News update
  • 2 dead, six hurt in Sherpur micro-autorickshaw-motorbike crash     |     
  • One killed over loud music row at wedding party in Natore     |     
  • Fire breaks out at jacket factory in Chattogram     |     
  • Dhaka, Delhi agree to bring down border killings to zero     |     
  • Natore’s Baraigram OC closed over negligence in bus robbery case     |     

আমাদের ছোট্টগ্রাম: পূর্ব প্রকাশিতের পর

বিবিধ 2025-02-22, 9:16pm

1740237127923-56b30f7670552e513bab7a5478c285071740237400.jpg

Nazrul Islam, Toronto, Canada.



নজরুল ইসলাম -টরন্টো-কানাডা

আমরা সে যুগে ভাইবোনেরা  মাটিতে বিছানা পেতে সবাই মিলে একত্রে খাওয়াদাওয়া করতাম। আমার দুই বোন এবং দুই ভাই , আমি ছেলেদের মধ্যে বড় ছিলাম, মা খাওয়া দাওয়ায় আমাকে বিশেষ সুবিধা দিতেন,বড় মাছের টুকরা ,মাছের ডিম্, পিঠা তৈরী করলে আগে আমার ভাগ দিতেন। ভালো প্লেটে আমাকে খাওয়া দিতেন,যেন আমি এই ঘরে একজন মেহমান এ ভাবেই আচরণ করতেন।  সে যুগে  সবার  ঘরে  ভালো খাবার প্লেট বা পাত্র ছিল মেহমানের জন্য আলাদা যত্ন করে রেখে দিতো,নিজেরা মাটির বা টিনের  প্লেটে খাওয়া দাওয়া করতো । মেহমান আসলে ভালো খাওয়া এবং ভালো প্লেটে  খেতে দিতো; আমরা ভাইবোনরা  পানির গ্লাস শেয়ার করতাম, কোনো অসুখ বিসুখ হতো না।  ডাইনিং টেবিল তো সে যুগে সুদূর স্বপ্ন ছিল।  চায়ের দোকানে গিয়ে বসলে একই কাপ বার বার একটু পানিতে ধুয়ে চা দেয়া হতো, বালতির সে পানি দোকানদারকে পাল্টাইতে দেখি নি,  আমার মনে হয় আজকাল ও তাই , ভালোভাবে পরিষ্কার করার ব্যবস্থা ছিল না । মিষ্টির দোকানে কোত্থেকে এত এত মাছি ও মৌমাছি জড়ো হতো,  কিন্তু অসুখ হতো না।  আজকাল আমরা কত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখি, তথাপি অসুখ বিসুখ লেগে থাকে,সকাল বিকেল কত রকমের ঔষুধ ,হাই ব্লাড প্রেসার,ডায়াবিটিস,এটা সেটার জন্য বাসায় ঔষুধের দোকান খুলে বসি,কোনটার পর কোনটা খাবো সাজিয়ে রাখি ।  কিন্তু সে যুগে ঔষুধ বলতে কবিরাজি বা বনাজী ঔষুধ, তার সঙ্গে আমপাতা,তুলসী পাতা,কত রকমের লতাপাতা সংগ্রহ করে কবিরাজি ঔষুধের  সঙ্গে খাওয়া হতো। আজকালকার আধুনিক যুগে নতুন নতুন কত সব রোগ বালাই দেখা দেয় ,  সে যুগে এত এত রোগ বালাই ছিল না, মানুষ সুস্থ ছিল। গ্রামে সব কিছু নির্ভেজাল খাওয়াদাওয়া পাওয়া যেত, সে জন্য রোগ কম ছিল। 

২ ) ঘুম থেকে উঠেই মামা-চাচীরা চাউলের রুটি তৈরী করতো বা মুড়ি খেতে দিতো, সে যুগে আমাদের দেশে গমের চাষ হতো না, কাজেই গমের আটা রুটি সম্পর্কে জানতাম  না। মা-চাচীরা সারা বৎসরের জন্য মুড়ি এবং পিঠা তৈরী করে শুকিয়ে রেখে দিতো,মেহমান আসলে পিঠা ভেজে খেজুরের রস বা খেজুরের গুড়ের শিন্নি তৈরী করে মেহমানদের খেতে দিতো।   আমরা যারা স্কুলে যেতাম,  ৯টার ভিতর সকালের খাওয়া হয়ে যেত এবং খেয়ে স্কুলে যাওয়া বা সকালে পান্তা ভাত,রাতের তরকারি যা থাকতো তা দিয়ে খেয়ে বাপ-চাচা বা কাজের লোক  মাঠে কাজ করতে যেত । দুপুরে কাজ থেকে বা স্কুল থেকে এসে পুনরায় ভাত খাওয়া হতো, গ্রামের নিত্য তিন বেলা ভাত খেলে ও শরীরের ওজন বাড়তো না।  আজকাল মানুষ কত কিছু মেনে চলে,সে যুগে পুকুরের তাজা মাছ,ঘরের চাল,সবজি,ডিম্  সবই বাড়িতে পাওয়া যেত , নির্ভেজাল খাওয়া দাওয়ায় অসুখ হতো না।

৩) সে যুগে  গ্রামের মেয়েদের বিয়ে দিলে শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার সময় কান্নাকাটি করতো, আজকাল  করে  না বা করলে  ও সে ধরণের কান্নাকাটি করে না।  সে যুগে ১৯৫০-র দিকে খুবই অল্প বয়সে (১০-১৩ ) মেয়েদের বিয়ে দেয়া হতো, মেয়েরা বিয়ে বলতেই ভয়ভীতি -স্বামীর উপদ্রপ, সে তো সাবালিকা হয় নি।  স্বামীর সঙ্গে  মিলন এটা ভয়ভীতির ব্যাপার , তা ছাড়া শশুর -শ্বাশুড়ি,ননদ, এ জাতীয় লোকজন বা ঘর সংসার (রান্না)  করার অভিজ্ঞতা নেই, কাজের চাপ এ সব মিলিয়ে একটা গেঁড়াকলে পড়া ,অল্প বয়সের মেয়েরা অভ্যস্ত ছিল না। সে যুগের বিয়েতে মেয়েদের জন্য আনন্দের চেয়ে -নিরানন্দই বেশি ছিল, সে জন্য মেয়েরা বাবার বাড়ি আসলে আর ঐদিকে যেতে চাইতো না। শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার নাম শুনলেই ভয়ভীতি,কান্নাকাটি,  অনেক সময় স্বামীরা মেয়েদের রাতের অন্ধকারে মারধর করতো এবং নববধূ কান্নাকাটি করতে দেখেছি বা শুনেছি। আমার বাড়ির এক নব বধূকে(ভাবি) কাঁদতে দেখতাম, মাকে জিজ্ঞেস করি "মা,ওই ভাবি কেন  সারাদিন চোখের পানি ফেলে ", সবাই চুপচাপ থাকতো। মাঝে মধ্যে মা চোখ রাঙ্গিয়ে ধমক দিতো।  বর -কনে রাতে মুখ দেখাদেখি করবে,সে জন্য আগে থেকেই বর- টর্চ কিনে নিতো ,আজকাল দেশে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা, সে যুগে দেশে সন্ধ্যা হলেই অন্ধকার নেমে আসতো, যেন ভুতুড়ে রাত ।

৪) গ্রাম বাংলায় সে যুগে মানুষ পায়ে হেঁটেই চলাফেরা করতো,সারাদিন হাঁটাহাঁটি বা কাজ করে রাতে কাঠের খড়ম নিয়ে পা ধুয়ে বিছানায় যেত।  খড়মের আবার প্রকার ভেদ ছিল, কুমিল্লার কাঁঠালের দামি খড়ম যা অনেকদিন ব্যবহার করা যেত, গ্রামের সাধারণ কাঠের খড়ম  দামে সস্তা,তাও ব্যবহার করতো।  বিয়ে বাড়িতে বরযাত্রী বা কনে যাত্রীর সঙ্গে যে সব মেহমান যেত তাদের অনেকেই খালি পায়ে বা জুতা স্যান্ডেল হাতে করে নিয়ে বাড়ির কাছে পৌঁছামাত্র কারো পুকুরে পা ধুয়ে পায়ে দিতো,তাছাড়া মেহমানদের জন্য বিয়েবাড়িতে আলাদা পা ধোয়ার ব্যবস্থা ছিল।  আজকাল মানুষ ফ্যাশনেবল জুতা বা  স্যান্ডেল ব্যবহার করে, এতে পায়ে নানাহ সমস্যা হয়, সে যুগে এ ধরণের হতো না। মানুষ মেশিনের মতো সারাদিন হাঁটাহাটি বা কাজকর্ম করতো,তবুও আজকালকের মতো হাঁটু ব্যথা হতো না। 

৫ ) আজকালকার ছেলেমেয়ে কে মা, বাবা ভাইবোন বা আত্মীয়স্বজন বাজার থেকে রং বেরংয়ের দামি খেলনা কিনে উপহার দিয়ে থাকে।  আমাদের ১৯৫০-১৯৬০ র যুগে সে ব্যবস্থা ছিল না,বাংলা নব বর্ষে মেলা থেকে হাতে বানানো বিভিন্ন ধরণের খেলনা বা বাজার থেকে অথবা শহর থেকে কেউ এক আনা বা দুই আনা দামের  খেলনা  যেমন বাঁশি, ঘুড়ি, কাঠের বা মাটির তৈরী নানাজাতীয় কিনে দিতো,সে কি আনন্দ ! আমার তিন বৎসরের নাতি 'ইদ্রিস ' কত রকমের খেলনা নিয়ে  সারাক্ষন ব্যস্ত থাকে, খেলতে খেলতে অনেক কিছু শিখে,আমাদের যুগে জানার আগ্রহ থাকলে ও সুযোগ ছিল না। আমরা ভাইবোনরা মাটি দিয়ে এটা-সেটা তৈরী করতাম।    

বেগম সুফিয়া কামালের একটা কবিতার কটা লাইন মনে পড়লো ...

"আমাদের যুগে আমরা যখন খেলেছি পুতুল খেলা

তোমরা এ যুগে সেই বয়সে লেখাপড়া করো মেলা।

আমরা যখন আকাশের তলে উড়ায়েছি শুধু ঘুড়ি

তোমরা এখন কলের জাহাজ চালাও গগন জুড়ি। "

এ কবিতাটা বর্তমান যুগের ছেলেমেদের সঙ্গে অতীতের ছেলেমেয়েদের চমৎকার  তুলনা করা হয়েছে