News update
  • FAO Warns of ‘Silent Crisis’ as Land Loss Threatens Billions     |     
  • Indices tumble on both bourses amid broad-based sell-off     |     
  • BNP Names 237 Possible Candidates for Polls     |     
  • Bangladeshi leader of disabled people of world Dulal honoured     |     
  • UN Report Warns Inequality Fuels Global Pandemic Vulnerability     |     

দারিদ্র্যমোচন এবং নারীর ক্ষমতায়নে প্রযুক্তি

মতামত 2023-03-28, 2:42pm

technology-a-potential-breakthrough-for-making-superior-battery-tech-d496f7581cd0a5bea65b3b037f104bd91679992977.jpg

Technology - A potential breakthrough for making superior battery tech



ইমদাদ ইসলাম

মার্টিন কুপার ১৯৭৩ সালের ৩ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে মানুষের মাঝে হৈচৈ ফেলে দেন। তিনি ৯ ইঞ্চি লম্বা এবং ১.১ কিলোগ্রাম ওজনের একটি মোবাইল তৈরি করে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দেন।

মার্টিন কুপার ছিলেন মটোরোলা কোম্পানির একজন গবেষক। সে সময় তাঁর এ আবিষ্কারকে বিবেচনা করা হতো প্রযুক্তির উৎকর্ষতার চূড়ান্ত রূপ হিসেবে। বর্তমান প্রজন্মের কাছে এটি কোনো উল্লেখ করার মতো প্রযুক্তি না। এটা ইতিহাস, বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বিবেচনা করলে বর্তমান প্রজন্মের কাছে  এর আর্থিক, ব্যবহারিক ও সামাজিক কোনো মূল্য নেই। অথচ একটি প্রজন্মের কাছে এ মোবাইলটি ছিলো কতো গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি আদিম সভ্যতার প্রেক্ষাপটে আদিম মানুষরা যে লোহার হাতুড়ি এবং গাছের পাতা, ছাল বাকল ব্যবহার করতো এগুলোও ছিলো তাদের জন্য প্রযুক্তি। 

সময়ের পরিক্রমায় এগুলোর আমাদের কাছে কোনো অর্থ বহন করে না কিন্তু কোনো একটি প্রজন্মের কাছে এটাই ছিলো ইনোভেশন। সময়ের পরিবর্তন হচ্ছে, চাহিদারও পরিবর্তন হচ্ছে, পেশাগত দক্ষতার প্রয়োজনীয়তারও পরিবর্তন হচ্ছে।ভবিষ্যতের বিষয়গুলো আমাদের বর্তমানের ওপর দাঁড়িয়েই ভাবতে হবে। মনে রাখা দরকার অগ্রজ প্রজন্ম পথ তৈরি করে দিচ্ছে বলেই নতুন প্রজন্ম সেই মসৃণ পথে হাঁটতে পারছে।

প্রযুক্তি সব সময়ই পরিবর্তনশীল। এটি শুধু পরিবর্তনশীলই নয় প্রগতিশীলও। সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তি বদলে যাচ্ছে এবং নতুনভাবে বিকশিত হচ্ছে। প্রযুক্তি আসলে কি? প্রযুক্তি হচ্ছে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের প্রয়োগ যার মাধ্যমে মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে আরও সহজ, দ্রুত ও মসৃণ করে তোলার লক্ষ্যে ব্যবহার করে থাকে। টেকনোলজি শব্দটি উৎপত্তি হয়েছে গ্রীক শব্দ  ‘টেকনো’ যা শিল্প ও নৈপুণ্যে সাথে সম্পর্কিত এবং ‘ লগিয়া’ যা অধ্যায়ণের সাথে যুক্ত। এই দুই শব্দের মাধ্যমেই হয়েছে ‘টেকনোলজি’ যার অর্থ মনে করা হতো পদ্ধতিগত চিকিৎসা। বিগত দুই শতাব্দীতে প্রযুক্তি শব্দটি নানাভাবে অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে বদলেছে। বিশ্বজুড়ে  বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ফলে আমরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তির দেখা পাচ্ছি। আর এসব প্রযুক্তি মানব কল্যানে ব্যবহার করে মানুষের জীবনমানকে আরও উন্নত করেছে, জীবনযাত্রাকে দ্রুত ও সাচ্ছন্দ্যময় করে তুলেছে। গত শতাব্দীর চল্লিশের দশক মধ্যে প্রযুক্তি কেবলমাত্র শিল্পের উন্নয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার পরিবর্তে যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম, অস্ত্র, যোগাযোগ ও পরিবহন যন্ত্রগুলোকে নিজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছে। প্রযুক্তি মানুষকে বিপদ মুক্ত করছে।  নিরাপদ ও সাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন নিশ্চিত করছে। বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি ব্যবহারের কিছু সুবিধা- অসুবিধা রয়েছে। সুবিধাগুলো সবাই মানব কল্যাণে ব্যবহার করা হয়। আর অসুবিধাগুলোর বেশির ভাগই মানব সৃষ্ট। অসৎ উদ্দেশ্যে এগুলো ব্যবহার করা হয়। প্রযুক্তি মানুষকে তথ্যের সহজ অ্যাক্সেস দিয়েছে।

এছাড়াও প্রযুক্তি ব্যবহার সময় সাশ্রয়ী, কম খরচ,সহজ যোগাযোগ ব্যবস্হা এবং গতিশীলতা নিশ্চিত করেছে। স্মার্ট প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা আমাদের চিরায়ত সাংস্কৃতিকে হারাতে বসেছি।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি কোনো নীতিনৈতিকতা দিয়ে চলেনা। এটা চলে গানিতিক নিয়মে। ফলে আমাদের সমাজের দীর্ঘদিনের সামাজিক মূল্যবোধের এখানে কোনো গুরুত্ব নেই, এখানে গুরুত্বপূর্ণ হলো ব্যবসা। আমাদের অজান্তেই ঘটে গেছে এক ভয়াবহ ঘটনা। আর তা হলো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে সমাজের ব্যপক জনগোষ্ঠীর মানসিকতায় পরিবর্তন ঘটছে খুব দ্রুত। আমরা এখন এক মূহুর্তও প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া কোনো কিছু চিন্তা করতে পরিনা। আমরা নিজেদের অজান্তেই প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছি। আজকে জন্ম নেওয়া শিশুটি তার আগের প্রজন্মে জন্ম নেওয়া শিশুর থেকে অনেক  বেশি সুযোগ সুবিধা এবং সম্ভাবনা নিয়ে ভূমিষ্ট হয়েছে।

এখন আমারা জানার চেষ্টা করবো দারিদ্র্য কি? যখন মানুষ তার মৌলিক চাহিদা বা অপরিহার্য বস্তুগত চাহিদা পূরণ করতে পারে না অর্থাৎ মানুষ যখন তার অন্ন,বস্ত্র,বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার মতো ন্যূনতম চাহিদা পূরণে ব্যার্থ হয় সেরকম পরিস্থিতিকে দারিদ্র্য হিসেবে গণ্য করা হয়। দেশ স্বাধীনের সময় অর্থাৎ '৭২ সালে মোট জনসংখ্যার ৮২ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করতো। ২০০৫ সালে দারিদ্র্যের হার ছিলো ৪০ শতাংশ। আর এখন দারিদ্র্যের হার ২০.৫ শতাংশ এবং অতি দারিদ্র্যের হার ১০.৫ শতাংশ। ১৯৯০ সালের পর থেকে বিশ্বে চরম দরিদ্র মানুষের সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি কমেছে। ইতোপূর্বে এত কম সময়ে এত বেশি মানুষ আর কখনও দারিদ্র থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি। দারিদ্র্য নিরসনে শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি ফলপ্রসূ হয়ে থাকে। বিশেষ করে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষকে সচেতন এবং শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পারলে খুব সহজেই দারিদ্র্য নিরসন করা সম্ভব। তাই বর্তমান সরকার সমাজের অন্যন্য সকল শ্রণিসহ নারী শিক্ষার উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। নারী উন্নয়ন বিশেষত নারী শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করছে। সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা লক্ষ্যে নারীর অধিকার, ক্ষমতায়ন ও কর্মবান্ধব পরিবেশ অগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। তবে এখনো আমরা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারিনি। এ সমাজের সকল মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আমাদের নারীদের অবস্থান প্রশংসিত। একজন অযোগ্য মানুষ সে যত সুযোগ সন্ধানীই হোক না কেন সময়ের সাথে সাথে যদি নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে না পারে তাহলে তার অযোগ্যতা ও অদক্ষতা প্রকাশ পাবেই। আমরা এখন গ্লোবাল ভিলেজে বাস করি। বিশ্বে কোনো দেশ কিভাবে তাদের দারিদ্র দূরীকরণে কী কী ব্যবস্হা গ্রহণ করেছে তা কিন্তু আমারা খুব সহজেই জানতে পারছি এই প্রযুক্তির উৎকর্ষতার কারণে। 

বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনার দেশ। এদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর সম্ভাবনাময় মানুষকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে আগামীর চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।

এক সময় মনে করা হতো যারা প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা এলিট সমাজের মানুষ। এ ধারণা এখন ভেঙে গেছে। প্রযুক্তি সবার জন্য এটা এখন স্বীকৃত। প্রযুক্তি ছাড়া কোনো কিছুই সামনের দিকে এগুবে না। করোনা অতিমারি আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। আমারা প্রযুক্তির আশীর্বাদকে দেখেছি। প্রযুক্তির কল্যাণে ঘরে বসেই সব কাজ করা সম্ভব হয়েছে।

আমাদের নারীরা প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে  এফ কমার্স ও ফ্রিল্যান্সিং নিজেদের অবস্থান করে নিয়েছে। আগের তুলনায় কয়েক বছরে প্রযুক্তি বিষয়ে পড়াশোনায় নারীদের অংশ গ্রহণ কম বেশি দশ শতাংশ বেড়েছে। প্রায় বার শতাংশের মতো নারী প্রযুক্তিকে পেশা হিসেবে নিয়েছে। এখন প্রযুক্তিকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে যাতে এর সুফল সমাজের সকল মানুষ নিতে পারে। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ বিশেষ করে নারীদের প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহ দিতে হবে। আমাদের সমাজের নারীরা পারিবারিক বৈষম্যের শিকার। পরিবারের ছেলেকে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়।আর মেয়েকে পড়াশোনার জন্য সামান্য একটা ল্যাপটপ বা মোবাইলও কিনে দিতে অনিহা দেখা যায়। আমরা বুঝতে চাইনা যে একটি ল্যাপটপ বা একটি স্মার্টফোন একধরনের বিনিয়োগ।

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে যত প্রযুক্তি এসেছে তারমধ্য সবচেয়ে বিস্তৃত হয়েছে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস। এর কারণ হচ্ছে আর্থিক প্রয়োজন। এটি মানুষকে আর্থিক অন্তর্ভুক্ততে সাহায্য করে। এটি আর্থিক স্বাধীনতা দেয়,যা নারীদের জন্য ভীষণ প্রাসঙ্গিক। প্রযুক্তিতে মেয়েদের একটু সুযোগ দিলেই তারা পরিবারের জন্য অনেক কিছু করতে পারে। নারীর জন্য নিরাপদ প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি পরিবারেই প্রযুক্তি বৈষম্য দূর করে নারীর জন্য প্রযুক্তিবান্ধব পরিবেশ তৈরি করে অন্তর্ভুক্তমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারলে খুব সহজেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ তৈরি করা সম্ভব হবে। আর এর মাধ্যমে বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ।

পিআইডি ফিচার