News update
  • France to Break Away from UK & US in Recognising Palestine as Nation State     |     
  • Storm Alert Issued for Dhaka and Eight Other Regions     |     
  • 58 killed in deadliest US strike on Yemen     |     
  • BNP Opposes Reforms to Constitution’s Core Principles      |     
  • Time to Repair Bangladesh–Pakistan Ties     |     

জলবায়ু পরিবর্তনে বাড়বে রোগব্যাধি, মৃত্যুর হুমকিতে কোটি মানুষ!

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক বিপর্যয় 2024-06-09, 10:16am

fryerye-c67c6b3a042308409af30088f3c28ed31717906594.jpg




জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শুধু আবাসন সংকট সৃষ্টি কিংবা খাদ্য নিরাপত্তায় হুমকি দেখা দেবে না– বাড়বে নানা রোগব্যাধিও। ফলে মৃত্যুর হুমকিতে দিনাতিপাত করবে বিশ্বের কোটি মানুষ।

আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্বাভাবিক শিল্পায়নের ফলে জলবায়ুর তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে, যার ফল এখনই ভোগ করছে বিশ্ববাসী। যদি একই হারে গ্রিন হাউস গ্যাস ও কার্বন নিঃসরণ চলতে থাকে তাহলে চলতি শতাব্দীর শেষদিকে জলবায়ুতে তাপমাত্রা বাড়বে ৪-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এই পরিমাণে তাপমাত্রা বাড়লে অন্যান্য সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে প্রকট হয়ে দাঁড়াবে নানা ধরনের রোগব্যাধি। বিশেষ করে এতদিন যেসব রোগব্যাধি মৌসুমি রোগ হিসেবে মানুষকে আক্রান্ত করতো সেসব রোগে হরহামেশা মানুষ আক্রান্ত হবে বলে গবেষণায় বলা হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে 'ভেক্টর বর্ন ডিজিজ'। মূলত মশা-মাছির মতো আর্থ্রোপোডা পর্বের যেসব প্রাণীর রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে তাদের দৌরাত্ম্যে মানুষের জীবন রীতিমতো হুমকির মুখে পড়বে বলে সাবধান করেছে সংস্থাটি।

ডব্লিউএইচও’র গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু সংকটের কারণে সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রাণ হারাবে ম্যালেরিয়া রোগে।

ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকনগুনিয়া, জিকা ভাইরাস, নিপাহ ভাইরাসের মতো এমন অসংখ্য ডব্লিউএইচও তালিকাভুক্ত ভেক্টর বর্ন ডিজিজ আছে, যারা আগামী বিশ্বে মানুষের জন্য প্রাণহন্তাকারক হিসেবে কাজ করবে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।

ডব্লিউএইচও’র গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু সংকটের কারণে সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রাণ হারাবে ম্যালেরিয়া রোগে। ২০২২ সালের হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মোট ৮৫টি দেশের আড়াইশ’ মিলিয়ন মানুষ সে বছর ম্যালেরিয়াতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এরমধ্যে ৬ লাখ ৮ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এ রোগে।

অন্যদিকে ম্যালেরিয়ার পরেই মারাত্মক রোগ হিসেবে মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তুলবে ডেঙ্গু। ২০০০ সালে যেখানে সারা বিশ্বে ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ, ২০১৯ সালে এসে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ লাখে। একদিকে আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশ ভুগছে ম্যালেরিয়াতে, অন্যদিকে এশিয়া বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ডেঙ্গু দিনকে দিন ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে বলে জানিয়েছে ডব্লিউএইচও।

সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের ১২০টি দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দিনকে দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে বাংলাদেশ এবং থাইল্যান্ড। ২০০০ সালে বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গু রোগ ধরা পড়ে এবং সে বছর ৯৩ জন মানুষ এ রোগে মারা যান।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, ২০০০ সালের পর থেকে ১৫ বছরে দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ২০১। কিন্তু ২০২৩ সালেই মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ মানুষ। যেখানে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা যান ২৪৮ জন, সেখানে ২০২৩ সালে মাত্র এক বছরে ডেঙ্গুতে প্রাণ হারান ১ হাজার ৭০৫ জন। মূলত পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে দিন যত যাচ্ছে এক সময়ের সাধারণ রোগব্যাধি তত বেশি করে মারাত্মক রূপ ধারণ করছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল সম্প্রতি এক সেমিনারে বলেন, জলবায়ু সংকটের সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হচ্ছে ভেক্টর বর্ন ডিজিজ। দিন যত যাবে ডেঙ্গুর মতো রোগ তত বেশি করে মানুষের জীবনে জাল বিস্তার করবে। যতই ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হোক না কেন, ডেঙ্গু নির্মূলে সবার আগে জলবায়ু পরিস্থিতি উন্নয়নে কাজ করতে হবে।

দ্য ল্যান্সেট প্ল্যানেটারি হেলথের এক গবেষণায় দেখা গেছে, আফ্রিকা বা এশিয়ার মতো দেশগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের অংশ হিসেবে এখন থেকে আবহাওয়ায় বড় রকমের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। আবহাওয়া যেদিকে মোড় নিচ্ছে তা রোগবাহী আর্থ্রোপোডা পর্বের প্রাণীদের জন্য বেশ অনুকূল। এতে করে যখন ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়া রোগের সময় না তখনও এ ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, ম্যালেরিয়ার পাশাপাশি বর্তমানে যে তাপমাত্রা বিরাজ করছে তাতে করে ডেঙ্গু রোগের বিস্তার বড় রকমের শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ডেঙ্গুর যে কয়টি প্রজাতি আছে তার বেশিরভাগই ২৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম। বর্তমানে যে পরিমাণে তাপমাত্রা বিরাজ করছে তাতে করে সহজেই বছরজুড়েই ডেঙ্গু রোগের বিস্তার লাভ করা সম্ভব, যা মানবজীবনের জন্য নিঃসন্দেহে হুমকিস্বরূপ।

যেভাবে তাপমাত্রা বাড়ছে সেই ধারা বজায় থাকলে ২০৭০ সালের মধ্যে বিশ্বের সাড়ে ৪ বিলিয়ন মানুষ ভেক্টর বর্ন ডিজিজে আক্রান্ত হবেন।

বিগত বছরগুলোর সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায়, বাহককেন্দ্রিক এ রোগের পরিমাণ বেড়েছে ১৭ শতাংশ এবং এরইমধ্যে বিশ্বের ৭ লাখ মানুষ এ ধরনের রোগে আক্রান্ত। শুধু ডেঙ্গু কিংবা ম্যালেরিয়া না, ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় দেড় বিলিয়ন মানুষ জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হবে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

এ প্রসঙ্গে অনুজীব বিজ্ঞানী অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ সময় সংবাদকে বলেন, তাপমাত্রা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসের মাইক্রো অর্গানিজমের মধ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। বিশেষ করে ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়ার জেনেটিক কম্পোজিশনে যে ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে তা রীতিমতো শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে আগে নির্দিষ্ট সময়ে মানুষ আর্থ্রোপোডা বাহককেন্দ্রিক রোগে আক্রান্ত হলেও এখন আর তা সময়ের ফ্রেমে বাঁধা থাকছে না।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বে ছোট ছোট রোগও বড় রকমের মহামারি আকার ধারণ করতে পারে উল্লেখ করে ফিরোজ বলেন, আগে ১০০ বছর পর পর মহামারি এলেও এখন এই মহামারির আগমন হবে ঘনঘন। জলবায়ুর নেতিবাচক এ পরিবর্তনে ভাইরাসের টিকে থাকা সহজ হলেও মানুষ সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হিমশিম খাবে। নিউজ সময়