Qazi Kamal
দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর যাবত বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতার দখলে থাকা স্বৈরাশাসক হাসিনার পতনে দেশবাসী ৫ আগস্ট এক অতুলনীয় আনন্দ উৎফুল্লতার স্বাদ পেয়েছে । ৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের আনন্দ উৎসবের চেয়ে ৫ আগস্টের উৎসব কোন অংশেই কম ছিলনা । একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ যেমন ছিল পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্য নীতির বিরুদ্ধে এবারের বাংলাদেশের পাঁচ আগস্টের বিজয়ও ছিল ঠিক বৈষম্য নীতির বিরুদ্ধে । এখানে অবশ্যই একটি প্রধান এবং উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল গত ১৬ বছরে বাংলাদেশের গনতন্ত্রকামি বিরোধীদল গুলি এই ফ্যাসিবাদী হাসিনার বিরুদ্ধে অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করে সরকারের গুম খুন জেল সহ নানান নির্যাতনের স্বীকার হয়েও পিছপা হয়নি এবং বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ও মিডিয়া এ ঘটনার উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে আসছিল আলজাজিরা সহ বিশ্বের অনেক মিডিয়ায় তা প্রচারিত হয় । পাকিস্তানী স্বৈরতন্ত্রের শাসকগোষ্ঠী আত্মসমর্পণ করে বিদায় নিয়েছিল কিন্তু বাংলাদেশের স্বৈরচারী গোষ্ঠী পালিয়ে গিয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিয়েছে আবার কেউ দেশের ভেতর আত্মগোপন করে আছে ।
স্বৈরাচার হাসিনা সরকার বিগত ১৬ বছরে দেশের প্রতিটি স্তরে তার নিজস্ব লোক এমনভাবে প্রতিস্থাপন করেছিল তা ছিল বিস্ময়কর, ,যোগ্য মেধাবীরা ছিল প্রায় সম্পূর্ণ অবহেলিত । বিচারবিভাগ থেকে শুরু করে প্রশাসন পুলিশ বিভাগ সহ সব সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাগণ ছিল স্বৈরশাসকের বাছাই করা ।
বিগত ১৬ বছরের আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে সরকার ছিল পুরোপুরি পর্যুদস্ত কিন্তু আমরা হাসিনাকে হটাতে পারিনি , এর ধারাবাহিকতায় যখন আমাদের দেশের ছাত্রসমাজ বৈষম্যহীন কোটা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ল আমরাও পেছন থেকে তাঁদেরকে সাহস উৎসাহ দিয়ে এসেছি বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক ফ্রন্ট , বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল , বি এন পি সহ গনতন্ত্রকামি সকল দল তাদের বক্তব্যে স্বৈরাচার হাসিনার পদত্যাগ , সুষ্ঠ নির্বাচন এবং ছাত্রদের বৈষম্যহীন কোটা আন্দোলনের দাবীকে যৌক্তিক বলে দাবি করে ছাত্রদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে । রংপুরের শহিদ আবু সাইয়িদের বীরত্ব গাথা আত্মাহুতি ছাত্রজনতার বুকে দীপশিখার মত জলে উঠে সারা দেশের ছাত্র জনতা রাজপথে নেমে আসে লক্ষ লক্ষ ছাত্র জনতা মৃত্যুকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র শ্লোগান আর হুঙ্কার দিয়ে সরকারের নাৎসি বাহিনীকে পরাজিত করে ,, বিশ্বের ইতিহাসে যা ছিল বিরল ঘটনা ।
আজ আমরা এখানে সমবেত হয়েছি শুধু একটি কারনে , তা হল আমদের একাত্তরের বিজয়ের ফসল লুটে নিয়েছিল আওয়ামী চক্র ,নব্বইয়ের গনভুয়থানের ফসলও এসেশের মানুষ ভোগ করতে পারেনি যার ফলে হাসিনার মত নিকৃষ্ট একটি স্বৈরশাসক দীর্ঘ ষোলটি বছর এদেশের মস্নদে বসে দেশের সব সম্পদ লুটেপুটে খেয়েছে । দেশের ভাণ্ডার আজ রক্তশূন্যতায় ভুগছে । ব্যাঙ্কে আমানতকারিদের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে, লক্ষ লক্ষ কোটি বিদেশি ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে গেছে । মেঘা প্রকল্পের নামে বিভিন্ন প্রকল্পের প্রায় অরধেক টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে অদের বিদেশি একাউন্টে পাঠিয়েছে । ,
দেশে এখন নোবেলজয়ী বিশ্বে সমাদৃত ড মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্তে আছেন । আমরা মনে করি গত ৫৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশী যোগ্যতাসম্পন্ন রাষ্ট্র প্রধান আমদের দেশ পরিচালনার দায়িত্বে এখন আছেন । বাকী অন্যান্য উপদেষ্টারাও বাংলাদেশে বেশ সমাদৃত ।
তাই আমাদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ব্যথা যন্ত্রনা অপূরণীয় আশা আকাঙ্ক্ষাগুলি বাস্তবায়ন করা র এখন সঠিক সময় । সে লক্ষ্যে আমরা আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে নিম্নে কতগুলি দাবী পেশ করছি যা এই মুহূর্তে অনুসরন করা একান্ত জরুরী ।
১, প্রথম কাজ হল একটি আস্থা ভোটের মাধ্যমে এ সরকারের বৈধতা প্রতিষ্ঠা করা ।
২। সংবিধান পুনর্নির্মাণ করা ।
৩, দেশের সব লুণ্ঠিত অর্থ বিদেশ থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা ।
৪, বিগত ১৬ বছরে পিলখানা হত্যা সহ যত গুম খুন ও দুর্নীতি হয়েছে তার দ্রুততম সময়ে সুষ্ঠ বিচার করা ।
আসামী পক্ষ যদি আদালতে হাজিরা দিতে, রায় মেনে নিতে অসম্মতি জানায় তাহলে তাদের দেশে থাকা স্থাবর অস্থাবর সব সম্পদ সারকারের সম্পদ হিসাবে ঘোষণা করা এবং তাদের বাংলাদেশী নাগরিকত্ব বাতিল করা ।
৫, আমাদের দেশে পুলিশের অনেক কার্যক্রম মানুষকে হতাশ করে তাই পুলিশ বাহিনীকে জনবান্ধব হিসেবে প্রশিক্ষন দেয়া ,অন্যান্য দেশের পুলিশ কিভাবে কাজ করে তা তা প্রশিক্ষনের মাধ্যমে তাদের মন মানসিকতার উন্নতি করা ।
৬, অনেক পুলিশ সরকার ঘোষিত সময় সীমার মধ্যে যোগ দেয়নি ,তাদেরকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা এবং নুতন পুলিশ জরুরী ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া । এই প্রসঙ্গে আরও বলা প্রয়োজন এই পুলিশ বাহিনীকে সম্পূর্ণ মানবিক পুলিশ হিসেবে প্রশিক্ষন দিয়ে নিয়োগ দেয়া ।
৭, দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত প্রতিটি উপজেলায় স্থাপন। প্রতিটি আদালতে দুইজন বিচারক নিয়োগ দেয়া, যাতে একজন ছুটিতে বা প্রশিক্ষনে গেলে অন্যজন আদালতের বিচারকারজ্য চালিয়ে যেতে পারে । আদালতে জুরি প্রথা চালু করা , প্রতিটি মামলা এক বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি করা । জেলাআদালতগুলিকে উচ্চ আদালতের মর্যাদা দেয়া । মামলার বাদীকে যেন তিনবারের বেশী আদালতে যেতে না হয় সে ব্যবস্থা করা ।প্রত্যেক নাগরিকের মানবাধিকার নিশ্চিত করা ।
৮,, দুদক ও ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তার সংখ্যা বাড়িয়ে উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত করা ,কারন দুর্নীতি এবং দ্রব্যমূল্যের দাম ও মান নিয়ন্ত্রণ একটি জাতীয় সমস্যা ।
৯, প্রান্তিক কৃষক ,খামারি, এবং পোশাক শ্রমিক সহ নিম্ন আয়ের সব মানুষের সাধ্যমত নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্য রেশনের মাধ্যমে দেয়া । বিশেষ করে কৃষক, খামারি এবং শ্রমিকরা দেশের উৎপাদনের সাথে জড়িত ,তাদের উৎপাদিত পন্যের শক্তিতেই দেশের জিডিবি শক্তিশালী হয় । প্রান্তিক কৃষক ও পোল্ট্রি খামারিদের বিনা সুদে ব্যাঙ্ক ঋণের ব্যবস্তা করা যাতে গ্রাম বাংলায় কর্ম চাঞ্চল্যতা সৃষ্টি হয়।
১০,, দেশের শ্রমশক্তিকে বিদেশে পাঠানোর আগে তাদের দক্ষ হিসেবে গরে তোলা খুবই জরুরী এবং অসাধু আদ্ম বেপারীদের হাত খপ্পর থেকে তাঁদেরকে মুক্ত করে সরকারের বিশেষ উদ্যোগে তাঁদের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করা এবং ভারত /নেপালের শ্রমিকেরা যে মুল্যে বিদেশ যায় ,তাদের জন্যও এরক্ম মুল্যের ব্যবস্থা করা । রেমিটেন্স বিমানবন্দরে হয়রানী সহ কিছু কাজ বর্তমান সরকার করছেন তা প্রশংসার যোগ্য। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা বিমান যাত্রিদের জন্য কম মুল্যে এবং নিরাপদ ভাল হোটেল বিমান বন্দরের পাশে নেই । যে সকল যাত্রীর ১০/১২ ঘণ্টা অপেক্ষা করে বিমানে উঠতে হয় তাদেরকে বিমানবন্দরের লবিতে বসে থাকতে হয় আর না হয় উচ্চ মুল্যে আশে পাশের হোটেলে ৪/৫ ঘণ্টার জন্য থাকতে হয়, সেখানে খাবারের দাম অত্যন্ত বেশি ( ৭০/৮০ গ্রাম ওজনের একটি পুঁটি মাছের তরকারি ১৫০ টাকা) । তাই বিমানবন্দরের পাশে (পায়ে হেটে যাতায়াত করা যায় ) একটি বহুতল বিশিষ্ট আবাসিক হোটেল একান্ত প্রয়োজন, যেখানে অন্তত ৫০০ টি ডাবল ব্যাডের রুম থাকবে ,যাতে আত্মীয় স্বজন নিয়ে কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নেয়া যায় এবং সেই হোটেল পরিচালনার জন্য মুল দায়িত্বে সেনাবাহিনীর বা বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়োজিত করা ।
১১,, দেশের আবাসিক সমস্যা নিরসনে শহর গ্রাম সর্বত্র বহুতল বিশিষ্ট গনকলোনি নির্মাণ করা এখন একান্ত কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে । কেননা আমদের দেশের ভূমি অনুপাতে জনসঙ্খ্যা অনেক বেশী । প্রবাসীরা অনেকেই বিদেশ থেকে এসে প্রথমেই একটি জমি ক্রয় করে এবং সেখানে বাড়ী নির্মাণ করে । এই কারনে গ্রামে এখন দিন দিন কৃষি জমি কমে আসছে । সার্বিক সুবিধা সহ গনকলোনি নির্মিত হলে সল্প আয়ের প্রবাসীরা অবশ্যই এই কলোনির বাসিন্দা হবে । দেশের কৃষি জমির উপর চাপ কমে আসবে ।
১২, আমাদের অভিন্ন ৫৪ টি আন্তর্জাতিক নদীর পানির হিস্যা জাতিসংঘের মানদণ্ড অনুযায়ী আদায় করে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা ।
১৩, সীমান্ত হত্যা চিরতরে বন্ধ করার ব্যবস্থা করা ।
১৪ বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষার সুযোগ সপ্রসারিত করা। আমাদের দেশের যুব সমাজকে সামরিক প্রশিক্ষন দেয়া এখন জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে , বিদেশী শক্তিগুলি আমাদের দেশের উপর চোখ রাঙ্গায় শুধু আমাদের সামরিক দুর্বলতার কারনে । তাছাড়া আমাদের সরকারগুলি যখন দুর্নীতিতে মোহগ্রস্ত হয়ে দুঃশাসন চালায় তখন বাহিরের কিছু অপশক্তি নানান হুমকি ধামকি দেয় ।
সামরিক প্রশিক্ষিত যুবসমাজকে সহযোগী হিসেবে কাজে লাগাতে পারব। আর আরও একটি বিশেষ বিশেষ কারন হল , আমাদের যুব সমাজের অনেকেই মানবিক জ্ঞান , শৃঙ্খলা , দেশপ্রেম এবং সততা বিষয়ে অনেক পেছনে এবং এই প্রশিক্ষণে তাদের এই বিষয়গুলির অনেক উন্নতি হবে বলে মনে করি । গত কিছুদিন আগে প্রথম আলোর জরীপে উঠে এসেছে বাংলাদেশের যুবসমাজের প্রায় ৬২% পর্ণ ভিডিওতে আসক্ত যা একটি জাতীর জন্য ভয়ংকর চিত্র ।
আশা করি ,উপরোক্ত বিষয়গুলি সরকার আমলে নিলে আমাদের আগামি দিনগুলি অনেক সুন্দর ও স্বচ্ছ হবে ।
কাজী মোস্তফা কামাল
কাটারাপাড়া , দাউদকান্দি ,কুমিল্লা
মোবাইল ,০১৮৩১১৫৫৮৯২ , ঈমেইল qzkamal@gmail.com