News update
  • Another July warrier shot in head, critical in Khulna hospital     |     
  • NCP Khulna Chief Critically Shot Amid Rising Political Violence     |     
  • Indian MP Warns Bangladesh Faces Rising Lawlessness     |     
  • Law and Order Must Be Ensured Ahead of Polls: Prof Yunus     |     
  • Tough times ahead, everyone must remain united: Tarique Rahman     |     

বইমেলায় ‘বেআইনি’ অনুবাদের বই

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক শিল্প-কারুশিল্প 2024-02-22, 12:37pm

fdhdfdjf-ec46f5649764cca31c48604c956ff20f1708583945.jpg




অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এবারও বেশ কিছু প্রকাশনী ইংরেজি সাহিত্যের অনুবাদের বই নিয়ে এসেছে৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মূল লেখকের অনুমতির ধার ধারেননি প্রকাশক৷ কপিরাইট আইন না মানার কারণে মূল লেখক এই বইগুলো থেকে গ্রন্থস্বত্ত্ব পাচ্ছেন না৷ বাংলা একাডেমী ও কপিরাইট অফিস মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও এই প্রবণতা বন্ধ হয়নি৷

কপিরাইটের অনুমতি নেওয়ার ক্ষেত্রে অনুবাদকদের এই অনীহা কেন? কিংবা সমস্যাটা আসলে কোথায়? অনন্যা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মনিরুল হক বলেন, ‘আমরা যে বইগুলো প্রকাশ করি, সেগুলোর কপিরাইট অনুবাদক নিজেই সংগ্রহ করেন৷ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যেটা হয়, লেখকের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা কঠিন হয়ে পড়ে৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে লেখক এত বেশি গ্রন্থস্বত্ত্ব দাবি করেন, সেটা পূরণ করা কঠিন হয়ে যায়৷ আমাদের এখানে একটা ভালো অনুবাদের বই বেশি বিক্রি হলেও হাজার খানেক কপি বিক্রি হয়৷ এর থেকে তাকে আপনি কত টাকা গ্রন্থস্বত্ত্ব দেবেন? ফলে কপিরাইটের অনুমোদন নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন৷’

এবারের বইমেলায় অনুবাদের কতগুলো বই এসেছে, তার কোনো পরিসংখ্যান বাংলা একাডেমী কর্তৃপক্ষের কাছে নেই৷ বইমেলা ঘুরে দেখা গেছে, সন্দেশ প্রকাশনী শুধুই অনুবাদের বই প্রকাশ করছে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকার মারা গেছেন৷ এখন প্রকাশনা দেখছেন মিজানুর রহমান৷ তিনি বলেন, ‘এবার এখন পর্যন্ত আমরা মাত্র তিনটি নতুই বই এনেছি৷’ সেইগুলোর কপিরাইট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনুবাদকের কাছে থাকতে পারে৷’ তবে কিছু বইয়ের কপিরাইট আছে বলেও দাবি করেন তিনি।

বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা টাস্কফোর্সের দুটি অভিযান চালিয়েছি৷ আর বাংলা একাডেমী কর্তৃপক্ষ তিনটি অভিযান চালিয়েছে৷ কপিরাইট না থাকার কারণে আমরা তিন শতাধিক বই জব্দ করেছি৷ বইমেলায় অনুবাদের বই প্রকাশের আগে মূল লেখক বা প্রকাশকের অনুমতিপত্রের কপি কপিরাইট অফিসে জমা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে৷ কিন্তু হাতে গোনা কয়েকজন প্রকাশক ছাড়া কেউ এই তা জমা দেন না৷ এটা আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি৷’

কপিরাইট আইন অনুযায়ী, লেখকের মৃত্যুর পরবর্তী ৬০ বছর তার পরিবার গ্রন্থস্বত্ত্ব হিসেবে রয়্যালিটি পায় প্রকাশকের কাছ থেকে৷ ৬০ বছর পরে সেগুলো পাবলিক প্রপার্টি হয়ে যায়৷ তখন কেউ যদি সে লেখকের কোনো বই প্রকাশ করতে চান, তাতে কোনো বাধা নেই৷

বাংলা একাডেমীর অনুবাদ শাখার দায়িত্বে আছেন উপপরিচালক সায়েরা হাবীব৷ তিনি বলেন, ‘বাংলা একাডেমী যে অনুবাদের বইগুলো প্রকাশ করে, সেগুলোর কপিরাইট নিশ্চিত করার পরই প্রকাশ করা হয়৷ অনুবাদক সেগুলো সংগ্রহ করেন৷ এবার আমরা বিদেশি কোনো লেখকের বই অনুবাদ করিনি৷ প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে আমাদের লেখকদের সাতটি বই আমরা ইংরেজিতে অনুবাদ করেছি৷ যেগুলো বিদেশিদের কাছে আমরা দিতে পারব৷’

কপিরাইট নেওয়ায় সমস্যার দিকগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে সায়েরা হাবীব বলেন, ‘মূল বাধা লেখকের সঙ্গে যোগাযোগ করা৷ দ্বিতীয়ত, আমাদের মধ্যে আইন মানার প্রবণতা কম৷ আর তৃতীয়ত, এমন গ্রন্থস্বত্ত্ব তারা দাবি করেন, সেটা অনেক সময় হয়তো আমাদের প্রকাশকদের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব হয় না৷’

বইমেলা ঘুরে একাধিক প্রকাশকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনুবাদের বইয়ের গ্রন্থস্বত্ত্ব যদি লেখককে দিতে হয়, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা নিয়মনীতির মধ্যে যেতে হয়৷ সেসব নিয়মনীতি সহজ হলে অনুমতি নেওয়ার আগ্রহ বাড়ত৷

বাংলাদেশ ইন্টেলেকচুয়েল পোপার্টি ফোরামের সিইও মনজুরুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশে আইন মানার প্রবণতা কম৷ অনেক প্রকাশক এই আইনই জানেন না৷ যেমন ধরেন, কোনো ইংরেজি বই, যেটার অনুবাদ বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজন বা বাংলাদেশে এর আগ্রহ রয়েছে, সেই বইয়ের লেখককে খুঁজে পাওয়া না গেলে কপিরাইট অফিসে অনুমোদনের জন্য আবেদন করা যেতে পারে৷ কপিরাইট অফিস তাদের অনুমোদন দিতে পারে৷ এভাবেও কোনো প্রকাশক কখনো আবেদন করেননি৷ কারণ, তিনি এটা জানেন না৷ সবচেয়ে বড় কথা হলো, লেখকের অনুমতি ছাড়া অনুবাদ করা, সরাসরি চুরি করার শামিল৷ কপিরাইট আইনে জেল-জরিমানার বিধান আছে৷ এটা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ, এটা কেউ নিতে পারবে না৷’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. নেভিন ফরিদা বলেন, ‘সাহিত্যে অনুবাদ ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠছে৷ সেখানে এভাবে বিদেশি লেখকদের অনুবাদ বিনা অনুমতিতে প্রকাশ করা তো অপরাধ৷ অনুমতিহীন গ্রন্থ প্রকাশ যে আমাদের সাহিত্যকেই অমর্যাদা করে৷ অনৈতিক কাজটি মানসম্মানও ক্ষুণ্ন করে৷ মানসম্মত অনুবাদ একেবারেই কম৷ তারপরও বেশি করে অনুবাদের বই আসা উচিত৷ অনুবাদের বই লেখকের অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করা শুধু অন্যায় নয়, এটা বড় অপরাধও৷’  ডয়চে ভেলে