ইন্দোনেশিয়ার ফ্লোরেস দ্বীপের মাউন্ট লেওতোবি লাকি-লাকি আগ্নেয়গিরিতে ফের অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছে। স্থানীয় সময় সোমবার (৭ জুলাই) সকালের পর থেকে একাধিকবার এই অগ্ন্যুৎপাতে আকাশে ছাইয়ের স্তম্ভ উঠেছে ১৮ কিলোমিটার (১১ মাইল) পর্যন্ত। আতঙ্কে এলাকা ছাড়ছেন হাজারো বাসিন্দা। খবর বিবিসির।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। তবে আগ্নেয়গিরির আশপাশের চার হাজারেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সর্বোচ্চ সতর্কতা, বাতিল বহু ফ্লাইট
মাউন্ট লেওতোবি লাকি-লাকিকে সর্বোচ্চ সতর্কতার স্তরে রাখা হয়েছে। অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সোমবার বালি দ্বীপে যাতায়াতকারী অন্তত ২৪টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। তবে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকাল থেকে কিছু ফ্লাইট আবার চালু হয়েছে।
দেশটির ভূতাত্ত্বিক সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ ওয়াফিদ বলেন, “সোমবার সকালে ১১টা ৫ মিনিটে ছাইয়ের যে স্তম্ভ উঠেছিল, এটি নভেম্বরের পর থেকে সবচেয়ে বড় অগ্ন্যুৎপাত।”
তিনি জানান, “এমন অগ্ন্যুৎপাত উড়োজাহাজ চলাচলের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে, এমনকি এটি বিপজ্জনকও হতে পারে।”
একের পর এক বিস্ফোরণ, লাল জ্বলন্ত লাভার ঝলক
সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ফের একবার অগ্ন্যুৎপাত ঘটে, ছাই ও লাভা ছড়িয়ে পড়ে ১৩ কিলোমিটার পর্যন্ত। মঙ্গলবার ভোর ৫টা ৫৩ মিনিটেও আরেকবার অগ্ন্যুৎপাত হয়, যদিও তা তুলনামূলকভাবে কম তীব্র ছিল।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, আগ্নেয়গিরির চূড়া থেকে জ্বলন্ত লাল লাভা উদগীরণ হচ্ছে, আর স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কে গাড়ি ও বাসে করে এলাকা ছাড়ছেন।
বিশুদ্ধ পানির সংকট, জরুরি সহায়তার আহ্বান
স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার মতে, যারা এখনও এলাকা ছাড়েননি তারা খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও মাস্কের ঘাটতির মুখে পড়েছেন।
পুলুলেরা গ্রামের প্রধান পাউলাস সনি স্যাং তুকান বলেন, “আমাদের গ্রামটি আগ্নেয়গিরি থেকে মাত্র ৮ কিমি দূরে। পুরো এলাকা ছাইয়ে ঢাকা পড়েছে। পানি থাকলেও তা কতটা বিশুদ্ধ তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আশেপাশের অনেক গ্রামে এখনও জরুরি সহায়তা পৌঁছায়নি। এরকম চলতে থাকলে মানবিক সংকট তৈরি হতে পারে।”
'রিং অফ ফায়ার'-এর দেশ
ইন্দোনেশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরের ‘রিং অফ ফায়ার’ এলাকায় অবস্থিত, যেখানে টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষে বারবার আগ্ন্যুৎপাত ও ভূমিকম্প হয়।
লেওতোবি লাকি-লাকি আগ্নেয়গিরিটি চলতি বছরই বহুবার অগ্ন্যুৎপাত করেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। গত বছরের নভেম্বরে এর একটি অগ্ন্যুৎপাতে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
‘লাকি-লাকি’ শব্দটির অর্থ ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় ‘পুরুষ’। এটি জোড়া আগ্নেয়গিরির একটি অংশ, যার অন্য অংশ ‘পেরেম্পুয়ান’ (নারী), যা তুলনামূলকভাবে শান্ত এবং উচ্চতায় এক হাজার ৭০৩ মিটার।
বর্তমানে এলাকাজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রশাসন ও উদ্ধারকারী দল পরিস্থিতি সামাল দিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।