News update
  • Bangladesh Faces $1.25 Billion Export Loss from US Tariffs     |     
  • Israel Expands Gaza Assault as UN Warns of ‘Genocide’     |     
  • World Ozone Day Highlights Progress and Future Action     |     
  • DG Health Services gives 12 directives to treat dengue cases     |     
  • Stock market shows recovery as investors back: DSE chairman     |     

জাস্টিন বিবারের র‍্যামজে হান্ট সিনড্রোম রোগ সম্পর্কে কী জানা যায়?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক রোগবালাই 2022-06-13, 10:13am




পপ তারকা জাস্টিন বিবার র‍্যামজে হান্ট সিনড্রোম রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর সারা বিশ্বেই এই রোগটি নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

যদিও চিকিৎসকরা বলছেন, এটি নতুন কোন রোগ নয়, বহুদিন ধরেই মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছেন, চিকিৎসাও দেয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশেও অনেক মানুষ এই রোগে ভুগছেন, যদিও প্রায় সব হাসপাতালের স্নায়ুরোগ বিভাগে এই রোগের চিকিৎসা রয়েছে।

সঠিক সময়ে চিকিৎসা পেলে রোগী প্রায় পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন বলে চিকিৎসকরা বলছেন। অবশ্য চিকিৎসা নিতে দেরি হলে কান বা চোখের স্থায়ী ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।র‍্যামজে হান্ট সিনড্রোম সম্পর্কে কী জানা যায়?

র‍্যামজে হান্ট সিনড্রোম হচ্ছে ভাইরাসজনিত স্নায়ুর একটি রোগ। চিকেন পক্স বা জলবসন্তের একটি ভাইরাসের কারণে এই রোগ হয়ে থাকে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় হার্পেস যস্টার ওটিকাস। কানের কাছাকাছি মুখের কোন স্নায়ুতে ভাইরাস আক্রমণের ফলে এই সমস্যা দেখা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসা বিজ্ঞানীয় জেমস র‍্যামজে হান্ট প্রথম এই রোগের লক্ষণ শনাক্ত করেছিলেন। তার নামেই এই রোগের নামকরণ হয়েছে র‍্যামজে হান্ট সিনড্রোম-২।

কেন র‍্যামজে হান্ট সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়?

মেয়ো ক্লিনিক জানাচ্ছে, জলবসন্তে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে উঠলেও অনেক সময় ভাইরাস স্নায়ুর ভেতরে থেকে যায়। অনেক সময় বহু বছর ধরে ভাইরাস এতে শরীরের ভেতরে থাকে। পরবর্তীতে কোন একসময় সেটি আক্রমণ করতে পারে।

কোন কারণে ভাইরাসের উপযোগী পরিবেশের তৈরি হলে বা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে এটি আক্রমণ করতে শুরু করে।

এই রোগে যেসব লক্ষণ দেখা যায়

এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ মূলত দুইটি।

কানের অথবা কানের চারপাশে লাল র‍্যাশ উঠতে দেখা যায় এবং প্রচণ্ড ব্যথা হয়।

যে কানে আক্রান্ত হয়, তার নীচে মুখের অংশ অবশ হয়ে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা হাসপাতাল মেয়ো ক্লিনিক জানাচ্ছে, যে কান এই সিনড্রোমে আক্রান্ত হয় মুখের সেই পাশটা অবশ হয়ে পড়ে। আক্রান্ত ব্যক্তি ওই কানেও ঠিক মতো শুনতে পান না।

জাস্টিন বিবার একটি ভিডিও পোস্ট করে জানিয়েছেন, তার মুখের ডানপাশ পুরোটা অসাড় হয়ে গেছে। তিনি চোখের পাতাও নাড়াতে পারছেন না।

আক্রান্ত রোগীর কানের ব্যথা হয়, ঠিকমতো শুনতে পায় না, কানের ভেতর ঝিনঝিন করে, চোখের পাতা বন্ধ করতে পারে না, এবং মুখ থেকে স্বাদ চলে যায়।

চোখের পাতা বন্ধ করতে না পারার জন্য রোগীর চোখে ব্যথা হয়, দৃষ্টি ঘোলা হয়ে যায় আর বমিভাব হতে পারে।

ডাক্তাররা বলেছেন, এসব উপসর্গ সাধারণত স্থায়ী হয় না, তবে ক্ষেত্র বিশেষে এই সিনড্রোম স্থায়ী হতে পারে।

কারা এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন?

মেয়ো ক্লিনিক বলছে, সাধারণত ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষ এই সিনড্রোমে আক্রান্ত হন। তবে যেকোনো বয়সের মানুষ এতে আক্রান্ত হতে পারে। তবে শিশুদের মধ্যে এই রোগটি সাধারণত খুব একটা দেখা যায় না।

তবে চিকেন পক্স ছোঁয়াচে হলেও র‍্যামজে হান্ট সিনড্রোম কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়।

চিকিৎসকরা বলছেন, যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের সংক্রমণ বেশি গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা নেই।

তবে এটি জলবসন্তের একটি ভাইরাস হওয়ায়, যাদের এর আগে চিকেন পক্স বা জলবসন্ত হয়নি, তারা এই ধরনের রোগীর কাছাকাছি এলে জলবসন্তে আক্রান্ত হতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা অনুযায়ী, সেদেশের প্রতি একলক্ষ মানুষের মধ্যে পাঁচজন র‍্যামজে হান্ট সিনড্রোম আক্রান্ত হয়েছেন।

স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ আফজাল মোমিন বলছেন, যেকোনো বয়সে, যেকোনো মানুষের যেকোনো সময় এই রোগ হতে পারে। তবে শুধুমাত্র এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।

মেয়ো ক্লিনিক পরামর্শ দিচ্ছেন, র‍্যামজে হান্ট সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এড়িয়ে চলা উচিত, যাদের:

জলবসন্তের টিকা নেননি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম রয়েছে, নবজাত শিশু, গর্ভবতী নারী।

জলবসন্তের টিকা যদিও এই রোগ অনেকটাই প্রতিরোধ করতে পারে, কিন্তু টিকা নেয়ার পরেও এই রোগ দেখা দিতে পারে।

র‍্যামজে হান্ট সিনড্রোম রোগের চিকিৎসা

বাংলাদেশের চিকিৎসকরা বলছেন, সঠিক সময়ে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হলে এই রোগ প্রায় পুরোপুরি সারিয়ে তোলা সম্ভব।

ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরো সায়েন্স হসপিটালের সহযোগী অধ্যাপক আফজাল মোমিন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ''যত তাড়াতাড়ি এই রোগে চিকিৎসা শুরু হবে, সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ততো বেশি থাকবে।''

স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ আফজাল মোমিন, ''এ ধরনের রোগে আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিছু ওষুধ ও ফিজিওথেরাপি নিতে হয়। নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে খুব তাড়াতাড়ি রোগী প্রায় শতভাগ সুস্থ হয়ে ওঠে। ''

ওষুধের পাশাপাশি নিয়মিত ফিজিওথেরাপি নেয়ার দরকার হয় আক্রান্ত রোগীদের।

তবে কোন কোন ক্ষেত্রে মুখের অংশে কিছুটা অবশভাব থেকে যেতে পারে বলে তিনি বলেন।

কিন্তু চিকিৎসা নিতে দেরি হলে বা ঠিকমতো চিকিৎসা নেয়া না হলে অনেক সময় কানে শুনতে না পাওয়া, চোখে বা মুখের স্থায়ী ক্ষতি হয়ে যেতে পারে বলে চিকিৎসকরা বলছেন।

বাংলাদেশের সব নিউরোসায়েন্স হসপিটাল বা নিউরোলজি বিভাগে এই রোগের চিকিৎসা রয়েছে বলে জানাচ্ছেন অধ্যাপক মোমিন।

যেসব জটিলতা দেখা দিতে পারে

চিকিৎসকরা বলছেন, র‍্যামজে হান্ট সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কানে শুনতে না পারা বা মুখ অবশ হয়ে যাওয়া সাময়িক। ঠিক সময়ে চিকিৎসা পেলে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না পেলে সেটি স্থায়ী হয়ে যেতে পারে।

অনেক সময় এই রোগের কারণে চোখের করোনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে চোখে ব্যথা এমনকি দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

র‍্যামজে হান্ট সিনড্রোম একটি স্নায়ুর রোগ। অনেক সময় এতে আক্রান্ত হওয়ার ফলে নার্ভ ফাইবারের ক্ষতি হয়ে যায়। ফলে এসব স্নায়ু মস্তিষ্কে বিভ্রান্তিকর বার্তা পাঠাতে থাকে। এই কারণে এই রোগ থেকে সুস্থ হয়ে গেলেও বহুদিন পর্যন্ত ব্যথা বা জটিলতা থেকে যেতে পারে।

বাংলাদেশে কতো মানুষ আক্রান্ত?

স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে এই ধরনের রোগী অনেক পাওয়া গেলেও কতো মানুষ আক্রান্ত, তার কোন সঠিক তথ্য-পরিসংখ্যান নেই।

স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ আফজাল মোমিন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ''আমরা রোগী দেখতে গেলে প্রায়ই এই ধরনের রোগী পাই। এটা বাংলাদেশে খুব বেশি কমন না হলেও রেয়ার না।''

অধ্যাপক আফজাল মোমিন বলছেন, ''এতে আক্রান্ত হলে সাধারণত খুব বেশি ক্ষতি হয় না। ওষুধ ও ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে মুখের অবস্থা আগের জায়গার কাছাকাছি যাবে। সামান্য অবশভাব থেকে যেতে পারে। তবে চিকিৎসা নিতে দেরি করা হলে বেশি ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।''

কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়?

চিকিৎসকরা বলছেন, চিকেন পক্স বা জলবসন্তের টিকা এই রোগটি অনেকাংশেই প্রতিরোধ করতে পারে। যাদের বয়স ৫০ বছর পার হয়ে গেছে, তাদের জন্যও এই টিকার ডোজ নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

তিনি জানান, বাংলাদেশে অনেক সময় এই রোগে আক্রান্ত হলেও সেটাকে স্ট্রোক মনে করে নানারকম পরীক্ষানিরীক্ষা করতে গিয়ে দেরি হয়ে যায়। ফলে ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হয় না, ফলে স্থায়ী ক্ষতি হয়ে যায়। কিন্তু স্নায়ু রোগের সঙ্গে এই রোগের বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে।

এই রোগে আক্রান্ত মনে হলে দ্রুত যেকোনো স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়ার জন্য তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন। তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।