংলাদেশে খেলার অনুমতি পেয়েছেন লেস্টার সিটির অফিসিয়াল ফেসবুক পাতায় এমন একটি পোস্ট দেয়ার পর সেটি দ্রুততম সময়েই ৫০ হাজারের বেশি শেয়ার হয়েছে।

রাশেদুল ইসলামও মনে করছেন, মাঠে এবং মাঠের বাইরে সম্ভাবনার নিয়ে আসছে হামজা।

তিনি যোগ করেন, "সবচেয়ে বড় ব্যাপার হামজা বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমের পরিবেশে পরিবর্তন আনতে পারবে, কীভাবে পেশাদার হতে হয়, কীভাবে লাইফ লিড করতে হয়।"

বাংলাদেশের ক্রীড়া লেখক আশফাক উল মুশফিক মনে করছেন, "হামজা চৌধুরীর বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে যোগ দেওয়া নিঃসন্দেহে দেশের ফুটবলের ইতিহাসে বিশাল একটি মাইলফলক।"

"বছরখানেক যুক্তরাজ্যে অবস্থান করতে গিয়ে দেখেছি দেশটিতে অসংখ্য বাংলাদেশি বংশদ্ভুত নারী ও পুরুষ বিভিন্ন স্তরে পেশাদার ও অপেশাদার খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ এবং কলাকুশলী হিসেবে নিযুক্ত আছেন। সেখানে প্রিমিয়ার লিগ জয়ী দল লেস্টার সিটিতে খেলা হামজা চৌধুরী নিঃসন্দেহে বাংলাদেশি বংশদ্ভুতদের মধ্যে সবার উপরেই থাকবেন।"

তবে অনেকের কথাতেই হামজার দেশপ্রেমের বিষয়টি উঠে আসছে বাংলাদেশের হয়ে খেলার জন্য।

"ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, অনেকেই যেভাবে বলছে যে দেশপ্রেমের টানে সে বাংলাদেশে ফিরে এসেছে, এই কথাটা আমার কাছে অতিরঞ্জিত এবং মুখরোচক শিরোনামের মতো লাগে," বলছিলেন মি. মুশফিক।

এর আগে হামজা ২০১৯ সালে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ইংল্যান্ডের হয়ে খেলাই তার প্রথম চাওয়া। ইংল্যান্ডের বয়সভিত্তিক জাতীয় দলেও খেলেছেন হামজা।

আশফাকের মতে, "ইংল্যান্ডের এফ এ কাপ, চ্যাম্পিয়নশিপ এবং সুপার কাপ জয়ী এই ফুটবলারের অভিজ্ঞতা থেকে ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে এ ১৮৫ তে থাকা বাংলাদেশের অনেক কিছু শেখার আছে, কাজে লাগানোর আছে।"

হামজা চৌধুরী কে?

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব লেস্টার সিটিতে খেলেন ফুটবলার হামজা চৌধুরী। তার মা বাংলাদেশি, বাবা গ্রানাডিয়ান।

বাংলাদেশে যারা ইউরোপিয়ান ফুটবল নিয়ে খোঁজখবর রাখেন তারা হামজা চৌধুরীর সাথে আগে থেকেই পরিচিত।

লেস্টার সিটির যুব দল থেকে উঠে আসা এই মিডফিল্ডার সম্প্রতি মূল দলে থিতু হয়েছেন।

হামজা তার উত্থান নিয়ে একটা কথা বেশ কৃতজ্ঞতার সুরে বলেছেন, সেটা হলো ব্রিটিশ-এশিয়ান কমিউনিটিতে যারা ফুটবল ভালোবাসেন তারা হামজাকে সবসময় সমর্থন করেছেন।

ইংলিশ লিগগুলোতে হাতেগোনা কয়েকজন এশিয়ান ফুটবলার থাকা সত্ত্বেও এই সমর্থন হামজাকে অনুপ্রাণিত করে।

হামজা ক্যারিয়ারের পেছনে তার বাংলাদেশি মা রাফিয়া, তার সৎবাবা মুরশিদ এবং তার চাচা ফারুকের ত্যাগের কথা স্বীকার করেন।

তাদের ত্যাগের প্রতিদান হামজা দিয়েছেন ২০১৭ সালে, যখন প্রথমবারের মতো লেস্টার সিটির হয়ে মাঠে নামেন। তৎকালীন ম্যানেজার ক্রেইগ শেকসপিয়ারের অধীনে ইএফএল কাপে বদলি হিসেবে ম্যাচ খেলেন হামজা।

হামজার ছোটবেলার বড় অংশ জুড়ে তার মা রাফিয়া, যার পৈত্রিক নিবাস দেওয়ানবাড়ি।

জায়গাটি হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট ইউনিয়নে।

লেস্টারের খেলার সময় মাঠে হামজা চৌধুরী উপস্থিতি চেনার অন্যতম উপায় ঝাকড়া চুল।

২০১৯ সালে বিবিসি স্পোর্টসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হামজা চৌধুরী বলেন, "আমি চুল কাটতে খুব অপছন্দ করতাম, আমার মা আমাকে জোর করে নিয়ে যেতেন, আমি ছোট ছিলাম, এখন আমি চুল বড় হতে দেই।"

হামজার মা একদিন ছেলেকে নিয়ে লাফবোরো বিশ্ববিদ্যালয়ে যান, সেখানে ফুটবলের একটা আয়োজন ছিল, হামজার বক্তব্য অনুযায়ী সেটাই ছিল শুরু।

"আমার মা নতুন ও ভিন্ন মতামতের প্রতি উদার, সেদিন আমি প্রথম খেলতে যাই এবং মা সিদ্ধান্ত নেন খেলা চালিয়ে যাবো আমি।"

ছোটবেলায় হামজা হবিগঞ্জের গ্রামে আসতেন, সেসময়কার কথা মনে আছে তার।

"আমি বাংলাদেশে যা খুশি তা করতে পারতাম, রাত ১০টায় ছোট ছোট বাচ্চারা ঘুরে বেড়াতো, আমি বাংলা বলতে পারি, এটা জেনে মানুষ আসলেই বেশ অবাক হতো," বলেন মি. চৌধুরী।

প্রতি বছরেই হামজা চৌধুরী বাংলাদেশে আসতেন, দুই বা তিন সপ্তাহ থাকা হতো।

"আমার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে আমি অবগত, আমি আবার যেতে পারলে ভালো লাগতো, এটা আমাকে আরো বিনয়ী করে তোলে, আমি ইংল্যান্ডে থাকলে আমার মধ্যে কিছু ব্যাপার কাজ করতে পারে, কিন্তু পৃথিবীর নানা প্রান্ত যেভাবে সংযুক্ত হয় সেটা আসলেই বিনয়ী করে তোলে।"

হামজা চৌধুরী ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী, স্কুল ছাড়াও ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে পড়ালেখা করতেন তিনি।

"আমি ও আমার ছোটবোন মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার কোরান শরীফ পড়া শিখতাম," বলেন হামজা।

"আমি ড্রেসিংরুম থেকে বের হবার সময় আয়াত-উল-কুরসি পড়ি, আমি আরো ছোট ছোট দোয়া পড়ি যেগুলো আমার মা আমাকে শিখিয়েছেন।"

"আমার মা অনেক শক্তিশালী একজন নারী, যিনি আমাকে শিখিয়েছেন, কীভাবে বিভিন্ন পরিস্থিতি সামলাতে হয়।"