News update
  • BNP faces uphill task to reach seat-sharing deal with allies     |     
  • Bangladesh rejects India’s advice; vows free, fair polls     |     
  • Hadi’s condition very critical: Singapore Foreign Minister     |     
  • Asia-Pacific hunger eases, Gaza pipeline fixed, Europe hit by flu     |     
  • UNRWA Situation Report on Crisis in Gaza & Occupied West Bank     |     

মানুষ কম বেশি কল্পনার জগতে বাস করে:

মতামত 2025-04-11, 12:38am

nazrul-islam-enayetpur-d535aa1c26118458cd6080737a9f5aca1744310290.jpg

Nazrul Islam



নজরুল ইসলাম

কৈশর বা শৈশব থেকে আমি স্বপ্ন বা কল্পনা প্রিয় মানুষ, এখনও এই মুদ্রা দোষ ছাড়তে পারি নি।

আমি হয়তো গাড়ি নিয়ে বাসা থেকে কোথায় ও রওয়ানা হয়েছি, রাস্তার কোথায় কি হচ্ছে আমার দৃষ্টি এড়াতে পারে না,সে দিকে তাকিয়ে এক ঝলক দেখি বা বাংলাদেশে ছোটকালে মা কখন কি  বলেছিলো চিন্তা করছি বা অন্য কিছু ভাবছি আর গাড়ি চালাচ্ছি । আমি কয়েক মিনিট থেকে চুপ, স্ত্রী পাশে বসা, বলে -তুমি গাড়ি চালাবে না এদিক সেদিক দেখবে ? যতই বলি আমি রাস্তার পরিস্থিতি এবং ট্রাফিক সঙ্কেত (সিগন্যাল) দেখেই গাড়ি চালাচ্ছি , বিশ্বাস করে না। বলে তুমি বেখেয়ালি; আচ্ছা কেউ কি ১০০% সতর্ক হয়ে গাড়ি চালাতে পারে ? যদি তাই হতো, রাস্তায় এত এত দুর্ঘটনা কেন ? এই যে সেদিন আমি স্টপ

সিগন্যাল এ দাঁড়িয়ে আছি, এক যুবক ছোকরা এসে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ঝামেলা বাজিয়েছিল, ওটা কি আমার নিয়ন্ত্রণে ? লোকজন জোরে জোরে গান বাজিয়ে গাড়ি চালায়, স্পিড দিয়ে ওভারটেক করে চলে যায়,রাস্তার কোনো নিয়মকানুন মানে না। আমি গাড়ি চালাবো একটু রিলাক্স করে , এ দিক সেদিক খেয়াল করি। তবে কিছু নিয়ে ভাবনা সেতো আছেই , একটু ভাবি,হয়তো কিছু একটা লিখতেছি,একটা নতুন কিছু যোগ করতে হবে, এ সব ভাবি। নতুবা আর কি ?

অনেক দিনের পুরানো স্মৃতি;আমি রঘুনাথপুর স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র, আমাদের স্কুলে চাঁদপুর মহকুমা অফিসার (SDO ) এলাকার এক হত্যা মামলার তদন্ত করতে সেছেন।৩০-৩৫ বৎসরের যুবক অফিসার, দেখার জন্য স্থানীয় লোকজন ভিড় জমিয়েছে , এ ছাড়া স্কুলের ছাত্র-শিক্ষক ও পেছনে ছুটছে ।

কানাডাতে প্রধানমন্ত্রী আসলেও বোধ হয় এত লোক সমবেত হয় না। আমি অবাক হয়ে ওকে দেখছি আর মনে মনে ভাবছি ওর মতো একজন নামিদামি অফিসার হতে পারলে ভালোই হতো। কিন্তু আমি কি হতে পারবো ? ছোটকাল থেকেই স্বপ্ন দেখি,হয়তো স্বপ্ন দেখেছি বলেই নিজেকে একটু আলাদা করে তৈরী করতে পেরেছি এবং আজ বিশ্বের একটি উন্নত দেশে বাস করছি ।

আমি গ্রামগঞ্জের অতি সাধারণ ঘরের ছেলে, লুঙ্গি ও অতি সাধারণ শার্ট পড়ে , খালি পায়ে স্কুলে গিয়েছি ,এই স্বপ্ন দেখা কি আমার জন্য ? এটা অনেকদিন পর্যন্ত আমার মনে ভাবান্তর সৃষ্টি করেছিল। ৮ম শ্রেণী পড়ার সময় আমার চাচাতো ভাই কাদের (ঢাকা ইউনিভার্সিটি ছাত্র )কে একদিন আমার কল্পনার কথা বললাম, উনি হেসে খুন; বললেন তুই SDO হবি ? কোত্থেকে একটা ফর্ম এনে বলে, এটা পূরণ করে দে, তুই প্রতিমাসে একটা ঢাকা সোভিয়েত সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে বাংলা সুন্দর মেগাজিন ফ্রি পাবি। বেশি বেশি পড়াশুনা করবি, তাহলে SDO হতে পারবি। উনি যেখানে যান, আমি পিছনে 

পিছনে ছুটি , পালাখাল বাজার , কচুয়া বাজার,চায়ের দোকানে লোকদের সামনে আমাকে ক্ষেপিয়ে তুলেন, লোকজন হাসে, আমি লজ্জায় মাথা হেট্ করি । অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি সহ বড় বড় লিখকদের লিখা ম্যাগাজিন ডাকযোগে এই গ্রামে গঞ্জে স্কুলের ঠিকানায় পাঠানো হতো , আমিতো খুশিতে দিশেহারা, স্কুলে নিয়ে যাই, সবাই অবাক হয়ে সুন্দর ছবি দেখে। অনেক জ্ঞানী লোকের লেখা, শক্ত বাংলা তত ভালো বুঝতাম না। ক্লাসে বন্ধুদের দেখালে অবাক হয়ে বলে কে পাঠায় তোকে ? আমি তো কিছু জানিনা আমার কাজিন জানে বলে পাশকাটিয়ে যাই। এর সঙ্গে আমার উৎসাহ এবং কল্পনার জগৎ আরও বেড়ে গেলো।

নীহাররঞ্জন গুপ্তের লেখা (ডিটেক্টিভ)বই স্কুল লাইব্রেরি থেকে নিয়ে গিয়ে বিচানায় হাঁটু গেড়ে পড়তাম, আর নিজেকে আলাদা জগতের মানুষ হিসাবে ভাবতাম। ওই যে গ্রাম্য কথা আছে  “খোয়াবে মক্কা যায়” আমার অবস্থা ও অনেকটা তাই। আসলে গ্রামে গঞ্জের ছেলেমেয়েরা এ জাতীয় অবাস্তব চিন্তা করে; প্রশ্ন করা হলো তুমি কি হতে চাও ? না ভেবে বলে দেবে ইঞ্জিনিয়ার বা ডাক্তার হবো, একবার ও চিন্তা করে না একজন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে হলে কতখানি ভালো পড়াশুনা করতে হয়। ইংরেজি ২০১৫, আমি আমার গ্রামের পাশের একটা হাই স্কুলে ১০ম শ্রেণী কক্ষে ঢুকে সব ছেলেমেয়েকে এক এক করে

প্রশ্ন করেছিলাম তুমি জীবনে কি হতে চাও ? আমি অবাক হয়ে তাকালাম, একজন ও ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার ব্যতীত ছাত্র ছাত্রী পাই নি।

যা বলতেছিলাম, মানুষ কল্পনার জগতে বাস করে , ভাব, স্বপ্ন বা কল্পনা না থাকলে কেউ কিছু করতে পারে না। যে মানুষের স্বপ্ন নেই, সে মৃত, তাকে দিয়ে কিছুই হবে না। একজন কবি বা সাহিত্যিক সব সময় স্বপ্নের রাজত্বে বাস করে। এই যে সকালে সূর্য উঠে,মেঘে ঢেকে যায়, ক্ষানিক বৃষ্টি, ক্ষণিক সূর্য দেখার লুকোচুরি খেলা , সন্ধ্যার সূর্য ডুবার লাল আভা, রাতের পূর্ণিমার চাঁদ, এ সব নিয়ে একজন সাধারণ মানুষ কিছুই ভাবে না। একজন কবি বা সাহিত্যিক তাঁর লিখনিতে যে সুন্দর চিত্র তুলে ধরে, তা বারবার পড়ে ও মনে হবে আর একবার পড়ি এবং তন্ময় হয়ে ভাবি কি অপরূপ কবির কল্পনা ।

যে প্রেম করে সে জানে তাঁর প্রেমিকারা অপরূপ সৌন্দর্য,প্রয়োজনে সে প্রেমিকার জন্য জীবন দিতে ও তৈরী, অন্যের চোখে হয়তোবা সে অতি নগন্য ; কবি হেলাল হাফিজ সেদিন মারা গেলেন,তাঁর লিখনি বই “যে জলে আগুন জ্বলে”, সে জীবনে প্রেম করেছিল , প্রেমিকার বাবা তাঁর নিকট বিয়ে না দেয়ায় সে আর বিয়েই করে নি,সারা জীবন এই দুঃখ নিয়ে বেঁচে ছিলেন । লাইলী মজনুর প্রেমের অমর কাহিনী যে রূপকার তৈরী করেছে, সে জানে তার কল্পনা জগৎ কত প্রখর।

হাজার হাজার লোক প্রতিদিন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যায় এবং সমুদ্রের ঢেউয়ের নাচন, “সূর্য ডুবা“ সন্ধ্যার রক্তিম আভা মনে অপূর্ব দোলা দেয়, উপভোগ করে, কতজন তা মনে রাখে। আমার বন্ধু বিশিষ্ট সাহিত্যিক হুমায়ুন কবির তাঁর লিখনিতে সমুদ্রে সূর্য ডুবে যাওয়া ও পূর্ণ চন্দ্রের আবির্ভাব এবং সন্ধ্যার বৈচিত্র মোহনীয় দৃশ্য যেভাবে লিখনিতে তুলে ধরেছেন , তা অতুলনীয় কল্পনার জগতের বহিঃপ্রকাশ।

স্বপ্ন সবাই দেখে, একজন রিক্সাওয়ালা,একজন বস্তির দোকানদার,একজন দিনমজুর জিজ্ঞেস করলে জানবেন সে ও জীবনে অনেক বড় স্বপ্ন দেখেছিলো । স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে যে মালমশলা অর্থাৎ পরিশ্রম প্রয়োজন তা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। গ্রামে একটা প্রবাদ আছে “ধেতরা কাঁথার নিচে শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখা”। আমি আমার স্কুল জীবনে “এইম ইন লাইফ” লিখতে দিলে, লিখতে চাইতাম না । হয়তো আমি আকাশকুসুম চিন্তা করি , তবে আমি জানতাম হয়তো একদিন ভালো কিছু করতে ও পারি।