রোবট বন্ধু হতে পারে, বিনোদন দিতে পারে, কিংবা কিছু কাজেও সহায়ক হতে পারে। আরেক ধরনের রোবটও আছে, যাকে বলে 'কিলার রোবট'। মুভি-সিনেমাতেই এতদিন যার ব্যবহার দেখা গেছে। এগুলো ধ্বংস করে, আবেগহীনভাবে হত্যা করে।
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর অনেক কিছুই এখন বাস্তবতা। যুদ্ধাস্ত্রের ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য। ইউক্রেন যুদ্ধে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অস্ত্রের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। ড্রোন আগেই আকাশ দখল করেছে। এখন সম্মুখ সমরে ব্যবহার হচ্ছে চালকবিহীন সাজোঁয়া যান। বাড়ছে ‘ফাইটিং রোবটের’ ব্যবহারও।
২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রায় সামরিক অভিযান শুরু হয়। কয়েক সপ্তাহ পর থেকেই শুরু হয় অত্যাধুনিক ড্রোনের ব্যবহার যা যুদ্ধকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।
শত্রুকে ধরাশায়ী করতে উভয় পক্ষই কামিকাজি নামে এক ধরনের কমদামি ড্রোন ব্যবহার করছে। এছাড়া ফ্রন্টলাইন থেকে আরও ভেতরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য ব্যবহার হচ্ছে দূরপাল্লার চালকবিহীন ছোট বিমান।
কৃষ্ণসাগরে এক বিশেষ ধরনের ড্রোন ব্যবহার শুরু করে ইউক্রেনীয় নৌবাহিনী। যা রাশিয়ার নৌবহরের বড় ধরনের ক্ষতিসাধন করতে সমর্থ হয়। ড্রোনের পাশাপাশি এখন যুদ্ধের ময়দানে আনা হচ্ছে সামরিক রোবট। যদিও এখন পর্যন্ত এগুলোর ব্যবহার খুব কমই দেখা গেছে।
মিলিটারি রোবট বা সামরিক রোবটগুলো রিমোট কন্ট্রোলে পরিচালনা করা হয়। এগুলো আনক্রুড গ্রাউন্ড ভেহিকল বা ইউজিভিএস নামেও পরিচিত। সামরিক রোবটের প্রাচীনতম মডেলটি হলো সোভিয়েত টেলিট্যাঙ্ক, যা ১৯৩৯ সালে ফিনল্যান্ড আক্রমণের সময় ব্যবহার করা হয়েছিল।
রুশ প্রযুক্তিবিদরা দুর্গ আক্রমণ করার জন্য সেকেলে হালকা ট্যাঙ্কগুলোর সাথে রেডিও-নিয়ন্ত্রিত স্টিয়ারিং ও ফ্ল্যামেথ্রোয়ার লাগিয়ে এটি তৈরি করেছিলেন। ট্যাঙ্কগুলোতে কোনো ক্যামেরা ছিল না।
তাই এর অপারেটর বা পরিচালককে কাছাকাছি অবস্থান করতে হতো। প্রযুক্তিটি শেষ পর্যন্ত অনির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠে এবং এর পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাতিল করা হয়।
কিন্তু রুশ সশস্ত্র বাহিনী ব্যাপারটা থেকে সরে আসেনি। গত শতকের ৬০-এর দশকে আরও উন্নত ইউজিভিএস তৈরি করে। ১৯৭০ সাল থেকে বোমা নিষ্ক্রিয় করার জন্য এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে রিমোট কন্ট্রোলচালিত ‘ফাইটিং মেশিন’ বা যুদ্ধযন্ত্র তৈরি করা অবশ্য কঠিন প্রমাণিত হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হলো নেভিগেশন তথা পরিচালনা।
এখনকার ড্রোনগুলো নিজে নিজেই চলতে পারে। কিন্তু যুদ্ধ ময়দানে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র পরিচালনা এখনও বেশ কঠিন। এমনকি ভালভাবে চিহ্নিত রাস্তা হলেও। যে মেশিনগুলো তৈরি হয়েছে সেগুলো প্রায়ই গর্তের মতো সাধারণ বাধাগুলো নির্ণয় করতে হিমশিম খায়।
এর মানে হলো যে, যদি ইউজিভিএস বা আনক্রুড গ্রাউন্ড যানটি অপারেটরের সাথে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে তবে তারা হারিয়ে যেতে পারে বা কোথাও আটকে যেতে পারে। ফলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
২০১৭ সালে রাশিয়া সিরিয়ায় ইউরান-৯ নামে এক ধরনের ছোট রোবোটিক ট্যাঙ্ক মোতায়েন করেছিল। কিন্তু এটা যোগাযোগের সমস্যায় পড়ে এবং কিছুদিন পর এটা আর দেখা যায়নি।
বেশিরভাগ ইউজিভিএস তৈরি ব্যয়বহুল। সংযুক্ত আরব আমিরাত সম্প্রতি এস্তোনিয়ার কোম্পানি মিলরেম রোবোটিক্স থেকে ৬০টি রোবট কিনেছে। জানা গেছে, এগুলোর দাম পড়েছে ১০ কোটি ৭০ লাখ ডলারেরও বেশি।
রাশিয়ার সামরিক বাহিনী সম্প্রতি বেশ কিছু উন্নত রোবট তৈরি করেছে। তাদের তৈরি সবচেয়ে উন্নত রোবটটির নাম হলো মার্কার। এটা এসইউভি গাড়ির আকারের সমান একটি যান যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করার জন্য অত্যাধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে। তবে এটা বড় সংখ্যায় তৈরি করা খুব ব্যয়বহুল হবে।
ইউক্রেনে উভয় পক্ষই সাধারণ মডেলের রোবট ব্যবহার করছে। এগুলো প্রধানত রসদ সরবরাহ, পরিবহন, মাইন স্থাপন ও মাইন অপসারণের মতো কাজে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
কিন্তু বাস্তবতা বদলাতে শুরু করেছে। চলতি বছরের মার্চ মাসে রাশিয়া ইউক্রেনের একটি প্রতিরক্ষা অবস্থানে আক্রমণ চালায়। সেই হামলায় স্বয়ংক্রিয় গ্রেনেড-লঞ্চারে সজ্জিত ছোট রোবট ব্যবহার করা হয়।
ইউক্রেনও পিছিয়ে নেই। সম্প্রতি কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে; যাতে দেখা যাচ্ছে যে, ইউক্রেনীয় ইউজিভিএস বা সামরিক রোবট রুশ-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে সেতু ও সামরিক অবস্থান লক্ষ্য করে আক্রমণ করছে। সময় সংবাদ।