News update
  • Guterres Urges Leaders to Act as UNGA Week Begins     |     
  • BNP to go door to door for hearts and votes     |     
  • Chittagong port tariffs increased up to 50 per cent     |     
  • Rising Heat Cost Bangladesh $1.8 Billion in 2024     |     
  • Stocks extend gains; turnover drops in Dhaka, rises in Ctg     |     

ইসরায়েলি হামলায় বিপর্যস্ত লেবাননের টায়ার শহরের পরিস্থিতি এখন যেমন

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক সংঘাত 2024-10-06, 12:02pm

retretertert-a2913fce58b6c06cbb662597f39175be1728194567.jpg




দক্ষিণ লেবাননের শহর টায়ারের নাম অল্প সময়েই এখন আলোচনায় উঠে এসেছে। রাস্তায় লম্বা সময় ধরে দাঁড়িয়ে কথা বলাটাও বুদ্ধিমানের কাজ নয় এবং খুব কম সংখ্যক লোকই কথাবার্তা বলছেন সেখানে।

ইসরায়েলি বোমারু বিমানের গর্জন কিংবা হেজবুল্লাহ ছোঁড়া রকেটের শব্দই সেখানকার মানুষজনের কথাবার্তা সংক্ষিপ্ত হওয়ার কারণ। সাথে ইসরায়েলি ড্রোনের গুঞ্জন আছে মাথার ওপর।

আপনি দ্রুত ড্রাইভ করবেন কিন্তু গাড়ির গতি বাড়াবেন না, কারণ জানেন আকাশেও চোখ আছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপনিই খালি রাস্তায় একমাত্র গাড়িতে আছেন - যা আপনাকে যেকোন মুহুর্তে হামলার লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে দিতে পারে।

শরীরে বর্ম বা বডি আর্মারের মতোই এ জ্ঞানটুকুও সবসময় আমাদের সাথে থাকতে হবে। কিন্তু বেসামরিক নাগরিকদের নিজেকে রক্ষার মতো কোন বর্ম যেন আর নেই সাথে।

কারণ লেবাননের বহু মানুষের এখন মাথার ওপর ছাদ নেই। গত কিছুদিনে দশ লাখেরও বেশি মানুষ পালাতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি।

যুদ্ধ এখানে শুন্যতা তৈরি করেছে।

রোমান সাম্রাজ্যের স্মৃতিচিহ্ন এবং সোনালী বালুর সৈকতের জন্য গর্বিত এবং পরিচিত এই প্রাচীন শহরটির জীবন এখন হতাশাময়।

শূন্য পথঘাট আর নিস্তব্ধতা

লেবাননের দক্ষিণের শহর টায়ারের রাস্তাঘাট খালি এবং দোকানপাট বন্ধ।

সমুদ্র সৈকত নির্জন। বিমান হামলায় কাঁপছে ঘরের জানালা। স্থানীয় সিভিল ডিফেন্স হেডকোয়ার্টার পরিত্যক্ত পড়ে আছে - উদ্ধারকারী দলগুলোকে সরে যেতে হয়েছে ইসরায়েল থেকে টেলিফোনে সতর্কবার্তা পেয়ে।

ইসরায়েলি হামলার শব্দ বাড়ছে ও ক্রমেই আমাদের হোটেলের কাছে এগিয়ে আসছে। আমাদের উল্টো দিকে পাহাড়ে ইসরায়েলের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক বোমা হামলা হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে।

আর আছে হেজবুল্লাহ ফ্যাক্টর। লেবাননের মাটিতে ইসরায়েলি সৈন্যদের আগ্রাসন তারা ঠেকাতে চাইছে।

টায়ার শহরে তারা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা আমাদের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে। যদিও আমরা ঠিক কী লিখছি বা প্রচার করছি তাতে তাদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।

হাসপাতালে চিকিৎসকরা ক্লান্ত কিন্তু কাজে মগ্ন। চলাফেরা করা বিপজ্জনক বিধায় অনেকেই বাড়ি যেতে পারছেন না।

এর পরিবর্তে তারা ধৈর্য ধরে নয় বছর বয়সী মারিয়ামের মতো রোগীদের যত্ন নিচ্ছেন, যার আহত পা লম্বা করে বালিশের ওপর রাখা আর হাতে ভারী ব্যান্ডেজ। তিনি শুয়ে ছিলেন হিরাম হাসপাতালের একটি শয্যায়।

“নয় সদস্যের পরিবারের সাথে সে এখানে এসেছে,” বলছিলেন হাসপাতালের প্রধান কর্মকর্তা ডাঃ সালমান আইদিবি।

“তাদের পাঁচজনকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। মারিয়ামের অপারেশন হয়েছে এবং সে আগের চেয়ে ভালো। আশা করছি আজই তাকে বাড়ি পাঠাতে পারবো।"

"বেশীরভাগ আহতকে এখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে এবং অন্য সেন্টারে পাঠানোর আগে তাদের অবস্থা স্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হয়। কারণ এটিই রণাঙ্গনে থাকা একমাত্র হাসপাতাল,” বলছিলেন তিনি।

ডাঃ সালমান আইদিবি জানান, হাসপাতালটিতে প্রতিদিন ৩০-৩৫ জন আহত নারী ও শিশু আসছেন এবং এটি কর্মীদের ওপর চাপ তৈরি করছে।

“কাজের সময় আমাদের ইতিবাচক থাকা উচিত। যখন কাজ বন্ধ করি বা চিন্তা করি তখন আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি।”

এই দায়িত্বশীলতার পেছনে কী কাজ করছে জানতে চাইলে তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।

বলেন- "আমরা একটি যুদ্ধের মধ্যে আছি।"

“লেবাননের ওপর একটি ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ। আমরা শান্তি আশা করি, কিন্তু সম্ভাব্য সব পরিণতির জন্যও আমরা প্রস্তুত।”

হাসান মান্নাও সবচেয়ে খারাপ কিছুর জন্য প্রস্তুত। যুদ্ধের মধ্যেও তিনি টায়ারেই অবস্থান করছেন।

তিনি তার ছোট কফি শপটি খোলা রেখেছেন। স্থানীয়রা এখনো সেখানে আসছেন এবং ছোট প্লাস্টিক কাপে মিষ্টি কফি পাচ্ছেন।

“আমি আমার দেশ ছাড়ছি না। আমার ঘর ছাড়ছি না। আমি আমার সন্তানদের সঙ্গে এখানেই আছি। আমি তাদের (ইসরায়েলি) ভয় পাই না। আমাকে আমার ঘরেই মরতে দিন,” বলছিলেন তিনি।

গত সপ্তাহে ইসরায়েলি হামলায় তার পাঁচ প্রতিবেশী মারা গেছেন।

হাসান সেটি নিজে দেখেছেন এবং দুটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র আসলে নিজেও বাতাসে উড়ে গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত আহত বাহু নিয়ে হেঁটে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি।

সেখানে কি কোন হেজবুল্লাহ লক্ষ্যবস্তু ছিলো?

আমরা জানি না। হাসান বলছেন, নিহতরা সবাই বেসামরিক নাগরিক এবং একই পরিবারের সদস্য, যার মধ্যে দুজন নারী ও একটি শিশু ছিলো।

ইসরায়েল বলেছে, তারা হেজবুল্লাহ যোদ্ধা ও স্থাপনাকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে, লেবাননের মানুষকে লক্ষ্য করে নয়। কিন্তু এখানে অনেকেই বলছেন ভিন্ন কথা।

ইসরায়েল বলেছে, তারা বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি সর্বনিম্নে রাখতে চেষ্টা করছে এবং তারা বেসামরিকদের লোকজনের মধ্যে স্থাপনা বানিয়ে সেখানে লুকিয়ে থাকার অভিযোগ এনেছে হেজবুল্লাহর বিরুদ্ধে।

“এখানে কিছু নেই (অস্ত্র),” হাসান বলছিলেন।

“তেমন কিছু থাকলে আমরাই এলাকা ছেড়ে যেতাম। বোমা বর্ষণের মতো কিছু এখানে নেই।”

বোমা হামলার পর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে লোকজনকে খুঁজতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নিতে হয়।

তিনি যখন তার প্রতিবেশীদের কথা বলছিলেন, তখন গলা ভেঙ্গে আসছিল ক্ষোভ আর হতাশায় - চোখ ভরে যায় অশ্রুতে।

“এটা অন্যায়। সম্পূর্ণ অন্যায়। আমরা এসব মানুষকে চিনি। তারা এখানে জন্মেছেন। আমিও যদি তাদের সঙ্গে মরতে পারতাম”।

দশদিন আগে সীমান্তের কাছে একটি খ্রিশ্চিয়ান এলাকার এক নারী বলছিলো তারা জানেন না যে কখন ইসরায়েল হামলা শুরু করবে। “এটা সবসময় উত্তেজনাপূর্ণ। অনেক রাত আমরা ঘুমাতে পারছি না”।

তার সাথে কথা বলার সময়েই ইসরায়েলি বোমা হামলার শব্দ শোনা যায় এবং কাছেই পাহাড়ি এলাকায় ধোঁয়া দেখা যাচ্ছিল।

হেজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলায় গত বছর তাদের গ্রাম ধ্বংস হয়ে যায়।

তার মতে ২০০৬ সালের যুদ্ধের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি ক্ষয়ক্ষতি এবার ইতোমধ্যেই হয়ে গেছে।

“কেউ যদি পরে এখানে ফিরে আসতে চায়, তার জন্য কোন ঘর আর অবশিষ্ট থাকবে না।”

যুদ্ধের আগে হেজবুল্লাহ সবসময় বলেছে তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে, বলছিলেন ওই নারী।

“কিন্তু এখন ইসরায়েলের হামলার ভয়াবহতায় তারাও স্তম্ভিত।”

এখন ভবিষ্যতে কী হবে সেই ধারণা করার মতোও কেউ নেই।

“আমরা একটি টানেলে ঢুকে পড়েছি এবং এখন পর্যন্ত কোন আলো দেখতে পাচ্ছি না।”

তেল আবিব থেকে তেহরান বা ওয়াশিংটন- কেউ নিশ্চিত নন এরপর কী হবে এবং এরপর মধ্যপ্রাচ্যকে কেমন দেখাবে।