News update
  • FIFA tweaks World Cup draw to keep top teams apart until Semis     |     
  • Korail slum families lose everything to devastating fire     |     
  • Recovered gold not only Hasina’s, but also family members’, says ACC     |     
  • Dhaka breaths ‘very unhealthy’ air Wednesday morning     |     
  • Referendum Ordinance, 2025 issued     |     

রাজনীতিতে কি জাতীয় পার্টিকে হুমকি মনে করা হচ্ছে?

বিবিসি নিউজ বাংলা রাজনীতি 2024-11-03, 9:26am

ryeryytu-2cfda8e97b46b5d25f5bf90189e7790e1730604374.jpg

হামলার পর জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের চিত্র



গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে একেবারেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে জাতীয় পার্টি। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রায় আড়াই মাস পর আওয়ামী লীগের মিত্র এই দলটির কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার রাতে কাকরাইল কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছাত্র-জনতার ব্যাপারে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের পর শনিবার কাকরাইল কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের ডাক দিয়েছিল জাতীয় পার্টি।

কিন্তু ছাত্রদের প্রতিরোধের ঘোষণার পর ওই এলাকায় বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। যে কারণে জাতীয় পার্টি তাদের কর্মসূচিও স্থগিত করে।

নতুন করে ছাত্ররা দলটির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার পর প্রশ্ন উঠছে, জাতীয় পার্টিকে কেন হুমকি মনে করা হচ্ছে?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গত পনেরো বছর আওয়ামী লীগের ওপর ভর করে রাজনীতি টিকিয়ে রেখেছিল জাতীয় পার্টি। এখন জাতীয় পার্টির ওপর ভর করে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরার একটা শঙ্কাও রয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বিগত সময়ে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের পরামর্শে। এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ ও ভারত জাতীয় পার্টিকে ব্যবহার করতে পারে হয়তো ছাত্রদের মধ্যেও এমন একটা আশঙ্কার জায়গা তৈরি হয়েছে”।

কিন্তু জাতীয় পার্টি বলছে, অতীতে রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ তাদের ব্যবহার করেছে। সুতারং এখন যে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে সেটি অযৌক্তিক।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এখন যদি কেউ বলে আমরা আওয়ামী লীগকে আমরা ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছি, তাদের এনে আমাদের লাভ কী? এটা তো সবার বুঝতে হবে”।

এমন অবস্থায় দীর্ঘদিন সরকারের সমর্থন নিয়ে বিরোধী দলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ কিছু নানামুখী বিশ্লেষণ পাওয়া যাচ্ছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ব্যাখ্যায়।

তাদের হুমকি মনে করার কারণ কী?

গত ৮ই অগাস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দিনও অন্য দলের সাথে বঙ্গভবনে ছিল জাতীয় পার্টি। পরবর্তীতে রাজনৈতিক দলের সাথে প্রথম দফার সংলাপে ডাকও পেয়েছিল দলটি।

গত ৭ই অক্টোবরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বর্তমান আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সমন্বয়ক সারজিস আলম আলাদা ফেসবুক পোস্টে সংলাপে জাতীয় পার্টিকে ডাকার সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেন।

পরে দ্বিতীয় দফার সংলাপে অন্যান্য সব দলকে ডাকা হলেও ডাকা হয়নি জাতীয় পার্টিকে।

এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওই দুই সংগঠককে রংপুরে অবাঞ্ছিতও ঘোষণা করে সেখানকার জাতীয় পার্টির নেতারা।

এরপর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিংবা গণঅধিকার পরিষদের মতো দলগুলো বিভিন্ন সভা সমাবেশে জাতীয় পার্টিকে 'আওয়ামী লীগের পরাশক্তি' দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আওয়ামী লীগ তৎপর হওয়ার জন্য নানা চেষ্টা চালাচ্ছে। ফেসবুকে তারা খুবই সরব। বিভিন্ন জায়গায় বিছিন্ন ঘটনাও ঘটছে। সে জায়গা থেকে কেউ কেউ হয়তো মনে করছে জাতীয় পার্টিকে তারা ব্যবহার করছে বা করতে পারে”।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাসুম বিবিসি বাংলাকে সেই শঙ্কার কথাই বলেছেন।

“আওয়ামী লীগ টিকে থাকার জন্য জাতীয় পার্টিকে সামনের দিকে রাখতে চাচ্ছে, বিষয়টা এমনই হতে পারে” বলছিলেন মি. মাসুম।

তবে এই প্রশ্নে জাতীয় পার্টি তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেছে, তাদের বিরুদ্ধে এই যে অভিযোগ আনা হচ্ছে সেটির কোন ভিত্তি নেই।

দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক বিবিসি বাংলাকে বলেন, “যারা আমাদের কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে, হামলা চালিয়েছে তারা আমাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ তুলছেন। যার কারণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুনাম নষ্ট হচ্ছে”।

আওয়ামী লীগের সাথে সম্পর্ক নিয়ে যত প্রশ্ন

বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় পার্টির কাকরাইল কার্যালয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পরদিন শুক্রবার জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে একটি সংবাদ সম্মেলন করা হয় দলটির বনানী কার্যালয়ে।

সেখানে সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ বিগত সময় তাদেরকে ব্ল্যাকমেইল করে নির্বাচন করতে বাধ্য করেছেন।

একই সাথে তিনি বলেছেন, জাতীয় পার্টি বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের এই আন্দোলনের পক্ষেও ছিল।

কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, আগামী নির্বাচন কেন্দ্রিক রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে।

কারণ হিসেবে অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ''আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলগতভাবে ভোট করার সুযোগ নেই বললেই চলে। সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি যদি একক ভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে আওয়ামী লীগের ভোটার সমর্থন তাদের বাড়তি সুবিধা দিতে পারে''।

সেই জায়গা থেকে কোন কোন রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টিকে একটি হুমকির কারণ মনে করতে পারে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “জাতীয় পার্টির নির্বাচনের মাঠে কিছু আসন আছে। কিছু ভোট আছে। এখন জাতীয় পার্টি যদি নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে যায়, তাহলে লাভবান কারা হবে সেখান থেকেও জিনিসটা বোঝা যায়”।

এই প্রশ্নে জাতীয় পার্টি বলছে, আওয়ামী লীগের সাথে তাদের যে একাত্মতা ছিল সেটি স্বেচ্ছায় তারা করেনি। বাধ্য হয়েই তাদের সঙ্গী হতে হয়েছে।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মি. হক বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে আমাদের মিটিংয়ে নাকি আওয়ামী লীগ আসতে চাইছে। আমরা নাকি তাদের সমর্থন নিচ্ছি। কিন্তু আওয়ামী লীগকে তো দেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে তাদের সমর্থন নিয়ে তো আমাদের কোন লাভ হবে না। তাহলে কেন তাদের সমর্থন আমরা নিবো?”

বিগত চারটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির এই সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন সময় দেশের রাজনীতিতে নানা আলোচনা সমালোচনা ছিল।

২০০৮ ও ২০১৮ সালে তারা মহাজোটের ব্যানারে আসন ভাগাভাগি করে নির্বাচন করেছে।

বিরোধী দলে থাকা অবস্থায়ও জাতীয় পার্টির নেতারা আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পালন করেছে।

সর্বশেষ গত সাতই জানুয়ারির নির্বাচনেও তাদের দলের সংসদ সদস্য প্রার্থীদের কেউ কেউ নিজেদেরকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে অংশও নিয়েছে।

হামলা করে প্রতিহত নিয়ে যে সমালোচনা

চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ দলের নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবিতে দোসরা নভেম্বর রাজধানীতে সমাবেশ এবং বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয় জাতীয় পার্টি।

বৃহস্পতিবার এই খবর আসার পর কয়েকজনকে নিয়ে গণঅধিকার পরিষদের ছাত্র সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক সভাপতি বইন ইয়ামিন মোল্লা জাতীয় পার্টি কার্যালয় অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন।

‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা’র ব্যানারে করা মশাল মিছিলটি জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের কাছাকাছি গেলে সেখানে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিছিলে থাকা লোকজনের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

শুক্রবার সকালে জাতীয় পার্টির বনানী অফিসে করা এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের অভিযোগ করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “যেভাবে অফিস আক্রমণ করা হলো। আগুন দেয়া হলো। হামলাকারী হিসেবে যাদের চেহারা টিভিতে দেখলাম তাদের চেহারা দেখে ছাত্রদের মতো মনে হল না । এটাকে রহস্যজনক মনে হচ্ছে”।

মি. আহমদের মতে, এখানে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কিছু ইন্ধন থাকতেও পারে।

তার মতে হামলা চালানোর মতো অগণতান্ত্রিক আচরণের রাজনীতিতে নতুন সংকট ডেকে আনতে পারে।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মি. হক বলেন, “আমরা আমাদের কর্মসূচি নিয়ে যাবো, মানুষ যদি আমাদের গ্রহণ না করে আমাদের প্রত্যাখ্যান করবে। সে সিদ্ধান্ত জনগণ নিবে”।

কিন্তু হামলা কেন চালানো হবে, প্রশ্ন রাখেন দলটির মহাসচিব মি. হক।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাসুম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এই ধরনের হামলা করা মানে হচ্ছে নতুন করে সংকট তৈরি করা। পায়ে পড়ে ঝগড়া বাধানোর চেস্টা করে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান সম্ভব না”।

তবে এই হামলার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে এই হামলা ছাত্ররা করেনি। এর সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোন সম্পর্কও নেই।