News update
  • Stock market shows recovery as investors back: DSE chairman     |     
  • BB to appoint administrators to merge troubled Islami banks     |     
  • Bangladesh Bank allows loan rescheduling for up to 10 years     |     
  • Guterres Urges Leaders to Act as UNGA Week Begins     |     
  • BNP to go door to door for hearts and votes     |     

ঈদের অনুষ্ঠানে ধর্ম নিয়ে মমতা ব্যানার্জীর মন্তব্যে পশ্চিমবঙ্গে শোরগোল

বিবিসি নিউজ বাংলা মিডিয়া 2025-04-01, 9:42pm

erfwr43wr45-06b9e92d0d7afb88b5b517b876bb773a1743522157.jpg

রেড রোডে ঈদ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মমতা ব্যানার্জী



কলকাতায় ঈদ উপলক্ষে রেড রোডে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তৃতার সময় ধর্ম বিষয়ে মমতা ব্যানার্জীর মন্তব্যকে ঘিরে আপাতত সরগরম হয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক অঙ্গন।

যদিও তার নিশানায় ছিল বাম ও গেরুয়া শিবির, কিন্তু তিনি নিজেই এখন বিতর্কের মুখে পড়েছেন।

বক্তব্যের সময়, ভারতীয় সংবিধান যে ধর্মনিরপেক্ষতার উপর জোর দেয় সে কথা যেমন তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, তেমনই বাংলার ঐতিহ্যময় ধর্মীয় পরম্পরার কথাও উল্লেখ করেছেন।

মমতা ব্যানার্জী বলেন, "দেখুন রামকৃষ্ণ কী বলেছেন, বিবেকানন্দ কী বলেছেন? আমি রামকৃষ্ণের ধর্ম মানি, স্বামী বিবেকানন্দের ধর্ম মানি। কিন্তু আমি জেনে শুনে একটা নোংরা ধর্ম, যেটা এই জুমলা পার্টিরা বানিয়েছে, সেটা মানি না। ওটা হিন্দু ধর্ম বিরোধী।"

প্রসঙ্গত, জুমলা কথার অর্থ বাস্তবায়িত হয়নি এমন প্রতিশ্রুতি বা ঠুনকো প্রতিশ্রুতি এবং এক্ষেত্রে তার ইঙ্গিত ছিল বিজেপির দিকে।

মূলতঃ হিন্দিতে বক্তৃতা দেয়ার সময় তার ব্যবহৃত 'গন্দা ধর্ম' (নোংরা ধর্ম) শব্দই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

এখন বিজেপি প্রশ্ন তুলেছে, তৃণমূল সুপ্রিমো সনাতনী ধর্মের বিষয়ে একথা বলতে চেয়েছেন কী না, আর বিরোধী দলগুলো প্রশ্ন তুলেছে, ঈদের মঞ্চকেই কেন বারবার 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে' ব্যবহার করা হচ্ছে?

তৃণমূলের অবশ্য দাবি করেছে যে, মমতা ব্যানার্জীর বক্তব্যকে 'বিকৃত' করে 'অপপ্রচার' চালানো হচ্ছে।

কী বলেছিলেন মমতা ব্যানার্জী?

ঈদের নামাজের পর প্রতিবছরই কলকাতার রেড রোডে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী।

প্রথা মেনে এইবারও ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন তিনি। নিজের বক্তৃতায় মমতা ব্যানার্জী নাম না উল্লেখ করে সিপিএম ও বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিভাজনের অভিযোগ তোলেন।

তবে তিনি বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে ধর্মীয় বিভাজনের কাজ সহজ নয়।

বক্তৃতায় মিজ ব্যানার্জী বলেছেন, "আমি দাঙ্গা ফ্যাসাদ চাই না। এটা ওদের পরিকল্পনা, ওদের গেম। আপনারা এতে পা দেবেন না। ওরা যদি কিছু বলে, তাহলে আপনাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের সঙ্গে দিদি রয়েছে। আপনাদের সঙ্গে সরকার রয়েছে।"

'প্ররোচনায়' পা না দেওয়ার অনুরোধও করেছেন তিনি।

বিজেপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, "গান্ধীজী যখন লড়াই করেছিলেন তখন হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ করেননি। আপনারা দেশের বিভাজন চাইছেন? সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলা আছে। নবরাত্রি চলছে, আমি তাদেরও শুভেচ্ছা জানাব, কিন্তু আমি চাই না এর জন্য আপনারা দাঙ্গা করুন। সাধারণ মানুষ এসব করেন না, করে একটা রাজনৈতিক দল। এটা লজ্জার বিষয়।"

এরপর বিজেপিকে নিশানা করে তিনি বলেন, "আপনি বলেন সবকে সাথ সবকা বিকাশ। আর সংখ্যালঘু দেখলে আপনি পিছিয়ে আসেন।"

একাধিক ধর্মনিরপেক্ষতার উদাহরণ তুলে ধরেন তিনি।

এরপরই তিনি মন্তব্য করেন বিজেপি যে ধর্মের কথা বলে, তিনি তার বিরুদ্ধে -আর এখান থেকেই 'বিতর্কের' সূত্রপাত।

বিরোধীরা কী বলছে?

মমতা ব্যানার্জীর বক্তব্যের পর বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন- "রেড রোডে মুসলিম সম্প্রদায়কে আপনার প্রায় বোধগম্য উর্দু ভাষা দিয়ে সন্তুষ্ট করার সময় আপনি একটা বিবৃতি দিয়েছেন যে, আপনি গন্দা ধর্ম' বা 'নোংরা ধর্ম' অনুসরণ করেন না। নির্দিষ্ট ভাবে কোন ধর্মের কথা বলছিলেন আপনি? সনাতন হিন্দু ধর্ম?"

তিনি পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, "সোমবারের ওই অনুষ্ঠান কী ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছিল না কি রাজনৈতিক?"

মি. অধিকারী মমতা ব্যানার্জীর বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তৃতার অভিযোগ করেছেন।

বিজেপির অমিত মালব্যের অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 'হিন্দুদের উপহাস করার এবং তাদের বিশ্বাসকে উপহাস করার সাহস দেখিয়েছেন'।

এখন বিজেপির পাশাপশি সিপিএমও শরিক হয়েছে মমতা ব্যানার্জীর সমালোচনায়। দলটির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, বিজেপি এবং তৃণমূল দুই দলই 'ধর্ম নিয়ে রাজনীতি' করে।

মি. সেলিমের মতে, "রামনবমী এলে আরএসএসের পতাকা তলে এককাট্টা হয়ে যায় বিজেপি-তৃণমূল। মানুষের ধর্ম-বিশ্বাস, ধর্মীয় উৎসবকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে বিধায়ক, সাংসদ, মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী - কারও কোনও ফারাক থাকে না। তৃণমূল ও বিজেপি পরস্পরের পরিপূরক।"

এদিকে, কংগ্রেসের অধীর রঞ্জন চৌধুরী মমতা ব্যানার্জীর সমালোচনা করে বলেছেন, "দিদি (মমতা) আচমকা কেন ঈদের দিনে নমাজ পড়েন? এটা রাজনৈতিক চালাকি। পবিত্র ঈদের দিনে সঙ্কীর্ণ রাজনীতি দূরে রাখতে পারতেন।"

তৃণমূল কী বলছে?

বিরোধীদের অভিযোগকে নাকচ করে দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বলছে, মমতা ব্যানার্জীর মন্তব্যের 'অপব্যাখ্যা' করা হচ্ছে। মিজ ব্যানার্জী সমস্ত ধর্মের প্রতি সমানভাবে শ্রদ্ধাশীল।

দলের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ সাংবাদিকদের বলেছেন, "সম্পূর্ণ বিকৃত প্রচার এটা। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, তিনি স্বামী বিবেকানন্দ, শ্রীরামকৃষ্ণের সনাতন হিন্দুত্বকে মানেন। বিজেপির বিকৃত ধারণাকে হিন্দুত্ব বলে মনে করেন না তিনি। ওটা ভোট-বাজারের হিন্দুত্ব।"

"শুভেন্দু বিকৃত ভাবে 'নোংরা' শব্দ ব্যবহার করছেন। রেড রোডে ঈদের শুভেচ্ছার সঙ্গে দুর্গাপুজোর কার্নিভালও করেন মুখ্যমন্ত্রী," বলেন তিনি।

বিশ্লেষকেরা কী বলছেন?

পুরো বিতর্কের পেছনে রাজনৈতিক সমীকরণ এবং ভোটব্যাঙ্কের অঙ্ক লুকিয়ে রয়েছে বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, মমতা ব্যানার্জী মুসলিম ভোটারদের মন জয় করার জন্য বক্তব্য দিচ্ছেন। আবার কেউ মনে করেন, ভারতের রাজনীতিতে হিন্দুত্বের যে নতুন ধরনের ব্যবহার চলছে, সেই প্রেক্ষাপটে বাংলার সেকুলার-হিন্দুদের হারাতে চান না তিনি।

এর ফলে তার বক্তব্যের ধর্ম নিয়ে করা মন্তব্যের ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা এবং সমালোচনা হচ্ছে।

অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেছেন, "এ রাজ্যে বিজেপি যেটুকু জমি দখল করতে পেরেছে, সেটা মুখ্যমন্ত্রীর তোষণের রাজনীতির জন্যই হয়েছে। তিনি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গিয়ে যেভাবে রাজনৈতিক কথা-বার্তা বলেন, মুসলিমদের নিরাপত্তা আমি দেব ইত্যাদি মন্তব্য করেন - সেই তোষণের জন্যই বিজেপি সুযোগটা পাচ্ছে।"

তার মতে আসন্ন রামনবমীকে কেন্দ্র করে বিজেপি এসব প্রচারণা চালাচ্ছে।

এদিকে, হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির গবেষক ও সাংবাদিক স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য বলেছেন, "নির্বাচনের আগে এমন মন্তব্য তাকে (মমতা ব্যানার্জী) আগেও করতে শোনা গেছে। বাংলার হিন্দু সংস্কৃতি একরকম এবং সেটা যে বিজেপি-আরএসএস যে হিন্দুত্বের কথা বলে, তার সঙ্গে মেলে না তা তিনি আগেও বলার চেষ্টা করেছেন।"

"আর মুখ্যমন্ত্রী ইদানীং হিন্দুদের কথা ধারাবাহিকভাবে বলছেন। ঘুরে ফিরে হিন্দুত্বের কথা আসছে, বারবার বলছেন হিন্দুদের জন্য উনি কী কী করেছেন।"

মি. ভট্টাচার্য ব্যাখ্যা করেছেন এর পেছনে কারণও আছে।

তার কথায়, "মমতা ব্যানার্জী কিন্তু বাংলার সেকুলার-হিন্দুদের হারাতে চান না। ফলে একইভাবে হিন্দিভাষী ভোট ব্যাঙ্ককেও সন্তুষ্ট করতে চান।"