News update
  • Passenger bus in northern India catches fire: 20 people burn to death     |     
  • Voting start in Ctg Varsity Central Students Union elections      |     
  • Death toll in Mirpur factory, chemical godown fire rises to 16     |     
  • Humanitarians Urge Donors as Global Aid Remains Severely Short     |     
  • Sami’s five-for 33 seals Afghanistan’s 200-run rout of Bangladesh     |     

পাহাড়ি ঢল আর ব্যাপক বৃষ্টি, শেরপুরে ভয়াবহ বন্যা

বিবিসি বাংলা বিপর্যয় 2024-10-05, 7:54pm

rtretert-ad9e215ad08fb2eba4820147ff15e9b91728136450.jpg




পাহাড়ি ঢল আর ব্যাপক বৃষ্টির কারণে বাংলাদেশের শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ীসহ কয়েকটি উপজেলা ও ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউরা ও হালুয়াঘাটসহ কিছু এলাকা ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়ে পড়ায় ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে পড়েছে নালিতাবাড়ী উপজেলা। সেখানে পাহাড়ি ঢলের পানি এখনো কিছু এলাকায় বাড়ছে।

এলাকার গুরুত্বপূর্ণ অনেক সড়ক এবং বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া ঝিনাইগাতি ও শ্রীবরদী উপজেলার বিরাট এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি বাড়তে শুরু করেছে নকলা উপজেলাতেও।

জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নকিবুজ্জামান খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, নালিতাবাড়ীতে গত রাতেও ১৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার ২৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিলো।

মূলত ভারতের মেঘালয় থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পাশাপাশি বৃহস্পতিবারের ব্যাপক বৃষ্টির কারণেই নালিতাবাড়ী ও আশেপাশের এলাকায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

নালিতাবাড়ী উপজেলায় এখন পর্যন্ত তিন জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উদ্ধার কার্যক্রমে সেনাবাহিনী যোগ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা।

তিনি জানিয়েছেন, গতকাল যে পাঁচটি ইউনিয়নে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো আজ সেগুলোতে পানি কমতে শুরু করলেও অন্য পাঁচটি ইউনিয়নে পানি বাড়ছে।

নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নকিবুজ্জামান খান বলছেন, মেঘালয়ে আর ভারী বৃষ্টি না হলে এবং বাংলাদেশে বৃষ্টি কমে এলে কাল নাগাদ পরিস্থিতির উন্নতি শুরু হবে বলে তারা আশা করছেন। যদিও ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী মেঘালয়ে আজও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে বাংলাদেশে মৌসুমী বায়ুর সক্রিয়তার কারণে যে বৃষ্টিপাত হচ্ছে সেটির তীব্রতা কমে আসবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা।

তিনি জানিয়েছেন গত চব্বিশ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ঢাকার কাছে চাঁদপুরে।

নালিতাবাড়ী পরিস্থিতি

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয়রা বলছেন, ভারতের মেঘালয় থেকে আসা প্রবল পাহাড়ি ঢলে স্থানীয় নদী খাল বিল উপচে পানি রাস্তাঘাটের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে শুরু করে। ঢলের সাথে বৃহস্পতিবারের ব্যাপক বৃষ্টিতে নালিতাবাড়ী উপজেলার প্রায় সর্বত্রই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়।

পাহাড়ি ঢলের কারণে অনেক জায়গা বসত বাড়ি ঘর ধসে গেছে এবং শস্য ও গবাদিপশুর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

মোঃ নকিবুজ্জামান খান অবশ্য বলছেন আজ শনিবার নাগাদ পানির মাত্রা কিছু স্থিতিশীল এবং আর বৃষ্টি না হলে রাত থেকে পানি আরও কমে যাওয়ার আশা করছেন তারা।

“মহারাশি ও ভোগাই নদীর পানিও কমতে শুরু করেছে। মেঘালয়ে আর ভারী বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে বলে আশা করছি,” বিবিসি বাংলাকে বলছেন তিনি।

ওদিকে শুক্রবার থেকেই আটকে পড়া বহু পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছে সেনাসদস্যসহ উদ্ধারকর্মীরা।

“সংকট আছে কিন্তু এর মধ্যেই উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণ তৎপরতা চালানো হচ্ছে। আশা করি পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে,” নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলছিলেন বিবিসি বাংলাকে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন বন্যার পানিতে এভাবে ডুবে যাওয়ার ঘটনা নালিতাবাড়ীতে বিরল। “বন্যার পানি বাড়ির পুকুর উপচে ঘরে ওঠার উপক্রম। এমন দৃশ্য আর কখনো দেখিনি,” বলছিলেন নালিতাবাড়ির স্থানীয় এক ব্যক্তি।

সেখানকার সাংবাদিকরা জানিয়েছেন পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার অনেক জায়গায় সড়ক ভেঙ্গে গেছে এবং পানিতে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকা।

বিশেষ করে পোড়াগাঁ ও নয়াবিল ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া গেছে। ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর বাঁধ ভেঙ্গে বহু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে গত কয়েকদিনে। এসব এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় আলাদা করে নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

সারাদেশে বৃষ্টি পরিস্থিতি ও পূর্বাভাস

মৌসুমী বায়ুর সক্রিয়তায় গত কয়েকদিনে সারাদেশে যে বৃষ্টিপাত হচ্ছে তার তীব্রতা কমে আসবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।

ঢাকায় গত চব্বিশ ঘণ্টায় ৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া টাঙ্গাইলে ১৭৮, মাদারীপুরে ১৬২, ময়মনসিংহে ১১২, নেত্রকোনায় ১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

তবে সবচেয়ে বেশি ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে চাঁদপুরে।

আবহাওয়া বিভাগ আজ সকাল নয়টা থেকে পরবর্তী বায়াত্তর ঘণ্টার জন্য যে পূর্বাভাস দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় আছে।

এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং এ সংলগ্ন বাংলাদেশ -পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকায় একটি লঘুচাপ অবস্থান করছে

আজও ঢাকা ও ময়মনসিংহ সহ বিভিন্ন জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া কোন কোন এলাকায় ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে।

ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু এলাকায় আগামীকাল ও পরশুও মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। অর্থাৎ বৃষ্টির তীব্রতা কমলেও দেশজুড়ে বিভিন্ন এলাকায় ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা এখনো আছে।