News update
  • $10mn Approved for Climate Resilience in CHT: ICIMOD     |     
  • At least 143 dead in DR Congo river boat fire tragedy     |     
  • Dhaka has worst air pollution in the world Saturday morning     |     
  • Container ships to ply between Mongla and Chattogram ports     |     
  • France to Break Away from UK & US in Recognising Palestine as Nation State     |     

হোয়াটসঅ্যাপে লোভনীয় পার্ট টাইম চাকরির প্রস্তাব- কী করবেন?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি 2024-03-10, 5:00pm

hrturtu-4d6feb234272e03222f49a91c1c084b21710068483.jpg




গত অক্টোবরে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে আসা হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজে চাকরির প্রস্তাব পান ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা সোহেলি সুলতানা। ঐ মেসেজে তার কাছে জানতে চাওয়া হয় যে দৈনিক অন্তত পাঁচশো টাকা আয় হবে, এমন একটি অনলাইন পার্ট টাইম চাকরি করতে তিনি আগ্রহী কিনা?

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করা মিজ সুলতানা সেসময় বিভিন্ন জায়গায় চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছিলেন আর নিজের খরচ চালানোর জন্য টিউশনি করতেন। স্বাভাবিকভাবেই ঘরে বসে অনলাইনে কাজ করার প্রস্তাবে আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।

হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজে তিনি কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করলে তাকে একটি টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্ট খুলতে বলা হয় এবং সেখানে তাকে কাজ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়।

মূলত, অনলাইনে পণ্য কেনাবেচার একটি ট্রেডিং ওয়েবসাইটে বিভিন্ন পণ্য বিক্রির কাজের প্রস্তাব দেয়া হয় তাকে, যেখানে পণ্য বিক্রি করতে পারলে তিনি কমিশন পাবেন বলে জানানো হয় তাকে।

টেলিগ্রামে তাকে একটি ওয়েবসাইটে লগ-ইন করতে বলা হয়। মিজ সুলতানা তার ফোন নম্বর ও মোবাইলে টাকা লেনদেনের একটি অ্যাপের অ্যাকাউন্টের নম্বর দিয়ে সেই সাইটে লগ-ইন করেন। লগ-ইন করার সময় তার টাকা লেনদেনের মোবাইল অ্যাপের প্রোফাইলের পিন নম্বরও ঐ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করান তিনি।

মিজ. সুলতানা বলছিলেন, “আমাজন, দারাজের মত একটি পণ্য কেনাবেচার ওয়েবসাইটে আমাকে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়া হয়। আর কাজ শুরু করার আগেই আমার অ্যাকাউন্টে একটা ছোট অ্যামাউন্ট পাঠানো হয় উপহার হিসেবে।”

তার কাজটা ছিল ঐ ওয়েবসাইট থেকে নির্দিষ্ট পণ্য কেনার এবং সেই সাইটের মাধ্যমেই সেগুলো বিক্রি করার। কত টাকার মধ্যে কোন পণ্য কিনতে হবে, সেটিও তাকে ঠিক করে দেয়া হত টেলিগ্রাম মেসেজের মাধ্যমে।

“শুরুতে ৫০০ টাকার একটি পণ্য কিনতে বলা হয়। অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা দিয়ে সেটি কেনার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায় এবং আমাকে কমিশনের একটি অংশও পাঠানো হয়। আমার অ্যাকাউন্টে টাকা পাওয়ার মেসেজও আসে”, বলছিলেন সোহেলি সুলতানা।

এরপরের ধাপে তাকে এক হাজার টাকার একটি পণ্য কিনতে বলা হয় এবং সেটিও কেনার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায়। এবার আগের চেয়েও বড় অঙ্কের কমিশন পান তিনি।

“দ্বিতীয় ধাপের এক হাজার টাকার পণ্য কিনতে আমার পুরো টাকাটা দিতে হয়নি কারণ ঐ ওয়েবসাইটে আমার প্রোফাইলে প্রথমবারের ৫০০ টাকা আর প্রথম কাজের কমিশনের টাকা দেখাচ্ছিল। ঐ টাকার সাথে কিছু টাকা যোগ করে এক হাজার টাকা দিয়ে দ্বিতীয় পণ্যটি কিনি”, বলছিলেন মিজ সুলতানা।

এরপর একই পদ্ধতিতে পাঁচ হাজার টাকার একটি পণ্য কিনে বিক্রি করেন তিনি।

“পাঁচ হাজার টাকার কাজটি করার পর আমি ঠিক করি যে আর এই কাজ করবো না। আমি তাদের জানাই যে আমি আমার মূলধন ও আয় তুলে নিতে চাই। তখন আমাকে জানানো হয় যে আরও দুটি ‘টাস্ক’ সম্পন্ন করলে আমি সব টাকা তুলতে পারবো”, বলছিলেন মিজ. সুলতানা।

এই পর্যায়ে সোহেলি সুলতানার কিছুটা সন্দেহ হয় পুরো বিষয়টি নিয়ে। তবে পরের ধাপে তিনি বিনিয়োগ করতে অপারগতা জানালে যখন প্রতিষ্ঠান তার আংশিক টাকা দিয়ে দেবে বলে জানায়, তখন কিছুটা আশ্বস্ত হন তিনি।

“পরের টাস্কে যখন আমাকে ২৭ হাজার টাকার একটি ঘড়ি কিনতে বলা হয়, আমি জানাই যে এত টাকা দেয়া সম্ভব না আমার পক্ষে। তখন তারা জানায় যে আমার হয়ে এই কাজটির টাকার একটি অংশ তারাই দিয়ে দেবে। তখন তারা কিছু টাকা দেয় আর আমি আংশিক টাকা দেই ও ঘড়িটি কিনে নেই। তাদের ওয়েবসাইটে কিছুক্ষণের মধ্যে সেটি বিক্রিও করি।”

এরপর তাকে শেষ টাস্ক দেয়া হয় ৮৫ হাজার টাকার একটি কার্পেট কিনে বিক্রি করার। এই ৮৫ হাজার টাকার মধ্যে ৫০ হাজার তিনি দেবেন এবং ৩৫ হাজার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দেয়া হবে বলে জানানো হয়। এই টাস্কটি সম্পন্ন করতে পারলেই মিজ সুলতানা তার মূলধন ও আয় সহ পুরো টাকাটা তুলে বের হয়ে আসতে পারবেন বলে জানানো হয় তাকে।

“ততক্ষণে আমার সন্দেহ হচ্ছিল যে আমি প্রতারকদের পাল্লায় পড়েছি। কিন্তু আমাকে ঐ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বারবার তাগাদা দিয়ে বলা হচ্ছিল যে এই টাস্কটি না করলে আমার পুরো টাকাই বাদ হয়ে যাবে।"

সে সময় ঐ প্রতিষ্ঠানের ওয়বেসাইটে থাকা সোহেলি সুলতানার অ্যাকাউন্টে প্রায় দুই লাখ টাকা জমা রয়েছে - এমনটি দেখা যাচ্ছিল বলে জানান তিনি।

এই পর্যায়ে ৫০ হাজার টাকা পাঠিয়ে টাস্ক সম্পন্ন করার পরও যখন তাকে ৮৭ হাজার টাকার আরেকটি টাস্ক দেয়া হয় ও জানানো হয় যে সেটি সম্পন্ন করতে পারলে তিনি তার টাকা তুলতে পারবেন, তখন তিনি নিশ্চিত হন যে তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

তখন তিনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীর শরনাপন্ন হন। তারা তাকে উপদেশ দেয় তাদের (প্রতারক চক্র) সাথে আলোচনা চালিয়ে যেতে যেন তারা বুঝতে না পারে যে মিজ সুলতানার তাদের বিষয়ে সন্দেহ হয়েছে।

পুলিশের পরামর্শ অনুযায়ী মিজ সুলতানা প্রতারক চক্রের সাথে আরো কয়েকদিন অনলাইনে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কয়েকদিন পর পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে জানানো হয় যে ঐ প্রতারক চক্রের কয়েকজন সদস্যকে আটক করা হয়েছে।

মিজ সুলতানার সাথে ঘটা এই পুরো ঘটনার ব্যাপ্তি ছিল ২৮শে অক্টোবর রাত থেকে ৩০শে অক্টোবর দুপুর পর্যন্ত- দুই দিনেরও কম সময়।

দুই দিনের কম সময়ে সোহেলি সুলতানা ৭০ হাজারের বেশি টাকা হারান প্রতারকদের জালে পড়ে।

“ঐ সময় আমার পারিবারিক আর্থিক অবস্থা ভালো যাচ্ছিল না, চাকরির পরীক্ষাও ভালো হয়নি। সব মিলিয়ে সময়টা খারাপ যাচ্ছিল। তাই ঐ পরিস্থিতিতে অনেকটা বেপরোয়া হয়েই এরকম একটা ফাঁদে পা দেই। সেসময় ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করার পরিস্থিতি থাকলে হয়তো এরকম একটা অবস্থায় পড়তাম না”, বলছিলেন মিজ. সুলতানা।

গত কয়েকমাসে হোয়াটসঅ্যাপে অপরিচিত দেশি-বিদেশি নম্বর থেকে আসা ফোনকল বা মেসেজের মাধ্যমে লোভনীয় পার্টটাইম চাকরির প্রস্তাব পেয়েছেন, এমন মানুষের সংখ্যা কম না। অনেকেই এসব প্রস্তাব পাত্তা না দিলেও সোহেলি সুলতানার মত অনেকেই বড় অঙ্কের টাকা খুইয়েছেন এমন প্রতারকদের পাল্লায় পড়ে।

ভুক্তভোগীদের অনেকে এসব ঘটনার জের ধরে আইনের শরণাপন্ন হয়েছেন। তাদের করা মামলার ভিত্তিতে গত কয়েকমাসে দেশের একাধিক স্থান থেকে এই ধরনের আলাদা আলাদা প্রতারণার সাথে জড়িত থাকা বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছে।

কিন্তু তারপরও হোয়াটসঅ্যাপে নানা ধরনের লোভনীয় চাকরির প্রস্তাব আসছেই। আর এসব প্রতারণার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হচ্ছেন সোহেলি সুলতানার মত শিক্ষিত বেকাররা, যাদের অনেকেই হয়তো কাজের জন্য মরিয়া হয়ে ঘুরছেন।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরাও বলছেন অনলাইনে এভাবে জালিয়াতি করার চক্রগুলো মানুষের দুর্বল পরিস্থিতির সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করে। শিক্ষিত চাকরি প্রত্যাশী, আর্থিক অনটনে থাকা মানুষ এ ধরনের অনলাইন স্ক্যামের অপেক্ষাকৃত সহজ লক্ষ্যবস্তু হওয়ায় তাদেরকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে তারা।

“কোন ধরনের মানুষকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে, তা অনলাইন প্রতারকরা ‘সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ এর মাধ্যমে ঠিক করে। প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক ও মানবিক দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে এই পদ্ধতিতে নির্ধারণ করা হয় যে কে এই ধরনের স্ক্যামের সহজ টার্গেট হতে পারে”, বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও প্রযুক্তি ইন্সটিটিউটের পরিচালক, অধ্যাপক বিএম মাইনুল হোসেন।

“এসব ক্ষেত্রে তারা যে খুব আধুনিক প্রযুক্তি বা বিশেষ কোনো ডিভাইস ব্যবহার করছে, তা কিন্তু না। তারা মানুষের দুর্বলতাকে কাজে লাগাতে প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছে এবং প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে তাদের জালিয়াতিকে বিশ্বাসযোগ্য করানোর চেষ্টা করছে।”

এরকম ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের নিজেদের সতর্কতাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় বলে বলছিলেন মি. হোসেন।

“সরাসরি কোনো কাজে বা ব্যবসায় টাকা বিনিয়োগ করার আগে আমরা যতটা যাচাই করে নিই, অনলাইনে টাকা দেয়ার ক্ষেত্রে তার চেয়ে বেশি যাচাই করা জরুরি।”

এই ধরনের প্রস্তাবের বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করতে কিছু পদক্ষেপ নেয়ার ওপর জোর দেন তিনি।

“এ ধরনের কোনো প্রস্তাব পেলে প্রথমেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে খোজ নিতে হবে। ঐ প্রতিষ্ঠানের অফিসের ঠিকানা থাকলে সেখানে যাওয়া, ওয়েবসাইট থাকলে সেটি যাচাই করা, যে ধরনের কাজের কথা তারা বলছে সেই বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করার মত কাজগুলো করা প্রয়োজন”, বলছিলেন মি. হোসেন।

এসবের পাশাপাশি পরিচিত অন্যান্য মানুষের সাথেও কাজ নিয়ে আলোচনা করার পরামর্শ দেন তিনি। পরিচিতদের মধ্যে কেউ এভাবে কাজ পেয়েছেন কিনা, এই ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা কারো আছে কিনা – এসব বিষয়ে খোজ নেয়ার তাগিদ দেন তিনি।

যদি কারো পক্ষে এসব বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেয়া সম্ভব না হয় তাহলে নিদেনপক্ষে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করার বিষয়ে জোর দেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বি এম মাইনুল হোসেন।  বিবিসি বাংলা