News update
  • UNRWA Situation Report on Crisis in Gaza & Occupied West Bank     |     
  • Intimidation or bloodshed cannot halt Bangladesh’s march to democracy     |     
  • Khaleda Zia integral to an important chapter in BD history: Yunus     |     
  • Enthusiasm marks Victory Day celebrations across Bangladesh     |     
  • Dhaka-Delhi ties deep; to be shaped by trust, dignity, mutual respect     |     

পদ্মা গিলছে বসতভিটা-কৃষিজমি, আতঙ্কে শত শত পরিবার

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক বিপর্যয় 2025-07-25, 7:46am

9a92fd3ad3f0e92a927fba2e32f415a2502dfbe92f6c094a-ed01db7a2924bb1993ad23bf2fc583d51753407998.jpg




পদ্মার পানি বাড়ায় রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহের ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়েছে প্রায় ৩০ বিঘা ফসলি জমি। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে বসতবাড়ি, স্কুল, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙন ঠেকাতে স্থায়ী নদী শাসনের দাবি নদী তীরের মানুষের।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা সদরের মহাদেবপুর, চর সিলিমপুর, মেছোঘাটা, রামচন্দ্রপুর এবং গোয়ালন্দের অন্তর মোড়, মুন্সিবাজার, কাউলজানি ও বেপারীপাড়া এলাকায় ভাঙন চলছে।

জানা যায়, এক সপ্তাহের ভাঙনে শুধু মুন্সিবাজার ও কাউয়ালজানি এলাকাতেই প্রায় ৩০ বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে নদী তীরবর্তী সদরের মিজানপুর ইউনিয়নের মহাদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা। নদী তীরের শত শত পরিবারের দিন কাটছে চরম আতঙ্কে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলায় পদ্মা তীরবর্তী এক কিলোমিটার সমতল ভূমি ও আধা কিলোমিটার এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকার কথা বললেও স্থানীয়দের দাবি, বাস্তবে অন্তত ছয় কিলোমিটার এলাকায় তীব্র ভাঙন চলছে।

মহাদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. নেকবর আলী বলেন, পদ্মা নদী ভাঙতে ভাঙতে এখন আমাদের স্কুলের একেবারে কাছে এসে ঠেকেছে। এভাবে ভাঙন চলতে থাকলে যে কোনো মুহূর্তে স্কুলটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তাই সরকারের কাছে দাবি জানাই, নদী ভাঙন রোধে দ্রুত কাজ শুরু করা হোক।

মহাদেবপুর এলাকার ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা ছালেহা বেগম বলেন, ‘পদ্মা নদীর দুই দফা ভাঙনে বাড়িঘর হারিয়ে নতুন করে বাড়ি করেছিলাম এই এলাকায়। এখন নদী আবারও ভাঙতে ভাঙতে আমার বাড়ির কাছে চলে এসেছে। রাতে ঘুমাতে পারি না, কখন যেন বাড়িঘর ভেঙে আবার নদীতে তলিয়ে যায়।’

গোয়ালন্দের মুন্সিবাজার এলাকার জিয়াউর রহমান বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে নদী ভাঙন চলছে। এতে কৃষি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। আমাদের দাবি আপাতত জিও ব্যাগ ফেলে সাময়িকভাবে নদী ভাঙন রোধ করতে হবে। এখানে ৪টি প্রাইমারি স্কুল, ৪টি মসজিদ আছে। এই নদী ভাঙন বন্ধ না করা গেলে সব ভেঙে যাবে। ২৫ বছর ধরে নদী এখানে ভাঙছে। এ পর্যন্ত যে সব সরকার এসেছে তারা নদী বাঁধার জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আমরা ড. ইউনূস সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, সাময়িকভাবে আপাতত জিও ব্যাগ ফেলে নদী ভাঙন রোধ করতে হবে।’

পদ্মায় পাটক্ষেত বিলীন হওয়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক লোকমান সরদার বলেন, ‘ভাঙনে আমার ৫ বিঘা জমি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। আর অল্প একটু জমি রয়েছে, সেটাও নদীতে চলে গেলে আমি নিঃস্ব হয়ে যাব। আমরা সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি, যত দ্রুত সম্ভব ভাঙন ঠেকানোর ব্যবস্থা করুন।’

একই এলাকার ফরিদ সরদার, আজিজ সরদার, তোফাজ্জল হোসেন, জিল্লু, আজিজুল, মোনাফ আলী সরদারসহ কয়েকজন কৃষক বলেন, প্রায় ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে নদী ভাঙন চলছে। কিন্তু ভাঙন ঠেকাতে কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। যখন যে এমপি হন, তিনি আশ্বাস দেন। কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। ভাঙনে এই এলাকার শত শত বিঘা কৃষি জমি বিলীন হয়েছে। ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। কিন্তু কার্যকর ব্যবস্থা নেই। নতুন করে আবার ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে ঝুঁকিতে রয়েছে শতাধিক বসতবাড়ি, স্কুল, মসজিদ, বাজার।

গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রায়হানুল হায়দার বলেন, আমি সরজমিনে ভাঙন কবলিত মুন্সিবাজার ও কাউয়ালজানি এলাকা পরিদর্শন করেছি। গত কয়েক দিনের ভাঙনে এই দুই এলাকাতেই অন্তত ১০ থেকে ১২ বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ প্রশাসনসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ বিষয়টি ওয়াকিবহাল রয়েছেন। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে আন্তঃসমন্বয়ের মাধ্যমে ভাঙন রোধ করতে যে ব্যবস্থাগুলো নেয়া প্রয়োজন, সেই ব্যাপারে উদ্যোগ নেব। পাশাপাশি যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের ব্যাপারটিও আমরা ভাবব।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাহিদুর রহমান বলেন, ‘দেবগ্রামের মুন্সিবাজার ও কাউলজানি এলাকায় ভাঙনের খবর আমি শুনেছি। কয়েক দিন আগে ভাঙন কবলিত স্থানটি আমি পরিদর্শন করে ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে পত্র দিয়েছি। আশা করছি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেবে।’

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এম এ শামীম বলেন, ‘রাজবাড়ী জেলায় পদ্মা নদীর ডান তীর প্রায় ৫৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য। বর্ষাকালে বিভিন্ন জায়গায় ভাঙন দেখা দেয়। আমরা রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলার ভাঙন কবলিত ৮টি পয়েন্ট চিহ্নিত করেছি। আমাদের চিহ্নিত করা এক কিলোমিটার সমতল ভূমি ও আধা কিলোমিটার এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙনের বিষয়ে গোয়ালন্দের ইউএনও আমাদের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর পত্র প্রেরণ করেছেন। আমারাও ওই পত্রের রেফারেন্স ধরে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রকল্পের জন্য পত্র দিয়েছি। প্রকল্পের অনুমোদন পেলেই আমরা এসব জায়গায় কাজ শুরু করব।’