News update
  • No response on request for Hasina’s extradition: Touhid Hossain     |     
  • Deep relations with US, economic ties with China: Touhid     |     
  • Recommendations on July Charter implementation submitted to CA     |     
  • Cyclonic storm ‘Montha’ now severe cyclonic storm; unlikely to hit BD     |     
  • Gaza Families Face Dire Shortages as Aid Efforts Expand     |     

মোনালিসা থেকে নাৎসিদের দখলে: ল্যুভর জাদুঘরে সবশেষ চুরির ঘটনা কেন ভিন্ন?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক শিল্প-কারুশিল্প 2025-10-22, 6:06am

48a43c733a09b925469aa215f811c19426f833cb8932196b-1-d3b370c9a964188cb09da861381b90641761091605.jpg




ফ্রান্সের প্যারিসের লুভ্যর জাদুঘরে রোববার (১৮ অক্টোবর) সকালে এক দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটেছে। মাত্র চার মিনিটের মধ্যে চোরের দল জাদুঘর থেকে নেপোলিয়ন যুগের আটটি মূল্যবান রত্নালঙ্কার চুরি করে মোটরবাইকে করে পালিয়ে যায়। এর আগে লুভ্যরে একাধিক চুরির ঘটনা ঘটলেও এবারের দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সমৃদ্ধ এই জাদুঘরের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দিয়েছে।

প্যারিসের পুলিশ জানিয়েছে, চোরের দল জাদুঘরের জানালার কাছে পৌঁছানোর জন্য একটি ভাঁজ করা মই ব্যবহার করে। তারা মই দিয়ে গ্যালারিতে প্রবেশ করে এবং ‘অমূল্য রত্ন’ নিয়ে মোটরসাইকেলে চড়ে পালিয়ে যায়।

স্থানীয় সময় রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় এই চুরির ঘটনা ঘটে। এর মাত্র আধা ঘণ্টা আগে জাদুঘরটি দর্শনার্থীদের জন্য খোলা হয়। এখন পর্যন্ত চোরেরা ধরা পড়েনি এবং নিরাপত্তার কারণে লুভ্যর জাদুঘর সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।

ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাস্তায় নেপোলিয়ন তৃতীয়ের স্ত্রী সম্রাজ্ঞী ইউজেনির ক্ষতিগ্রস্ত মুকুটটি পাওয়া গেছে, যা সম্ভবত লুটেরাদের পালানোর তাড়াহুড়োয় পড়ে গিয়েছিল। মুকুটটিতে ১ হাজার ৩৫৪টি হীরা এবং ৫৬টি পান্না রয়েছে।

লুভ্যর জাদুঘর দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ফ্রান্সের রাজপ্রাসাদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। ১৭৯৩ সালে ফরাসি বিপ্লবের সময় এটি জনগণের জন্য উন্মুক্ত জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিপ্লবের পর রাজতন্ত্রের ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো তখন লুটপাটের ঝুঁকিতে থাকলেও জাদুঘর সেই ঐতিহ্যকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণের চেষ্টা করেছিল।

তবে চোরদের হাত থেকে এই জাদুঘরকে পুরোপুরি রক্ষা করা যায়নি। ইতিহাসে বহুবার এই জাদুঘরের অমূল্য সম্পদ চুরির চেষ্টা হয়েছে—এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই তা সফলও হয়েছে।

১৯১১ সাল: মোনালিসা চুরি

ল্যুভরের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত চুরির ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯১১ সালের ২১ আগস্ট। সেদিন জাদুঘরটি থেকে চুরি হয়ে যায় জগদ্বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘মোনালিসা’। ইতালীয় কর্মী ভিনচেনজো পেরুজ্জিয়া, যিনি অল্প সময়ের জন্য ল্যুভরে কাজ করতেন, পুরোনো ইউনিফর্ম পরে ঢুকে চিত্রকর্মটি চুরি করেন।

মোনালিসা তখন ‘Salon Carré’ নামের কক্ষে ঝুলছিল। ছবিটি দুই বছর পেরুজ্জিয়ার অ্যাপার্টমেন্টে লুকিয়ে রাখা হয়। ১৯১৩ সালে সেটি উদ্ধার করা হয়। পেরুজ্জিয়া দাবি করেন, দেশপ্রেমের কারণে তিনি চুরি করেছিলেন। চিত্রকর্মটি ১৫১৮ সালে ফরাসি রাজা ফ্রান্সিস প্রথম কিনেছিলেন।

১৯৪০-এর দশক: নাৎসিদের ল্যুভর লুট করার চেষ্টা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪০ সালে ফ্রান্সে নাৎসি জার্মান বাহিনী প্রবেশ করলে ল্যুভরের সংগ্রহশালা ঝুঁকির মুখে পড়ে। তবে তৎকালীন পরিচালক জ্যাক জোঝার আগেভাগে ১ হাজার ৮০০টির বেশি কাঠের বাক্সে মূল্যবান শিল্পকর্ম অন্যত্র সরিয়ে নেন।

নাৎসিরা প্যারিসে ঢোকার পর জাদুঘরটি প্রায় খালি অবস্থায় পায়। এরপরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিল্পকর্ম নাৎসিদের হাতে যায়। পরে সেসব স্পেনে পাঠানো হয়

১৯৬০-১৯৯০: আরও কিছু চুরি

১৯৬৬: যুক্তরাষ্ট্রে প্রদর্শনের পর ফেরত আনার পথে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বেশ কিছু প্রাচীন গয়না খোয়া যায়। পরে নিউইয়র্কের একটি মুদিদোকান থেকে সেগুলো উদ্ধার করা হয়।

১৯৯০: দিনের আলোয় ছোট একটি রেনোয়া ছবি চুরি হয়। সঙ্গে প্রাচীন রোমান গয়না ও কয়েকটি ছবিও খোয়া যায়।

এবারের চুরি কেন ভিন্ন?

ল্যুভর জাদুঘরে রোববারের সবশেষ চুরি আগের অন্যান্য চুরির ঘটনা থেকে আলাদা, কারণ লুভ্যরে আগের বড় বড় চুরির ঘটনাগুলো প্রায় সবই চিত্রকর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল।

মার্কিন শিল্প ইতিহাসবিদ নোয়া চারনি সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে বলেন, ‘রত্নালঙ্কার চুরি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের, কারণ চুরি হওয়া জিনিসটির উচ্চ অন্তর্নিহিত মূল্য রয়েছে।’ তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘চিত্রকর্মের কোনো অন্তর্নিহিত মূল্য থাকে না; মূলত সাংস্কৃতিক গুরুত্বের কারণে মূল্য নির্ধারিত হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটি চিত্রকর্ম সাধারণত শুধুমাত্র প্যানেল, রং ও ক্যানভাস দিয়ে তৈরি, তাই এর অন্তর্নিহিত মূল্য বেশি নয়। কিন্তু রত্নালঙ্কারের উপাদান বিক্রি করলেও তা যথেষ্ট মূল্যবান।’

চারনি আরও বলেন, ‘রত্নালঙ্কারের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যমূল্য, যা এর মূল মূল্য নির্ধারণ করে, চোরেরা সম্ভবত এ বিষয়টি বিবেচনা করবে না।’তথ্যসূত্র: আল জাজিরা