গাজা-মিশর সীমান্তে থাকা রাফাহ সীমান্ত পারাপার খুলে যাওয়ার পর এ পর্যন্ত চারশোর বেশি মানুষ গাজা ত্যাগ করেছেন। টানা তিন সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর প্রথমবারের মতো খুলেছে রাফাহ সীমান্ত পারাপার।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, গাজা থেকে যারা মিশরে প্রবেশ করেছেন তাদের মধ্যে ৩৩৫জন বিদেশি নাগরিক এবং ৭৬ জন গাজার আহত বাসিন্দা।
কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, এসব বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং মার্কিন পাসপোর্টধারীরাও রয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, সীমান্ত পারাপার খুলে যাওয়াটা “তীব্র এবং জরুরি কূটনৈতিক তৎপরতার ফল।”
গাজায় ফোন এবং ইন্টারনেট সেবা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে এই সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান পালটেল।
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস গাজায় একটি জরুরি রেডিও সেবা চাল করছে। এটি এমডব্লিউ-৬৩৯ কিলোহার্টজে শোনা যাবে। শুক্রবার থেকে স্থানীয় সময় বিকেল তিনটায় প্রতিদিন এটি চলবে।
গত সাতই অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। হামাসের হামলায় ১৪০০ ইসরায়েলি নিহত এবং ২৩৯জনকে জিম্মি করা হয়েছে।
হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েলি বিমান হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত আট হাজার ৭০০ মানুষ নিহত হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার ২০ নাগরিকের গাজা ত্যাগ
অস্ট্রেলিয়ার সরকার বলছে, বুধবার রাফাহ সীমান্ত পারাপার খুলে দেয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার প্রায় ২০ জন নাগরিক গাজা ত্যাগ করেছেন।
সীমান্ত খুলে দেয়ার আলোচনা চলাকালে দেশটির কনসুলার অফিস গাজায় থাকা অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের সাথে যোগাযোগ করে জানিয়েছে, সীমান্ত পারাপার দিয়ে মিশরে যাদের প্রবেশ করতে দেয়া হবে সেখানে তালিকায় তাদের নাম রয়েছে।
ফলে তারা যাতে সীমান্ত পারাপারে পৌঁছানোর চেষ্টা করে, সেই বার্তা দেয়া হয় তাদের।
তবে, কতজন অস্ট্রেলিয়ান এই বার্তা পেয়ে সীমান্ত পারাপারে পৌঁছাতে পেরেছে তা এখনো স্পষ্ট নয়।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী টিম ওয়াটস এবিসি নিউজকে বলেন, এখনো গাজায় থাকা ৬৫ জন অস্ট্রেলীয় সম্পর্কে জ্ঞাত রয়েছে সরকার।
আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সংস্থার ২২ কর্মীর গাজা ত্যাগ
আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা মেডসো-স্যঁ ফ্রতিয়ে এমএসএফ জানিয়েছে যে, বুধবার সংস্থাটির ২২ জন সদস্য গাজা ত্যাগ করতে সফল হয়েছে।
এক বিবৃতিতে চিকিৎসা বিষয়ক দাতব্য সংস্থাটি জানায়, তাদের সব বিদেশি কর্মী যারা এর আগে গাজা ত্যাগ করতে পারেনি, তারা বুধবার রাফাহ সীমান্ত পারাপার খুলে দেয়ার পর মিশর সীমান্ত পার করতে সফল হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, “বিশেষজ্ঞ একটি মেডিকেল দলসহ আন্তর্জাতিক কর্মীদের একটি নতুন দল গাজায় প্রবেশ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। পরিস্থিতি ঠিক থাকলে মানবিক এবং চিকিৎসা সহায়তা দিতে তারা গাজায় প্রবেশ করবেন। ”
সংস্থাটি বলছে, প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনি এখনো গাজায় গোলাবারুদ নিক্ষেপের মধ্যেই আটকে রয়েছেন।
এদের মধ্যে এমএসএফের ৩০০ ফিলিস্তিনি কর্মী ও তাদের পরিবার রয়েছে। স্বল্প স্বাস্থ্যসেবা সুযোগের মধ্যে ২২ হাজারের বেশি আহত মানুষ রয়েছে গাজায়।
“আমাদের ফিলিস্তিনি অনেক সহকর্মী গাজায় থেকে গেছে এবং তারা উপত্যকার হাসপাতালগুলোতে জীবন রক্ষাকারী সেবা দিয়ে যাচ্ছে। যদিও এসব হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের সবচেয়ে মৌলিক সুরক্ষার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়নি,” এমএসএফ বলেছে।
বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে যুদ্ধের ক্ষত
গাজা থেকে সব সময় যে ধরণের ছবি পাওয়া যাচ্ছে, তাতে সেখানে যা ঘটছে তার চিত্র উঠে আসছে। সেখানকার বেসামরিক মানুষের রোজকার জীবনে এখন যুদ্ধের বিভীষিকা যেন অবশ্যম্ভাবী একটি বিষয় হয়েছে দাঁড়িয়েছে।
সৌদির প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সাথে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ
সৌদির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খালিদ বিন সালমান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন।
মি. ব্লিঙ্কেনের ইসরায়েল সফরের আগে এই সাক্ষাৎ হলো।
সৌদি আরবের ডি ফ্যাক্টো নেতা ও ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ভাই খালিদ বিন সালমান বলেন, দুই দেশের মধ্যে “ঘনিষ্ঠ এবং কৌশলগত সম্পর্ক আরো মূল্যায়নের পাশাপাশি ওই এলাকার উত্তেজনা প্রশমনের পদক্ষেপ”র বিষয়ে আলোচনা করতে এই সাক্ষাৎ করেছেন তিনি।
মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি ইসরায়েলের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের কঠোর সমালোচনার পর এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হলো। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র জর্ডান বুধবার ইসরায়েল থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতকে সরিয়ে নিয়েছে।
সৌদি আরব ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। কিন্তু দেশটির সাম্প্রতিক সপ্তাহ গুলোতে করা কর্মকাণ্ডের কয়েক দফায় নিন্দা জানিয়েছে তারা।
গত সপ্তাহে সৌদি কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটরদের একটি প্রতিনিধিদলকে সতর্ক করে বলে যে, গাজায় কোন ধরণের স্থল অভিযান চালানো হলে তা “চরম ক্ষতিকর” হতে পারে।
সৌদির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খালিদ বিন সালমান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন।
আইডিএফ যা বলছে
গাজায় নিজেদের অভিযানের বিষয়ে কিছু হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী আইডিএফ।
এক সংবাদ সম্মেলনে আইডিএফ এর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, তাদের স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীর যৌথ অভিযানে অংশ নেয়া বাহিনী জানিয়েছে, সেনারা “গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে হামাসের সীমার মধ্যে প্রবেশ করেছে।”
তিনি বলেন, “আইএসএ এবং গোয়েন্দা শাখার তথ্যের” উপর ভিত্তি করে আইডিএফ যুদ্ধ বিমানের মাধ্যমে হামাসের ট্যাংক বিধ্বংসী কমান্ডার মুহাম্মাদ আতজারকে “উৎখাত” করেছে তারা।
আলাদা আরেকটি সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইতজিক কোহেন বলেন, আইডিএফ বাহিনী গাজা উপত্যকার “গভীরে” রয়েছে-“গাজা শহরের প্রবেশমুখে”, তিনি বলেন। বিবিসি নিউজ বাংলা