চলতি বছরের প্রথম আট মাসে (জানুয়ারি-আগস্ট) সারাদেশে ৩৬১ জন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। তাদের মধ্যে স্কুলগামী মেয়েদের সংখ্যা বেশি। প্রতি মাসে গড়ে ৪৫ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) অনলাইনে আয়োজিত ‘শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার ক্রমবর্ধমান : কোন পথে সমাধান’ শীর্ষক সমীক্ষার ফলাফলে এ তথ্য জানানো হয়। বেসরকারি সংস্থা ‘আঁচল ফাউন্ডেশন’ সমীক্ষাটি করেছে।
সমীক্ষা বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত অর্থাৎ গত আট মাসে আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্কুল শিক্ষার্থী ১৬৯ জন, কলেজ শিক্ষার্থী ৯৬ জন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ৬৬ জন এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ৩০ জন। ২০২২ সালে প্রথম আট মাসে আত্মহত্যা করেছিল ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী। আর বছর শেষে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৩২।
আত্মহত্যার কারণ বিশ্লেষণ করে আঁচল ফাউন্ডেশনের সভাপতি তানসেন রোজ বলেন, আগের আত্মহত্যার ঘটনায় প্রেমঘটিত সম্পর্কের দায় বেশি ছিল, এবার আত্মহত্যার ঘটনায় মূল কারণ হচ্ছে অভিমান।
২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। এ বিভাগে আত্মহত্যা করে ৩১ দশমিক ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া খুলনা বিভাগে ১৩ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ, রংপুরে বিভাগে ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং সিলেট বিভাগে আত্মহত্যা করে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি নারী শিক্ষার্থীদের। ৩৬১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৯ দশমিক ৩০ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী গত আট মাসে আত্মহত্যা করেছে। অপরদিকে, ৪০ দশমিক ৭০ শতাংশ পুরুষ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।
নারী শিক্ষার্থীদের বেশি আত্মহত্যার কারণ খতিয়ে দেখা যায়, ২৬ দশমিক ৬০ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী অভিমান করে, প্রেমঘটিত কারণে ১৮ দশমিক ৭০ শতাংশ, মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ, পারিবারিক বিবাদের কারণে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, ৫ দশমিক ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী যৌন হয়রানির কারণে এবং পড়াশোনার চাপ ও ব্যর্থতার কারণে ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ আত্মহত্যা করেছে।
আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার স্তর বিবেচনায় দেখা যায় সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা। মোট আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের ৪৬ দশমিক ৮ শতাংশই ছিল স্কুলগামী।
তাদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ছিল ১১২ জন এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ছিল ৫৭ জন। এ ছাড়া আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে কলেজগামী শিক্ষার্থী ছিল ২৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল ১৮ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং আত্মহননকারীদের মাঝে মাদরাসার শিক্ষার্থী রয়েছে ৮ দশমিক ৩১ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা আহছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্ত চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস মজুমদার বলেন, আত্মহত্যার গড় হারে ২০১১ সালে বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের ৩৮তম দেশ। কিন্তু ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ১০তম স্থানে উঠে আসে। বাংলাদেশে আত্মহত্যার কারণগুলো হলো- শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা, পারিবারিক কলহ এবং সম্পর্কের বিচ্ছেদ, মাদকের অপব্যবহার, অর্থনৈতিক সমস্যা, পড়াশোনার চাপ, বেকারত্ব, পারিবারিক আত্মহত্যার ইতিহাস ইত্যাদি। তথ্য সূত্র আরটিভি নিউজ।