বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে যে আইনি প্রক্রিয়া চলছে সেটি স্বচ্ছ ও ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে ভারত।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। খবর দ্য হিন্দুর।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের বেশিরভাগই বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্ন করেন রণধীর জয়সওয়ালকে। তারা জিজ্ঞেস করেন হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভারত কী করছে?
জবাবে রণধীর বলেন, ‘হিন্দুদের ওপর হামলা নিয়ে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর হুমকি এবং হামলার বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের কাছে শক্তভাবে সার্বক্ষণিক উত্থাপন করছে ভারত। এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। সব সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা নিশ্চিতের যে দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের রয়েছে সেটি তারা পালন করবে।’
চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তারের পর চট্টগ্রামে আইনজীবীকে হত্যা করে তার সমর্থকরা। এরপর বাংলাদেশে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবি ওঠে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে ইসকনকে একটি ‘উগ্রবাদী সংগঠন’ হিসেবে মনে করা হয়।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রকে এক সাংবাদিক ইসকন নিয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার ইসকনকে ‘উগ্রবাদী সংগঠন’ আখ্যা দিয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার মত কী?
তার প্রশ্নের জবাবে রণধীর জসওয়াল বলেন, ‘ইসকন বৈশ্বিকভাবে প্রখ্যাত সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত। তাদের সামাজিক ক্ষেত্রে অবদান রাখার ভালো রেকর্ড রয়েছে। আমরা বাংলাদেশ সরকারকে আবারও বলব সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।’
চিন্ময় দাসের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চিন্ময় দাসের গ্রেফতার নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছি। আমরা দেখেছি আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আমরা আশা করি তার বিরুদ্ধে যে আইনি প্রক্রিয়া চলছে সেটি স্বচ্ছ ও ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে হবে এবং তার যে আইনি অধিকার রয়েছে সেটি পুরোপুরিভাবে তিনি পাবেন।’
রাষ্ট্রদ্রোহসহ একাধিক মামলায় ২৫ নভেম্বর বিকেলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইসকনের সাবেক সংগঠক চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করে পুলিশের বিশেষায়িত গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
এই সনাতন জোট নেতার গ্রেফতার এবং জামিন নামঞ্জুরের ঘটনায় ২৬ নভেম্বর ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উদ্বেগ প্রকাশ করে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার ও তাকে জামিন না দেয়ার বিষয়টি নিয়ে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘুর ওপর উগ্রবাদীদের একাধিক হামলার পর তাকে গ্রেফতারের ঘটনা ঘটল। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ; একই সঙ্গে মন্দিরে চুরি ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।’
দিল্লির এমন বিবৃতির কড়া প্রতিবাদ জানায় ঢাকা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘চিন্ময় কৃষ্ণকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি দুই প্রতিবেশীর মধ্যে বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়ার চেতনার পরিপন্থি।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যে বিবৃতি দিয়েছে, তা সরকারের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমরা অত্যন্ত হতাশা ও গভীর দুঃখের সঙ্গে উল্লেখ করছি যে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে নির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেফতার করার পর কিছু মহল ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। ভারতের এ ধরনের ভিত্তিহীন বিবৃতি শুধু ভুল তথ্য ছড়ানো নয়, বরং দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়া চেতনার পরিপন্থি।’