Kazi Azizul Huq
Kazi Azizul Huq
Athar Babrul:
এবনে গোলাম সামাদ ছিলেন একাধারে সমাজবিজ্ঞানী, সাংস্কৃতিক বিশ্লেষক ও বুদ্ধিজীবী। বাঙালি মুসলিম ঐতিহ্যের স্বাতন্ত্র্যিক চিন্তার পুনর্জাগরণ ও পুনরুত্থানই ছিল তার লেখা ও চিন্তার মূলকেন্দ্র। এমন প্রবণতা সৃষ্টির মূলে ছিল তার প্রথম জীবনের নৃতত্ত্ব চর্চা, পাকিস্তান সৃষ্টির প্রাক-কালে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা, কু-রাজনীতি ও তাদের রক্তাক্ত বিদ্বেষ মনের কোণে নিজ জাতিসত্তার প্রতি সামাদের দাগ কেটেছিল। তাকে করে তুলেছিল একজন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সচেতন মানুষে।
একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে কলকাতা অবস্থান করে সেখানকার সময়কালীন অবস্থা নিজ চক্ষুতে অবলোকন করার পাশাপাশি বাংলাদেশ যুদ্ধে বহির্বিশ্বের দেশগুলোর কুটনৈতিক ঝগড়াঝাটিও তিনি খেয়াল করেছিলেন। ফলে, তার দেওয়া মুক্তিযুদ্ধের বয়ান চারপাশের মোহ কাটিয়ে এক ব্যতিক্রমধর্মী প্রস্তাবনা হাজির করে। সারাজীবনই তার লেখনিতে এমন বহিঃপ্রকাশই ঘটেছে।
তিনি ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা বুদ্ধিজীবী ও চিন্তক। কোন দল কিংবা নির্দিষ্ট মতের গন্ডিতে তার আবদ্ধতা ছিল না। পশ্চিমা জ্ঞানকান্ড বাঙালি সেক্যুলারকুল গোগ্রাসে গিলে খেলেও, তিনি তেমনটা করেন নি। তার লেখনি তে নিজের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মুসলমানিত্বকে শক্তিমত্তার সাথে তিনি তুলে ধরেছিলেন। সারাজীবন বাংলাদেশের ইতিহাসের ঐতিহ্যের আলোকে বাঙালি মুসলমানের জন্য মাটির নিকটবর্তী শিকড় খোঁজার চেষ্টা করে গেছেন। বাংলার সুলতানী ও মোগল স্থাপত্য ও শিল্পকলায় বাঙালি মুসলমানের আলাদা রীতি খোঁজার চেষ্টা করা ছিল তার অনন্য অবদান।
সমকালীন মার্কসবাদী ও সেক্যুলার বুদ্ধিজীবীদের বাঙালি মুসলিম বিরোধী বিভিন্ন ডিসকোর্স ও বয়ানের বিরুদ্ধে সামাদকে ওয়ান ম্যান আর্মির ভূমিকায় অবতীর্ণ করেছিল। তারপরও তিনি ছিলেন প্রচারবিমুখ, নিভৃতচারী। সেই রাজশাহীর লোকালয় থেকে আর বের হয়ে আসেন নি। শহুরে মানুষগুলো নাকি দুইরকম হয়। মহাপণ্ডিত কিংবা মহাভণ্ড। তিনি মনে করতেন, এই দুটোর কোনটাই তিনি নন। তাই এমন নিভৃতচারী বুদ্ধিজীবীর দেশের রাজধানী শহরে কখনো স্থায়ী হওয়ার ইচ্ছে জাগে নি।
সৈয়দ সাজ্জাদ হোসাইনদের মুসলিম সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী ছিলেন এবনে গোলাম সামাদ। অনেকে তাকে দার্শনিক বলে সক্রেটিসের সাথে তুলনা করেন। জানি না তা কতটুকু যায়৷ কিন্তু, তার অবদানের কথা চিন্তা করলে বুঝা যায়, তিনি একজন দার্শনিকের চেয়ে কম কাজ করেন নি। বাঙালি মুসলিম জাতির মানস গড়তে, পাঞ্জেরীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশের সীমানায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ যখন আদিপত্যবাদী ডিসকোর্স হিসেবে প্রদর্শিত হয়েছিল, তখন নৃতত্ত্ব, সমাজতত্ত্ব ও ইতিহাস বিশ্লেষণ করে তার খন্ডন করার প্রয়াস চালিয়েছেন। সারাজীবন এই সংগ্রাম ই ছিল তার অব্যাহত।
ভারতীয় হিন্দুত্ব-বাদ ও সাংস্কৃতিক হেজেমনির বিরুদ্ধে তার লেখনি ছিল সর্বদা সতর্কতামূলক। এপার বাংলাকে বাঁচতে হলে তিনি মনে করতেন ওপার বাংলার উপর রাখতে হবে জনগণ ও সরকারের দৃষ্টির তীক্ষ্ণতা। সংস্কৃতির বাঙালিয়ানার নামে রবীন্দ্র বন্দনার ছিলেন একজন কঠোর সমালোচক। যদিও তার সমালোচনায় ছিল পূর্ণ দক্ষতার ব্যবহার। যেন একজন সাধারণ মুসলমানের জায়গা থেকে করতেন জালে-মের বিরুদ্ধে মজ-লুমের সমালোচনা। ভাষার সাবলীলতায় তার লেখনি হয়ে উঠতো সোনায় সোহাগা।
তিনি বাংলাদেশের মত একটি মুসলিম কান্ট্রির পাশে ভারতের মত একটা দানব হিন্দুত্ব-বাদী রাষ্ট্রের উপস্থিতিতে সর্বদা এলার্মিং হিসেবেই দেখেছেন। তাই তার লেখনিতে সর্বদাই এই দিকে থাকতো বিশেষ নজর। ভারতের সাথে বাংলাদেশের আছে অনেক হিসাব নিকাশের সংকট। তাই এগুলো মোকাবিলা করতে গেলে লেগে যেতে পারে ভারতের সাথে বাংলাদেশের যু-দ্ধ। এদিক থেকে তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশী মুসলমানদের নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্যের আলোকে নিজেদেরকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলতে। না হলে, রাজনৈতিক পরাজয়ের আগে সাংস্কৃতিক নির্মম পরাজয়ের স্বাদ ভক্ষণ করা ছাড়া উপায় থাকবে না।
১৯২৯ সালের আজকের এইদিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এই মহান ব্যক্তির রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।
এবনে সামাদ আজাদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সংগ্রহ করুন ( বহুমাত্রিক এবনে সামাদ আজাদ) বইটি। সংগ্রহের লিংক: https://rkmri.co/M2STe0S3lSpe/
রকমারি থেকে ঘরে বসে সংগ্রহ করুন এবনে সামাদ আজাদের বই—
১. আত্মপরিচয়ের সন্ধানে: https://rkmri.co/INeSTEe0AS02/
২. বাংলাদেশে ইসলাম: https://rkmri.co/2yAS2TRM00me/
৩. বাংলাদেশ কথা: https://rkmri.co/TymleymIyepR/
৪. বাংলাদেশ : সমাজ সংস্কৃতি রাজনীতি প্রতিক্রিয়া: https://rkmri.co/RTpEep2llMEA/