আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে সারাদেশে চলছে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের ৪৮ ঘণ্টার হরতাল। তবে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে রাজধানীতে এই হরতালের প্রভাব অনেকটাই ঢিলেঢালা।
রোববার (১৯ নভেম্বর) সকাল ৯টা-১০টা পর্যন্ত রাজধানীর মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ, শান্তিনগর, কাকরাইল, নয়াপল্টন, বিজয়নগর, পুরানা পল্টন, গুলিস্তান এলাকা ঘিরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
এদিন হরতাল থাকলেও সকালে অফিসগামী যাত্রীদের নির্বিঘ্নে এবং স্বাভাবিকভাবেই গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কিছুটা কম হলেও, গণপরিবহনসহ সব ধরনের যান চলাচল ছিল বাধাহীন।
স্বাভাবিক কর্মদিবসগুলোতে অফিস শুরুর এই সময়ে সড়কে প্রচুর যানবাহনের চাপ থাকে। গণপরিবহনগুলো থাকে যাত্রীতে ঠাসা। কিন্তু হরতালের কারণে সড়কে যানবাহনের সেই চাপ দেখা যায়নি। বড়জোর বিভিন্ন সিগনালে মিনিট খানেক দাঁড়াতে হচ্ছে যানবাহনগুলোকে। সড়কে গণপরিবহন কম থাকায় বিভিন্ন স্থানে যাত্রীদের বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। তবে বেশিরভাগ বাসে যাত্রীর ভিড় নেই। ফলে অনেকটা স্বস্তিতেই গন্তব্যে যেতে পারছেন অফিসগামি যাত্রীরা।
এদিকে হরতালের সমর্থনে সকাল থেকে রাজধানীতে কোথাও মিছিল বা পিকেটিংয়ের খবর পাওয়া যায়নি। তবে শনিবার (১৮ নভেম্বর) রাতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাসেসহ যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এমনকি জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে যমুনা এক্সপ্রেস নামের একটি ট্রেনেও আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে ট্রেনটির তিনটি বগি পুড়ে যায়। আগুনে চার নারীসহ ১০ জন আহতও হন।
রোববার ভোর ৬টা থেকে শুরু হওয়া বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের এই হরতাল চলবে মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) ভোর ৬টা পর্যন্ত।
এর আগে, বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের আগের রাতেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রেনসহ ১১টি যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, শনিবার (১৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে রাজধানীর কাফরুল থানা এলাকায় বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। পরে রাত পৌনে ৮টার দিকে গুলিস্তান টোলপ্লাজার সামনে আরেকটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
রাত ১০টার দিকে মোহাম্মদপুরে প্রজাপতি পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে রাত ১১টা ৫৮ মিনিটে মিরপুর কালশী রোডে বসুমতি পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়ার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট সেখানে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর রাত পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় মৌমিতা পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
এদিকে রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে রাজধানীর বাইরে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও চান্দগাঁও এলাকায় একটি বাস ও একটি মিনি ট্রাকে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে রাত পৌনে ১০টায় জয়পুরহাটে একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন দেওয়া হয়। এরপর রাত সাড়ে ১০টার দিকে নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় আরেকটি পিকআপ ভ্যানে এবং রাত সাড়ে ১১টায় কুমিল্লায় একটি বাসে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয় বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
এ ছাড়া এদিন দিবাগত রাত সোয়া ১টার দিকে জামালপুরের সরিষাবাড়ী রেলস্টেশনে যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ৩টি বগি পুড়ে যায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্তব্যরত কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান। তিনি বলেন, ভোররাত চারটার দিকে আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পুলিশ পণ্ড করে দেওয়ার পর সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো ২৯ অক্টোবর সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে। এরপর পাঁচ দফায় ১১ দিন পর্যায়ক্রমে সারা দেশে অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। যা শেষ হয় গত শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) ভোর ৬টায়। তথ্য সূত্র আরটিভি নিউজ।