News update
  • Six put on remand in metro rail station vandalizing case     |     
  • Ex-Ducsu VP Nur sent to jail in Setu Bhaban vandalising case     |     
  • Mali bus crash kills 16, injures 48     |     
  • UN chief calls for global action on extreme heat     |     

চোখের যত্নে অপ্টোমেট্রিস্টদের ভূমিকা

মতামত 2024-05-26, 10:40pm

dr-93b147af4534203ac6a60c4bee29e7f91716741627.png

Dr. Mohd Mizanur Rahman



ডক্টর মহাম্মদ মিজানুর রহমান 

চোখ আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল অঙ্গগুলির একটি। চোখের সঠিক যত্ন ও পরিচর্যা করা আমাদের দৃষ্টিশক্তি সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। এই ক্ষেত্রে অপ্টোমেট্রিস্টদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমান সময়ে মানুষের জীবনযাত্রা ও কাজের ধরন পরিবর্তিত হওয়ায় চোখের যত্নের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। দীর্ঘ সময় কম্পিউটার, মোবাইল ও টেলিভিশনের সামনে কাটানোর ফলে চোখের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অপ্টোমেট্রিস্টদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

অপ্টোমেট্রিস্ট হলেন প্রাথমিক চোখের চিকিৎসক, যারা চোখের রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা এবং ব্যবস্থাপনার কাজে নিযুক্ত থাকেন। তারা চোখের বিভিন্ন সমস্যা যেমন মায়োপিয়া (দূরদৃষ্টি সমস্যা), হাইপারোপিয়া (কাছের দৃষ্টি সমস্যা), অ্যাসটিগমাটিজম এবং প্রেসবায়োপিয়ার মত সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরামর্শ প্রদান করে থাকেন।

অপ্টোমেট্রিস্টদের প্রধান কাজ হল চোখের পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা করা এবং রোগ নির্ণয় করা। এই পরীক্ষার মাধ্যমে তারা রোগীর চোখের সামগ্রিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা পান। এছাড়াও, অপ্টোমেট্রিস্টরা চোখের গ্লুকোমা, ক্যাটারাক্ট এবং ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির মতো জটিল রোগগুলি সনাক্ত করতে সাহায্য করে।

একটি নিয়মিত চোখের পরীক্ষা করার মাধ্যমে অপ্টোমেট্রিস্টরা চোখের সমস্যাগুলি প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করতে সক্ষম হন। এর ফলে সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা যায় এবং দৃষ্টিশক্তি ক্ষতির ঝুঁকি কমে যায়। অপ্টোমেট্রিস্টরা রোগীদের সঠিক চশমা বা কন্টাক্ট লেন্স নির্বাচনেও সাহায্য করে, যা দৈনন্দিন জীবনে স্পষ্ট দৃষ্টি নিশ্চিত করে।

বর্তমান সময়ে, ডিজিটাল স্ক্রিনের অতিরিক্ত ব্যবহার এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের কারণে চোখের সমস্যার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সমস্যাগুলির সমাধানে অপ্টোমেট্রিস্টদের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তারা রোগীদের সঠিক পরামর্শ প্রদান করে, যেমন প্রতি ২০ মিনিট পর পর ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরের কোন বস্তু দেখার পরামর্শ দেন (২০-২০-২০ নিয়ম), যা চোখের ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করে।

অপ্টোমেট্রিস্টরা শিশুদের চোখের যত্নেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। শৈশব থেকেই নিয়মিত চোখের পরীক্ষা করার মাধ্যমে শিশুরা সুস্থ দৃষ্টিশক্তি নিয়ে বড় হতে পারে। এছাড়া, তারা শিশুদের চোখের সমস্যা সম্পর্কে অভিভাবকদের সচেতন করেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসার পরামর্শ দেন।

সাধারণ মানুষের চোখের যত্নে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ নিশ্চিত করতে অপ্টোমেট্রিস্টদের ভূমিকা অপরিহার্য। তাদের দক্ষতা এবং পেশাদারিত্বের মাধ্যমে আমাদের চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখা সম্ভব। অতএব, নিয়মিত চোখের পরীক্ষা করা এবং অপ্টোমেট্রিস্টদের পরামর্শ অনুযায়ী চলা প্রত্যেকের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমান যুগে চোখের যত্ন ও সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে চোখের যত্নের ক্ষেত্রে অপ্টোমেট্রিস্টদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অপ্টোমেট্রিস্টরা চোখের স্বাস্থ্য ও দর্শন সংক্রান্ত সমস্যাগুলি নির্ধারণ ও চিকিৎসায় বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত।

অপ্টোমেট্রিস্টদের কাজ ও দায়িত্ব

অপ্টোমেট্রিস্টরা মূলত চোখের পরীক্ষা ও সঠিক চশমা বা কনট্যাক্ট লেন্স নির্ধারণ করে থাকেন। তাঁরা চোখের সাধারণ ও জটিল সমস্যা শনাক্ত করতে পারেন এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সাধারণ চোখের সমস্যা যেমন মায়োপিয়া (নিকট দৃষ্টি), হাইপারোপিয়া (দূর দৃষ্টি), অ্যাস্টিগমাটিজম এবং প্রেসবায়োপিয়া সনাক্ত করা ও তাদের চিকিৎসা করা তাঁদের কাজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া, অপ্টোমেট্রিস্টরা চোখের রোগ যেমন গ্লুকোমা, ক্যাটারাক্ট, এবং ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির মতো গুরুতর সমস্যাগুলিও শনাক্ত করতে সক্ষম।

বাংলাদেশে অপ্টোমেট্রিস্টদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হলেও, তাদের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। দেশের অধিকাংশ মানুষ এখনও চোখের যত্ন সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখে না। প্রাথমিক পর্যায়ে চোখের সমস্যা চিহ্নিত ও চিকিৎসা করা না হলে তা ভবিষ্যতে জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে চোখের যত্নের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। এইসব অঞ্চলে অপ্টোমেট্রিস্টদের উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামের মানুষদের মাঝে চোখের যত্ন ও রোগ নির্ণয়ের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে তারা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন। এছাড়া, বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে নিয়মিত চোখের পরীক্ষা ও সচেতনতা কর্মসূচি পরিচালনা করা অপ্টোমেট্রিস্টদের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত।

বাংলাদেশে অপ্টোমেট্রিস্টদের প্রয়োজনীয়তা:

বাংলাদেশে চোখের সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। শহরাঞ্চল থেকে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত প্রায় সব জায়গাতেই চোখের চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে। বিশেষ করে বয়স্কদের মধ্যে ক্যাটারাক্ট ও গ্লুকোমা রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। এছাড়া, শিশুদের মধ্যে রঙের দৃষ্টি সমস্যা এবং অন্যান্য চোখের সমস্যা নির্ধারণ করতেও অপ্টোমেট্রিস্টদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

চোখের যত্নে সচেতনতা বৃদ্ধি:

অপ্টোমেট্রিস্টদের এক অন্যতম ভূমিকা হল চোখের যত্ন সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। তাঁরা নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করার গুরুত্ব, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, এবং চোখের ব্যায়ামের উপকারিতা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে কাজ করে থাকেন। অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় চোখের ক্লান্তি ও চোখের সমস্যাগুলি সঠিক তথ্য ও সচেতনতার অভাবে আরও জটিল হয়ে যায়।

প্রযুক্তির ব্যবহার:

বাংলাদেশে অপ্টোমেট্রিস্টরা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে চোখ পরীক্ষা করে থাকেন। ডিজিটাল রেটিনাল ফটোগ্রাফি, অপটিক্যাল কোহেরেন্স টোমোগ্রাফি (OCT), এবং অটোমেটেড রিফ্রাকশন সিস্টেমের মাধ্যমে তাঁরা আরও নির্ভুলভাবে রোগ নির্ণয় করতে সক্ষম।

অপ্টোমেট্রিস্টদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ:

বাংলাদেশে অপ্টোমেট্রিস্টদের যথাযথ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পেশাদার অপ্টোমেট্রিস্টরা প্রশিক্ষিত হয়ে বেরিয়ে আসেন এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে সেবা প্রদান করেন।

অপ্টোমেট্রিস্টদের অবদান ও কর্মক্ষেত্রের গুরুত্ব শুধু শহরাঞ্চলে সীমাবদ্ধ নয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছেও চোখের সেবা পৌঁছে দিতে তাঁদের ভূমিকা অপরিসীম। বাংলাদেশের চোখের যত্ন ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অপ্টোমেট্রিস্টদের এই কার্যক্রম আরও বিস্তৃত হওয়া উচিত।

অপ্টোমেট্রিস্টদের এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও সেবা আমাদের চোখের সুস্থতা ও সুরক্ষায় নতুন দিগন্তের উন্মোচন করছে, যা আমাদের সমাজের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনছে।

বাংলাদেশে চোখের যত্ন ও অপ্টোমেট্রিস্টদের ভূমিকা আরও সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে। স্বাস্থ্যসেবা খাতে অপ্টোমেট্রিস্টদের আরও অন্তর্ভুক্ত করা, তাদের প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কর্মশালা ও সেমিনারের আয়োজন করা হচ্ছে।

অপ্টোমেট্রিস্টদের কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চোখের যত্ন সেবা পৌঁছানো সম্ভব হবে। এতে সাধারণ মানুষের চোখের সমস্যা নিরাময় এবং চোখের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

চোখের যত্ন ও অপ্টোমেট্রিস্টদের ভূমিকা বাংলাদেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সেবার মাধ্যমে চোখের সমস্যা নিরাময় এবং প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সম্ভব। সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগের মাধ্যমে চোখের যত্নের সেবা আরও সম্প্রসারিত করা সম্ভব হবে এবং দেশের মানুষদের সুস্থ দৃষ্টিশক্তি নিশ্চিত করা যাবে।

(ডক্টর মহাম্মদ মিজানুর রহমান ,  অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, ম্যানেজমেন্ট এন্ড সাইন্স ইউনিভার্সিটি , মালয়শিয়া)