Pir Saheb of Charmonai, Mufti Syed Muhammad Rezaul Karim addressing a news conference in Dhaka on Tuesday.
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, অনতিবিলম্বে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় এমন সকল রাজনৈতিক দল, পেশাজীবি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সাথে পরামর্শক্রমে অনুর্ধ্ব ১৫ সদস্য বিশিষ্ট অর্ন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠন করতে হবে। যার মেয়াদ ৬ মাসের বেশি হতে পারবে না। অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কেউ পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। গ্রহণযোগ্য তদন্ত কমিশন ও স্বতন্ত্র ট্রাইবুনাল গঠন করে জুলাই গণহত্যাকান্ডের বিচার করতে হবে। একই সাথে গত ১৬ বছরে সংগঠিত সকল রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হত্যাযজ্ঞ, গণহত্যা, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার করতে হবে। তদন্ত সাপেক্ষে নিহত-আহত পরিবারকে ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে যে সকল ব্যক্তি বা সংগঠন দোষী সাব্যস্ত হবে, তাদেরকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।
আজ বুধবার ৫৫/বি পুরানা পল্টনস্থ আইএবি মিলনায়তনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উদ্যোগে গণহত্যাকারী, জালিম ও স্বৈরাচার সরকারের পতন পরবর্তী দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দলের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই এসব কথা বলেন। দলের যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, দলের মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, খন্দকার গোলাম মাওলা, যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, কেএম আতিকুর রহমান, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, মাওলানা নেছার উদ্দিন, মুফতী সৈয়দ এছহাক মুহাম্মদ আবুল খায়ের, অ্যাডভাকেট শওকত আলী হাওলাদার, আলহাজ জান্নাতুল ইসলাম, শায়খুল হাদীস মকবুল হোসাইন, জিএম রুহুল আমিন, অধ্যাপক নাসির উদ্দিন খান, আল মুহাম্মদ ইকবাল, অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান, যুবনেতা ইলিয়াস হাসান, কেএম শরীয়াতুল্লাহ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জাতির এই মহান অর্জনের যারা জীবন দিয়েছেন, রক্ত দিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন তাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে যারা অংশ নিয়েছেন তাদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও আহতদের পাশে দাড়ানোর সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, স্বৈরশাসনের অবসান হয়েছে। এখন সময় দেশ গড়ার। এখন সময় সাম্য, সামাজিক মর্যাদা ও ন্যায় বিচারভিত্তিক বাংলাদেশ নির্মাণের। দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বর ও নৃশংস আওয়ামী দুঃশাসন উৎখাতের সংগ্রামের সূচনা করেছে আমাদের গর্ব শিক্ষার্থী সমাজ। তাদের অসীম সাহস, ত্যাগ ও বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্ব আমাদের গর্বিত করেছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ শুরু থেকেই এই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত থেকেছে। ১৯ জুলাইতেই আমরা পরিস্কার করে জানিয়েছি যে, সরকারের পদত্যাগই একমাত্র সমাধান। শুরু থেকেই নানা মাত্রায় ও নানা ধরণে ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। আমাদেরও অনেক ভাই জীবন দিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন। এই যুগ সন্ধিক্ষনে আগামী পরিকল্পনা হিসেবে কতিপয় প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। প্রস্তাবগুলো হচ্ছে, তদন্ত সাপেক্ষে গত ১৬ বছরে সকল দুর্নীতিবাজ ও বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের সকল সম্পত্তি ক্রোক করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে হবে এবং বিদেশে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনবার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিগত ১৬ বছরে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তাদের সম্পদের হিসাব দিতে হবে। সকল দুর্নীতি ও টাকা পাচারের শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ প্রজাতন্ত্রের যে সকল কর্মচারী আইন, সংবিধান, শপথ লঙ্ঘন করে অপেশাদার আচরণ করেছেন তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠির চিন্তা-চেতনা ও অনুভূতির বিরুদ্ধে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না।
নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে এবং অবাধ, সুষ্ঠ গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি (চ.জ) চালু করতে হবে।
আওয়ামী দুঃশাসনের বিগত ১৬ বছরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এদেশের সাধারণ শিক্ষাখাতের মান ও নৈতিকতা। এই ক্ষতি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাটিয়ে উঠার লক্ষ্যে দেশপ্রেমিক শিক্ষাবিদ ও উলামায়ে কেরামের সমন্বয়ে একটি জাতীয় শিক্ষাকমিশন গঠন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
উলামায়ে কেরাম জাতির ধর্মীয় নেতৃত্ব প্রদান করেন। তারা উম্মাহর ঈমান-আমল রক্ষায় কাজ করেন। সেজন্য অন্তর্র্বতীকালীন সরকারে উলামায়ে কেরামদের মধ্যে থেকে প্রতিনিধি অবশ্যই থাকতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, ছাত্র-জনতার এই আন্দোলন হত্যা, লুটতারাজ ও অবৈধ ক্ষমতা প্রয়োগের বিরুদ্ধে ছিলো। শিল্প ও কল-কারখানা ধ্বংসের বিরুদ্ধে ছিলো। এখন যদি আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে থেকে কেউ একই রকম কাজ করেন তাহলে তা স্ববিরোধিতা হয়ে যায়। সেজন্য আমরা বিশ্বাস করি, যারা লুটতরাজ, দখলদারী ও অরাজকতায় লিপ্ত তারা আন্দোলনে সম্পৃক্ত কেউ না। বরং তারা সুযোগ সন্ধানী। আমরা দৃঢ়তার সাথে সবাইকে আহবান করছি যে, এখনই সব ধরণের অরাজকতা বন্ধ করুন। যারা অরাজকতা করছে তাদের প্রতিরোধ করুন। যারা দেশের সম্পদ নষ্ট করছে তাদের প্রতিরোধে এলাকায় এলাকায় প্রতিরোধ কমিটি গঠন করুন।
দেশের সকল নাগরিক সমান মর্যাদা ও অধিকার প্রাপ্ত। ধর্মের কারণে কাউকে আঘাত করা বা কাউকে প্রতিপক্ষ বানানোকে ইসলাম ও রাষ্ট্রিয় আইনও সমর্থন করে না। আমাদের আন্দোলনের চেতনাও তা সমর্থন করে না। সেজন্য বলবো, দেশের সংখ্যালঘুদের প্রতিটি উপসানালয় ও ধর্মীয় স্থাপনায় পাহারার ব্যবস্থা করুন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই সেই কাজ শুরু করেছে এবং তা অব্যহত থাকবে ইনশাআল্লাহ। উক্ত ৯ দফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে নিন্মোক্ত কর্মসূচি : ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচি হচ্ছে, আগামী শুক্রবার বিকেল ৩টায় বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইটে বিশাল গণ জমায়েত। পর্যায়ক্রমে বিভাগ ও জেলা শহরে সমাবেশের আয়োজন করা হবে। - প্রেস বিজ্ঞপ্তি