
টাকা ছাপিয়ে দেয়ার পরও ঘুরে দাঁড়াতে না পারায় একীভূত করা হচ্ছে এক্সিমসহ দেশের ৫ ব্যাংক। শুধু এই পাঁচ ব্যাংক নয়, নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকা অন্যগুলোর ব্যাপারেও বিশেষ সিদ্ধান্ত নিতে চায় অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে একীভূতকরণের পরিবর্তে ঘুরে দাঁড়াতে না পারা ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার পক্ষে খাত বিশ্লেষকরা।
খেলাপি ঋণ, মূলধন ঘাটতি, সুশাসনের অভাব, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপসহ নানা কারণে বিপর্যস্ত দেশের ব্যাংকিং খাত। কমছে গ্রাহকের আস্থা। অবস্থার উত্তরণে কয়েক মাস আগে প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে দেয়া হয় এক্সিম, ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়নসহ দুর্বল পাঁচ বেসরকারি ব্যাংককে। তাতেও ঘুরে দাঁড়াতে না পারায় ব্যাংকগুলোকে এবার একীভূত করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এজন্য দরকার হতে পারে ৩৫ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকাই সরকারের কাছে চাইবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাকি অর্থ চাওয়া হবে আমানত বিমা তহবিলসহ আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকের কাছে। এছাড়া একীভূত করা আগেই এসব ব্যাংকের সব শেয়ার শূন্য করার পাশাপাশি ফেরত দেয়া হবে ক্ষুদ্র আমানত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, ডিপোজিট ইন্সুরেন্সে অনেক টাকা আছে। সরকার চাইলে বা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিবেচনায় কিছু কমপেনসেট দরকার হলে সেখান থেকে কিছু টাকা ট্রান্সফার করে নেয়া যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ধরুন এ, বি আর সি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। সাধারণ মানুষের কাছে এ, বি, সি-এর শেয়ার রয়েছে। এখন ৩টি কোম্পানির শেয়ারের অভিহিত মূল্য একই কিন্তু বাজারমূল্য তো এক না। তখন বাজারমূল্যকে এভারেজ দিয়ে একই আনা হবে।
এদিকে, বিশেষ নজরে রাখা আরও কয়েকটি ব্যাংকের ব্যাপারেও বিশেষ ভাবনার কথা জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তবে একীভূতকরণে ব্যাংক খাতে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান দেখছেন না আর্থিক খাত বিশ্লেষকরা।
এ বিষয়ে বিআইবিএমের সাবেক মহারিচালক তৌফিক চৌধুরী বলেন, এগুলোর পেছনে সরকার কেন আবার টাকা দেবে? কিছু দিন আগে সাপোর্ট দেয়ার পরও কি ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়িয়েছে? তাই এগুলোকে সাপোর্ট না দিয়ে, বরং তাদের কাছ থেকে একটা রিকভারি পরিকল্পনার সময় নিয়ে ছেড়ে দেয়া উচিত। এর মধ্যে ঘুরে দাঁড়াতে পারলে পারবে। আর না পারলে বন্ধ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য, গেল বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত দুর্বল পাঁচ ব্যাংকের আমানত কমেছে ২২ হাজার ৬০ কোটি টাকা। সুদসহ ঋণগ্রহীতার কাছে মোট বকেয়া ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হজার ৮৫৫ কোটি টাকা। এ সময়ে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা, যা মোট দেয়া ঋণের প্রায় ৭৭ শতাংশ।